সুড়ঙ্গ থেকে ছেলে উদ্ধার পাওয়ার আগে কেমন কেটেছে দুই বাঙালি পরিবারের
জয়দেব ও শৌভিক। দুজনেই আটকা পড়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে। কেমনভাবে দিন কেটেছে তার পরিবারের? দেখুন ছবিঘরে..
জয়দেবের বাবা দোকান বন্ধ করে দিলেন
জয়দেবের বাবা তাপস প্রামাণিক। একটা চায়ের দোকান চালান হুগলির পুরশুড়ার নিমদিঙ্গিতে। গত ১২ নভেম্বর কালীপুজোর দিন খবর পান ছেলে আটকে পড়েছে উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে। তারপর দোকান বন্ধ করে দেন। এর পরের ১৭ দিন ধরে শুধু চিন্তা, উদ্বেগ, আতঙ্ক ও একটুখানি আশা সম্বল করে বেঁচে থাকা। সে যে কী দিন কেটেছে, এখনো ভাবতে গেলেই শিউরে উঠছেন তিনি। শেষপর্যন্ত মুক্তির খবর পেয়ে অবশেষে মুখে হাসি ফুটেছে।
খবর পেয়েই মা শয্যাশায়ী
জয়দেবের সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার খবর পেয়েই মা তপতী প্রামাণিক পুরো শয্যাশায়ী হয়ে যান। দুই বেলা বাড়িতে ডাক্তার ডাকতে হয়। ছেলের জন্য মায়ের চিন্তা ও উদ্বেগ তখন মাত্রাছাড়া। প্রথমে তো ছেলের সঙ্গে যোগাযোগও হয়নি। দিন কয়েক পরে জয়দেব একটা ভয়েস মেসেজ পাঠায়। জানায়, ভালো আছে। মা, বাবা যেন ভালো করে খাওয়াদাওয়া করে। তারপর কিছুটা স্বস্তি পান তপতী।
জয়দেবের সঙ্গে ফোনে কথা
সুড়ঙ্গ থেকে বেরোবার পর মায়ের সঙ্গে কথা বলছেন জয়দেব। তিনি প্রথমেই মাকে জানিয়েছেন, পুরোপুরি সুস্থ আছে। খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসার চেষ্টা করছে। এই খবর পেয়েই বাবা মাংস রান্না করতে শুরু করলেন। এতদিনের উদ্বেগ কাটলো।
বাড়ি ফেরার আপেক্ষায় কাকিমা
কাকিমা পাপিয়া অধিকারী শুধু দিন গুনছেন, কবে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবে। পাপিয়া জানিয়েছেন, তাপসের বয়স মত্র ১৯ বছর। তাদের সবার আদরের ছেলে। তার জন্য চিন্তার অন্ত ছিল না। মন খারাপ, উদ্বেগ, আতঙ্ক, আশা-নিরাশার দোলায় থাকার পর অবশেষে সুখবর এসেছে। তাদের মুখে হাসি ফিরে এসেছে।
সেলফি পাঠায় জয়দেব
সুড়ঙ্গ থেকে বেরোবার পরই সেলফি পাঠায় জয়দেব। ছেলের সেই হাসিমুখের সুস্থ চেহারা দেখে বাড়ির সকলের চিন্তা পুরোপুরি দূর হয়।
জয়দেবের অর্ধসমাপ্ত বাড়ি
জয়দেবের পরিবার হলো নিম্নমধ্যবিত্ত। বাড়ির গাঁথনি হলেও প্লাস্টার পুরো হয়নি। বিশেষ করে বাইরের দিকে। তবে যে কোম্পানিতে জয়দেব কাজ করে, তারা দুই লাখ টাকা দেবে বলেছে। উত্তরাখণ্ড সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এক লাখ টাকা করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সবমিলিয়ে চার লাখ টাকা পাবেন তারা। তারপর বাড়ির কাজ শেষ হতে পারে।
শুধু কেঁদেছেন শৌভিকের মা
কালীপুজোর রাতে মোমবাতি লাগানো সবে শেষ হয়েছে। তখনই খবর পান, ছেলে শৌবিক পাখিরা উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছেন। তারপর থেকে মা লক্ষ্মী পাখিরা শুধু কেঁদে গেছেন। যতক্ষণ না ছেলের কছ থেকে অডিও মেসেজ এসেছে, সে সুস্থ আছে। ১৭ দিন লক্ষ্মীর কাছে দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে। টিভির সামনে বসে থাকতেন। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। যদি ছেলের খবর আসে। সেই ,শুভক্ষণ এলো ১৭ দিন পরে। এখন ছেলের মুখ দেখার প্রতীক্ষা করছেন।
বাবার আক্ষেপ, যদি রাজ্যে চাকরি থাকত
শৌভিকের বাবা অসিত পাখিরা এখনো আক্ষেপ করে যাচ্ছেন, যদি পশ্চিমবঙ্গে চাকরির সুযোগ থাকত, তাহলে উত্তরাখণ্ডের মতো দূর পাহাড়ি রাজ্যে এই বিপজ্জনক কাজে তিনি কিছুতেই পাঠাতেন না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তো চাকরির বাজার খুবই খারাপ। তাই ছেলেকে ছাড়তে হয়েছে দূর দেশে। তবে আশার কথা একটাই, সকলের প্রচেষ্টায় মৃত্যুর মুখ থেকে ছেলে ফিরে এসেছে।
প্রতিবেশী জানালেন, বহুদিন বাড়িতে বসে ছিল শৌভিক
প্রতিবেশী রবীন্দ্রকুমার মান্না ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''শৌভিক খুব শান্ত ছেলে। ইলেকট্রিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিয়েও বেশ কিছুদিন বাড়িতে বসেছিল। ও ইলেকট্রিশিয়ান হিসাবে সুড়ঙ্গে কাজ করছিল। যখন সেই সুড়ঙ্গের একটা অংশ ধসে গেল, তখন মনে হলো, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। এখন একটা কথাই বলতে পারি, সব ভালো যার শেষ ভালো।''
শৌভিকের বাড়ি
শৌভিকও নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে। এটা তার বাড়ির ছবি। একঝলক দেখলেই বোঝা যায়, সাধারণ পরিবারের সন্তান। কিন্তু সে ১৭ দিন ধরে অসাধারণ মানসিক শক্তি দেখিয়েছে বিপদে ভেঙে পড়েনি। নিজেকে সুস্থ রেখেছে। এই মনোভাবই তাকে অনেক দূর এগিয়ে, নিয়ে যাবে।