সরকারি হাসপাতালে 'ভুল চিকিৎসা'র অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর
২ নভেম্বর ২০২৩বিদেশ সফর সেরে পায়ের চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই চিকিৎসার জেরে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয় বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন।
পায়ে চোটের চিকিৎসা
মমতার পায়ে পুরনো একটি চোট ছিল। স্পেন সফরে সেখানেই নতুন করে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। ২৩ সেপ্টেম্বর স্পেন ও দুবাই সফর সেরে কলকাতায় ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী। পায়ে সমস্যা থাকায় দ্রুত চিকিৎসকদের পরামর্শ নেন।
২৪ সেপ্টেম্বর রাজ্যের এক নম্বর সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের চিকিৎসা হয়। তাকে ভর্তি থাকতে হয়নি, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যান। এরপর বেশ কয়েকটা দিন বাড়িতেই নিজেকে বন্দি রেখেছিলেন তিনি। কালীঘাট থেকেই প্রশাসন ও দলের কাজ সামলেছেন।
এবার তিনি অসংখ্য দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেছেন বাড়ি থেকেই, বাইরে বেরোননি। দীর্ঘ বিরতির পর ২৭ অক্টোবর তিনি রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভালে উপস্থিত হয়েছিলেন।
'ভুল চিকিৎসা'র দাবি
মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসা বা বিশ্রাম নিয়ে কোনো চর্চা ছিল না। কিন্তু বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে নিজেই বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, তার পায়ের আঘাতে 'ভুল চিকিৎসা' হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘১০-১২ দিন আমার ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন চলেছে। ভুল চিকিৎসার জন্য আমার সংক্রমণ সেপটিকের মতো হয়ে গিয়েছিল। যেভাবে স্যালাইন দেয়া হয়, সেভাবে আমার হাতে সাত দিন চ্যানেল করা ছিল। তার মাধ্যমে আইভি দেয়া হয়েছে। বিছানা থেকে উঠতে পারিনি।''
মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসা হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। ‘ভুল চিকিৎসা'র বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তার যদি ভুল চিকিৎসা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে, এই প্রশ্ন তুলে রাজ্যকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা।
বিরোধী তোপ
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, "এটা হলো রাজ্যের সবচেয়ে উচ্চমানের সরকারি হাসপাতালকে চোর-ডাকাতদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানানোর অপচেষ্টার ফল। এখানকার ডাক্তারবাবুরা চিকিৎসা কম করছেন এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের শিকার হয়ে ভুয়ো কাগজপত্র তৈরিতে বেশি মনোনিবেশ করতে বাধ্য হচ্ছেন।"
অতীতে একাধিক দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত মন্ত্রী ও নেতারা অসুস্থতার কারণে এসএসকেএমএ ভর্তি হয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, তদন্তকারীদের নাগাল এড়াতে এই কৌশল নিয়েছে শাসক দল। হাতিয়ার করা হচ্ছে চিকিৎসা পরিকাঠামোকে। দুর্নীতি মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে 'কালীঘাটের কাকু' এখন এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থায় চাকরি করতেন তিনি।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের হাসপাতালের অবস্থাকে হাতিয়ার করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, বিজেপি কেন সে কথা বলে না।
যদিও তৃণমূলের বিধায়ক ও এসএসকেএমের রোগীকল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি মদন মিত্র বলেন, "এসএসকেএমকে নিয়ে এক সময় গর্ব করতাম। এমন কোনো উন্নত যন্ত্র নেই যা এই হাসপাতালে পাবেন না। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ভুল চিকিৎসা হয়েছে দেখে অবাক লাগছে।"
সিপিএম নেতা, চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "নিজের পরিচালনাধীন চিকিৎসা পরিষেবায় সমস্যায় পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কি নিজের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেবেন? মুখ্যমন্ত্রীর যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ কীভাবে ভরসা পাবে?"
চিকিৎসকদের মত
ভুল চিকিৎসার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক,. সজল বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী যখন অভিযোগ তুলেছেন, তখন তদন্ত হওয়া উচিত। তাতে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার হালহকিকত বেরিয়ে আসবে। তার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে।"
যদিও সাংবাদিক বৈঠকে ভুল চিকিৎসার দাবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, "বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্যানেল বলতে পারে চিকিৎসায় ভুলভ্রান্তি হয়েছে কি না। তবে এই ভুল চিকিৎসার অভিযোগ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেই আসছে, এটা দেখে বেশ অবাক লাগছে।"
খোদ মুখ্যমন্ত্রী 'ভুল চিকিৎসা'র অভিযোগ তোলায় চিকিৎসকদের একাংশ কিছুটা আতঙ্কিত। তাদের শঙ্কা, এবার এ ধরনের অভিযোগ আরো ব্যাপক হারে উঠতে থাকলে তারা আক্রান্ত হবেন না তো!
সম্প্রতি বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে 'দুর্নীতি ও অব্যবস্থা' নিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি লিখেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ কি তাতেই সিলমোহর দিয়ে দিল?