সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: অপু থেকে ফেলুদায় যার অনায়াস যাতায়াত
২০২০-তে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিনে ডিডাব্লিউ-র শ্রদ্ধার্ঘ।
প্রয়াণের দুই বছর
২০২০ সালের ১ অক্টোবর তার জ্বর হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, করোনা। ১৫ নভেম্বর, ২০২০-তে ভারতীয় সময় দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তার প্রয়াণের দুই বছর পূর্ণ হলো।
শেষ সময় পর্যন্ত কাজ
দু-বছর অতিক্রান্ত, বাংলা সিনেমা হারিয়েছে তার ফেলুদা, অপু, ক্ষিদ্দা, পাষণ্ড পণ্ডিতকে। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি কাজ করেছেন। তার শেষের দিকের ছবি হলো 'বেলাশুরু'। ‘বেলাশুরু’ মুক্তি পায় তার মৃত্যুর পরে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত এই ছবির মূল চরিত্র। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগে দুজনেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
ছকু খানসামা লেনে জন্ম
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। তবে ১৯৩৫ সালে সৌমিত্রের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের মির্জাপুর স্ট্রিটে ছক্কু খানসামা লেনের কাছে।
কৃষ্ণনগরে স্কুলে পড়া শুরু
পরবর্তীকালে তারা কৃষ্ণনগরে থাকতে শুরু করেন। সেখানেই সেন্ট জনস্স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা। বাবার বদলির চাকরিসূত্রে হাওড়ায় চলে আসতে হয় তারপর। তখন থেকে হাওড়া জেলা স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে কিশোর সৌমিত্র।
সিটি কলেজে পড়া
স্কুলের পড়া শেষ করে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে প্রথমে আইএসসি এবং পরে বিএ অনার্স (বাংলা) পাস করার পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অফ আর্টস-এ দু-বছর পড়াশোনা করেন। কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে পড়ার সময় নাট্যব্যক্তিত্ব শিশির কুমার ভাদুড়ীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তার অভিনয় সৌমিত্রকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।
আকাশবাণীর ঘোষক
সৌমিত্রের কর্মজীবন শুরু আকাশবাণীর ঘোষক হিসেবে। বেতারে ঘোষকের কাজের পাশাপাশি থিয়েটারে অভিনয় চালিয়ে যেতে থাকেন।
সিনেমায় পথচলা
১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অপু ট্রিলজির তৃতীয় ছবি ‘অপুর সংসার’এ অপুর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান সৌমিত্র। এটিই সৌমিত্রের প্রথম ছবি। ওপরের ছবিটি এই বছর কলকাতার একটি দুর্গাপূজার। যে পুজোপ্যান্ডেলে এই বছরের থিম ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। থিমের নাম ছিল ‘পুলুর পাঁচালি’। উল্লেখ্য, ‘পুলু’ সৌমিত্রের ডাকনাম।
সত্যজিতের হাত ধরে
১৯৫৯-এ ‘অপুর সংসার’ দিয়ে শুরু, তারপর সত্যজিতের পরিচালনায় ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। রায় নির্মিত বিভিন্ন ছবিতে নানান সময় বিভিন্ন চরিত্রে আবির্ভূত হয়েছেন। ফেলুদার চরিত্র এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি, তাতে মনে হয় যেন তাকে ভেবেই ফেলুদার সৃষ্টি করেছিলেন সত্যজিৎ।
ফেলুদার মন জয়
পরবর্তীকালে আরও অনেকে ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করলেও বাঙালির মনে সৌমিত্র ফেলুদা হিসেবে এক অন্য স্থান দখল করে রেখেছেন। কলকাতায় ‘সোনার কেল্লা’ উদ্যানে ফেলুদার মূর্তি হিসেবে সৌমিত্রের প্রতিকৃতিই রয়েছে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পার্ক
রাজারহাট নিউটাউন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউটাউনের প্যাঁচার মোড়ের কাছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে একটি পার্ক তৈরি করা হবে। সেখানে সৌমিত্র অভিনীত নানান চরিত্রের মূর্তি রাখা থাকবে।
লেখক সৌমিত্র
লিখেছেন বেশ কিছু বই। কবিতা, গদ্যের পাশাপাশি তার লেখা বেশকিছু নাটকের বইও রয়েছে। দীর্ঘদিন তিনি এক্ষণ পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছেন। অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌমিত্র ছিলেন এক উঁচুমানের আবৃত্তিকার। তার কণ্ঠে আবৃত্তি শোনা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। ২০০৪ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হন সৌমিত্র। এছাড়াও সারাজীবনে প্রচুর পুরষ্কার ও সম্মান পেয়েছেন তিনি।
১৫ নভেম্বর ২০২০
২০২০ সালের করোনাকালে মৃত্যু হয় তার। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট দিয়ে ক্যাওড়াতলায় বিদায় জানানো হয় তাকে।