গত সপ্তাহে ভারতীয় আইনসভার দুটি কক্ষে পাশ হয়েছে ওয়াকফ সংশোধনী বিল, ২০২৫। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বিলে স্বাক্ষর করার পর সেটি আইনে পরিণত হয়েছে। ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের একটা অংশ এই আইনের বিরোধিতা করছে।
পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদ
নতুন ওয়াকফ আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি অংশের মতে, এনডিএ সরকারের এই উদ্যোগের ফলে মুসলমানদের সম্পত্তির উপরে সরকারি হস্তক্ষেপে আর কোনো বাধা রইল না। প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বিক্ষিপ্তভাবে পথে নেমেছে সংখ্যালঘু সমাজ। এই প্রতিবাদ হিংসাত্মক আকার নেয় মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক জায়গায়।
গত সোমবার নিমতিতা স্টেশনে রেল অবরোধ করে সংখ্যালঘু জনতা। সেই প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে মঙ্গলবার। সেদিন বিকেলে জঙ্গিপুরের অধীন রঘুনাথগঞ্জের ওমরপুর মোড়ের কাছে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করে ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে। ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক আটকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পুলিশ অবরোধ তোলার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা ছাড়তে চাননি। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এর ফলে কয়েকজন আহত হন বলে অভিযোগ। উত্তেজিত জনতা পাল্টা আক্রমণ করে পুলিশকে। তাদের লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। ইটের আঘাতে কয়েকজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। হামলার মুখে পুলিশ ঘটনাস্থল ছাড়লে তাদের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। রঘুনাথগঞ্জ থানা এলাকায় জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ চলতে থাকে। এতে তীব্র যানজট তৈরি হয়, চরম দুর্ভোগে পড়ে মানুষ।
বুধবারও মুর্শিদাবাদে অব্যাহত ছিল ওয়াকক প্রতিবাদ। জঙ্গিপুরের মতোই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সুতি। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে আগেই ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছিল সুতি ও রঘুনাথগঞ্জে। তারপরেও সেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষের জমায়েত হয়। টায়ার জ্বালিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় সংখ্যালঘু জনতা।
কলকাতার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা রাজাবাজারে ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে যৌথ প্রতিবাদ সমাবেশ হয় মঙ্গলবার। এর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিল সিটিজেন ফোরাম ফর সোশ্যাল জাস্টিস। এই সভা থেকে দাবি উঠে, সংখ্যালঘুদের সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ মানা হবে না। আইন বাতিল করে মুসলমানদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। বৃহস্পতিবার সংখ্যালঘুদের একটি সংগঠনের ডাকে কলকাতায় আরো একটি সমাবেশে হচ্ছে।
নয়া আইন নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী ডিডাব্লিউকে বলেন, "কেউ কেউ সংখ্যালঘু মানুষের মধ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটা সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন যে, এখন যে সম্পত্তি আছে, সেগুলি চলে যাবে। কিন্তু আইনে বলা আছে, এসব সম্পত্তি হাতছাড়া হবে না। অর্থাৎ কোনো একটা উদ্দেশ্যে প্রচার করা হচ্ছে, তাই এই আন্দোলন জঙ্গি আকার নিয়েছে। আমার ধারণা, সংখ্যালঘু সমাজের খুব নগণ্য একটা অংশ এই ধরনের প্রতিবাদ করছে। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির ভূমিকা এক্ষেত্রে রয়েছে। এই দলগুলির উপর যদি সংখ্যালঘুরা বিশ্বাস করে, যদি মনে করে এই দলগুলি তাদের হিতাকাঙ্খী, তাহলে সংখ্যালঘুরা নিজেদের পতন ডেকে আনবে। সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এই ধরনের প্রতিবাদ আন্দোলনের প্ররোচিত করা হচ্ছে।"
সিএএ বা ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন কেন্দ্র করে বিরাট আকারের আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর পিছনেও 'ভুল বোঝাবুঝি' ছিল বলে মনে করেন দীপ্তেন্দ্র। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, সিএএ-র সময় বলেছিল যে, নাগরিকত্ব চলে যাবে মুসলমানদের। সেটা কি হয়েছে? এবারও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।"