সব সরকারি স্কুলে নীল-সাদা ইউনিফর্ম চায় পশ্চিমবঙ্গ
২৩ ডিসেম্বর ২০২২সরকারের এই প্রস্তাব মানতে রাজি নয় বেশ কয়েকটি স্কুল৷ তারা ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার পক্ষে সওয়াল করছে৷
বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আলাদা আলাদা পোশাক পরে। ইউনিফর্ম দিয়ে চেনা যায়, কারা কোন বিদ্যালয়ের পড়ুয়া৷ রাজ্য সরকার এই ভিন্নতার পরিবর্তে একই ধরনের পোশাক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যে যে সরকারি, সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল রয়েছে, সর্বত্র একই রঙের পোশাক চালুর পক্ষে নবান্ন৷
রাজ্যের সিদ্ধান্ত, প্রাক প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের পোশাকের রং এক থাকবে। নীল-সাদা পোশাক পরতে হবে সকলকে৷ অধিকাংশ স্কুল এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সম্মতি জানিয়েছে। তবে দফতর সূত্রে খবর, ৩১টি স্কুল তাদের পোশাক বর্তমান ইউনিফর্ম বদল করতে রাজি নয়৷
প্রাক প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পোশাক স্কুলে পাঠাতে শুরু করেছে শিক্ষা দপ্তর৷ কিন্তু কয়েকটি স্কুল পুরনো পোশাকই ব্যবহার করে যেতে চায়। তাদের বক্তব্য, স্কুলের এতদিনের পোশাকের সঙ্গে মিশে আছে প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ও পরম্পরা। অনেক কৃতী পড়ুয়ার স্মৃতিও জড়িত এর সঙ্গে৷
রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন৷ অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস-এর সভাপতি হরিদাস ঘটক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব স্কুলের পোশাক এক হয়ে গেলে পড়ুয়াদের চিহ্নিত করা যাবে না। তারা স্কুলের নাম করে অন্য কোথাও গেলে বোঝা যাবে না, এরা কোন প্রতিষ্ঠানের। এই সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। অভিভাবকরাও এটা মানতে পারছেন না।’’
পোশাক বদলে ইচ্ছুক নয় যে স্কুলগুলি তার মধ্যে রয়েছে কলকাতার পাঠভবন, মিত্র ইনস্টিটিউশন, স্কটিশ চার্চ-এর মতো নামজাদা প্রতিষ্ঠান। এখানকার প্রধান শিক্ষকদের বক্তব্য, বহু কৃতী মানুষ এ সব প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন। বর্তমান ইউনিফর্ম কৃতীরাও ব্যবহার করেছিলেন। সেই স্মৃতি কীভাবে মুছে ফেলা সম্ভব? স্কুল কর্তৃপক্ষ পোশাকের রং ও ডিজাইনের বিষয়টির প্রতিও রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন।
১৯০৫ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত মিত্র ইনস্টিটিউশনের পড়ুয়া ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সৈনিক যতীন দাস, জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, সঙ্গীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়দের মতো গুণিজন। পাঠভবনের লোগো তৈরি করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। বিশ্ববাংলার লোগো ইউনিফর্মে লাগাতে রাজি নারাজ স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এই ঐতিহ্যের প্রশ্নটিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রতিটি স্কুল স্বতন্ত্র। এ জন্য তারা গর্ববোধ করে। তাদের ঐতিহ্য অনুসরণ করে চলা উচিত। সব স্কুলে নীল-সাদা ইউনিফর্মের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও অনুচিত।’’
যদিও শিক্ষা মহলের একাংশের বক্তব্য, একই সিলেবাস, শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে থাকা পড়ুয়ারা একই পোশাক পরলে আপত্তির কী আছে? এখানেই উঠছে বৈচিত্রের প্রশ্ন। সেভ এডুকেশন কমিটি-র সম্পাদক, অধ্যাপক তরুণ নস্কর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সর্বত্র একই পোশাক আনার অর্থ বৈচিত্র ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এটা কেন্দ্রীয় সরকারও করছে। প্রতিবাদী স্কুলগুলিকে সমর্থন জানাচ্ছি।’’