১৬৫৭ দিন পর মোহনবাগানকে হারালো ইস্টবেঙ্গল
ধারেভারে এগিয়ে ছিল মোহনবাগান। কিন্তু শনিবারের ডার্বিতে অনেক ভালো খেলে জিতলো ইস্টবেঙ্গল।
সকলে এগিয়ে রেখেছিলেন মোহনবাগানকে
খেলার আগে মোহনবাগানের ফুটবল সচিব দেবাশিস দত্ত দাবি করেছিলেন, তাদের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। বিশেষজ্ঞরা সকলেই এগিয়ে রেখেছিলেন মোহনবাগানকে। ইস্টবেঙ্গলের থেকে দুই-তিন গুণ টাকা দিয়ে তারা টিম করেছে। দলে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার। ইস্টবেঙ্গল কোচ কুয়াদ্রাত শুধু বলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গল লড়াই করবে। ম্যাচের পর মোহনবাগানের সচিব স্বীকার করলেন, ইস্টবেঙ্গল ভালো খেলে জিতেছে।
মাঠে অন্য ছবি
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ডুরান্ড কাপের ম্যাচে দেখা গেল অন্য ছবি। মোহনবাগানের প্লেয়াররা আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলেন, কিন্তু তারা তাদের সেরা খেলাটা উপহার দিতে পারেননি।। উল্টে ইস্টবেঙ্গল প্লেয়াররা ভারমুক্ত হয়ে নেমেছিলেন। তাদের ঐতিহ্য মেনে এবং কুয়াদ্রাতের কল্যাণে ইস্টবেঙ্গল প্লেয়াররা নাছোড় লড়াই করেছেন।
বিশ্বমানের গোল
ম্যাচের ৬০ মিনিটে এলো ইস্টবেঙ্গলের এবং ম্যাচের একমাত্র গোল। করলেন ওড়িশা এফসি থেকে এবারই তিন বছরের চুক্তিতে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেয়া নন্দকুমার। স্পেনের ফুটবলার সাউল ক্রেসপো পাস দেন নন্দকুমারকে। প্রচণ্ড গতিতে তিনি বল নিয়ে এগিয়ে যান। পায়ের কাজে পরাস্ত করেন মোহনবাগানের ডিফেন্ডারকে। তারপর বাঁ পায়ের বাঁক খাওয়ানো শটে বিশ্বমানের গোল করেন।
বিশ্বকাপার ব্যর্থ
মোহনবাগান এবার অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে দলে এনেছে গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা জেসন কামিন্সকে। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে কামিন্সকে মাঠে নামান মোহনবাদান কোচ জুয়ান ফেরান্দো। কিন্তু কামিন্স সেভাবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেননি। অন্তত এদিন তার খেলা দেখে হতাশ মোহনবাদান সমর্থকরা।
ব্যর্থ সাদিকুও
আলবেনিয়া জাতীয় দলের প্লেয়ার সাদিকুকেও প্রচুর অর্থ দিয়ে টিমে নিয়েছেন মোহনবাগান কর্তারা। কিন্তু তিনিও ডার্বিতে ব্যর্থ।
নায়ক নন্দকুমার
বিখ্যাত ফুটবলাররা থাকলেও ডার্বির নায়ক ছিলেন নন্দকুমার। ডানদিকের উইং ধরে দ্রুতগতিতে ছুটতে পারেন। ভালো পাস বাড়াতে পারেন। দুই পায়ে জোরালো শট নেয়ার ক্ষমতা আছে। তাকে সামলাতে নাভিশ্বাস উঠেছে মোহনবাগান ডিফেল্সের। একমাত্র গোল করে এদিনের নায়ক তিনিই। ছবি্তে ১১ নম্বর জার্সি গায়ে প্লেয়ারই হলেন নন্দকুমার।
মাঝমাঠের দখল
ভারতীয় জাতীয় দলের মাঝমাঠে যারা খেলেন, তারা প্রায় সকলেই এবার মোহনবাগানে। তা সত্ত্বেও সাহাল আব্দুস সামাদ, অনিরুদ্ধ থাপা, লিস্টন কোলাসোদের মাঝমাঠের দখল নিতে দেননি ত্রেসপো, সিভেরিও, খাবরা, মহেশরা। এর মধ্যে মহেশ তো সমানে বামদিক থেকে দ্রুত আক্রমণে উঠছিলেন। মাঝমাঠ অকেজো হয়ে যাওয়ায় মোহনবাগানের ফরোয়ার্ডরা বল পাননি।
সপ্তাহ দুয়েকের অনুশীলন
মাত্র দুই সপ্তাহের মতো সময় পেয়েছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। প্রথমে সব ফুটবলারকে পাননি। ইস্চবেঙ্গলের সেরা ফরোয়ার্ড ব্লাজিলের ক্লেটন সিলভা তো শনিবারই কলকাতায় পা দিয়েছেন। ভিসা সমস্যার জন্য আগে আসতে পারেননি। কোচ কুয়াদ্রাত ফুটবলারদের শারীরিকভাবে ম্যাচ ফিট করার দিকে নজর দিয়েছিলেন। তার ফলও পেয়েছেন।
বলিউডের নায়ক
ডার্বির দিন মাঠে ছিলেন বলিউডের নায়ক ভিকি কৌশল। খেলা শুরুর আগে দুই দলের প্লেয়ারদের সঙ্গে হাত মেলান। বল নিয়ে ছবি তোলার জন্য চিত্রসাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে পোজও দেন।
মাঠে সমর্থকরা
খেলা শেষ হওয়ার পর বেশ কিছু সমর্থক ঢুকে পড়েন মাঠে। তারা ইস্টবেঙ্গলের প্লেয়ারদের অভিনন্দন জানান। দলের পতাকা নিয়ে ঘুরতে থাকেন। সাড়ে চার বছর পর ডার্বি জেতার আনন্দে তারা বিহ্বল ছিলেন।
টিকিট নিয়ে উন্মাদনা
বহুদিন পর কলকাতা ডার্বি নিয়ে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। তারা দীর্ঘ লাইন দিয়ে টিকিট কেটেছেন। সমর্থকদের টিকিটের জন্য বিশাল লাইন ও ঘোড়সওয়ার পুলিশ-- কলকাতা ময়দানের এই চেনা ছবি আবার ফিরে এসেছিল।
দুই দিন চেষ্টার পর
মোহনবাগানের এই নারী সমর্থক দুইদিন ধরে চেষ্টার পর টিকিট হাতে পেয়েছেন। তবে তার এই হাসি, দল হারার পর ম্লান হয়েছে।
পুলিশের কথা মেনে
পুলিশ জানিয়েছিল, মাঠে যেন ৬০ হাজার পাঁচশর বেশি দর্শক না থাকে। তাদের কথা মেনেই ডুরান্ডের কর্মকর্তারা টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করেছিলেন। তাই মাঠের কিছু অংশ খালি ছিল। কিন্তু তারপরেও দুই দলের সমর্থকরা অনেক কষ্ট করে টিকিট জোগাড় করে মাঠে এসেছিলেন।