সিপিএমের সমাবেশে ভরা ব্রিগেড, ভোটে কতটা প্রভাব ফেলবে?
কলকাতার ব্রিডেগ প্যারেড গ্রাউন্ডের রং রোববার আবার লাল হলো। সিপিএমের সভায় লক্ষাধিক মানুষ যোগ দিলেন।
ভরাভর্তি ব্রিগেড
সিপিএমের কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুর ও বস্তি সংগঠন ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দেয়। তাতে যোগ দিয়ে ব্রিগেড ভরিয়ে দিয়েছিলেন সমর্থকরা। ভরা ব্রিগেডে সর্বত্র ছিল লাল পতাকা। কাজের অধিকার ও মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দেয়া হয় ব্রিগেড থেকে। প্রবল গরমে বেলা তিনটের সময় সমর্থক ও কর্মীরা ব্রিগেড ভরিয়ে দেয়ায় উচ্ছ্বসিত সিপিএম নেতৃত্ব। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সমাবেশ ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
কী বললেন মহম্মদ সেলিম ?
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ''যারা দাবি করেছিলেন সিপিএম শেষ, তাদের বলছি, আমরা আছি। আধপেটা খেয়েও আমার কর্মীরা লাল ঝান্ডা ছাড়েনি।'' তিনি বলেন, ''হিন্দু, মুসলিমদের লড়াই করে কী হবে? লড়তে হবে কাজের দাবিতে। ২০২৬-এর জন্য এই লড়াই এখান থেকে শুরু হয়ে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ুক। গরিবের লড়াই গরিবকে লড়তে হবে।''
ব্রিগেডের চমক বন্যা টুডু
রোববার ব্রিগেডের সভার চমক ছিলেন হুগলির আদিবাসী নেত্রী বন্যা টুডু। তিনি শুরুতেই জানতে চান, ''আপনারা ভালো আছেন তো?'' জবাব আসে, 'হ্যাঁ'। বন্যার প্রশ্ন, ''কী করে ভালো আছেন? রাজ্যে চোর ও কেন্দ্রে ডাকাতদের শাসন। এখানে ভালো থাকা যায় না।'' তিনি বলেন, ''ক্ষেতমজুর, খেটে খাওয়া মানুষদের লড়াইয়ের কথা শহরের মানুষ জানে না। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। লড়াইয়ের পথ থেকে সরব না।''
ভয় ভাঙার ডাক
মহম্মদ সেলিম বলেন, ''ভয় ভেঙে লড়াই করতে হবে। এটা প্রমাণ হয়ে গেছে, ওরা লাল ঝান্ডাকে কিছু করতে পারবে না।'' বন্যা টুডুর বক্তব্য, ''আমরা কেন ভয়. পাব? আমরা ২০২৬-এ সব উইকেট ফেলে দেব। সব বুথে নজর রাখব।'' সেলিম বলেছেন, ''শুধু এখানে শক্তি দেখালে হবে না। গ্রামে গ্রামে লড়াই করতে হবে।''
মুর্শিদাবাদ প্রসঙ্গ
ব্রিগেডের সভায় মুর্শিদাবাদের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ''তৃণমূল ও বিজপি হাতে হাত মিলিয়ে এই সহিংসতা করেছে। যারা ঘৃণা ছড়ানোর ভাষণ দিলেন তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিলেন না মুখ্যমন্ত্রী? আমরা এবার সব থানায় অভিযোগ করব।''
লালে লাল দুখিরাম
সারা গায়ে লাল রং মেখেছেন। বুকে সাদায় আঁকা কাস্তে হাতুড়ি। পেশে লেখা 'সিটু', যা সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের নাম। হাতে সিটুর পতাকা। এভাবেই ব্রিগেডে এসেছিলেন মধ্যমগ্রামের দুখিরাম সরকার। বললেন, ''আবেগ দিয়ে দল করি।'' এই সাজ হলো সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ।
বুদ্ধদেব-রতন টাটার কাটআউট
এক সমর্থকের হাতের পোস্টারে ছিল প্রয়াত সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও প্রয়াত শিল্পপতি রতন টাটার থার্মোকলের কাটআউট। নিচে লেখা 'যুবকদের স্বপ্নভঙ্গ'। শ্রমিক, কৃষকদের সভায় শিল্পপতির এই ছবি দিয়ে সিঙ্গুরের কারখানা থেকে টাটাদের চলে যেতে বাধ্য হওয়া এবং তারফলে শিল্পায়নে স্বপ্নভঙ্গের কথা বলা হয়েছে।
ব্রিগেডের উন্মাদনা কি ভোট আনতে পারবে?
২০২১ সালের ভোটের আগেও ব্রিগেড ভরিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু তারপর একটি আসনেও জিততে পারেনি। ২০২৬-এর আগেও ব্রিগেড ভর্তি হলো। তার রাজনৈতিক লাভ কি ঘরে তুলতে পারবে এই বাম দল? সিপিএম নেতারাও মানছেন, রুটি-রুজির লড়াই ও ভোট আলাদা। কিন্তু তারা আশাবাদী, ভয়. ভেঙে দলের কর্মীরা লড়তে পারবেন। তারা এবার জয়ী হবেন।
পাশে অধীর, নওসাদ
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী ও আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি সিপিএমের এই ব্রিগেড সমাবেশকে সমর্থন করেছেন। দুজনেই বলেছেন, খেটে খাওয়া মানুষদের এই সমাবেশ সফল হওয়ায় তারা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্বকে।
তৃণমূল-বিজেপি-র সমালোচনা
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, ''গতবার ব্রিগেড করে সিপিএম শূন্য হয়েছিল। এবার ব্রিগেড করে তারা মহাশূন্যে বিলীন হবে।'' বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ''হিন্দুরা বামেদের থেকে সরে গেছেন। মাঠের নয় ভাগ তাই ফাঁকা ছিল।''