শোকে মুহ্যমান গোটা জাতি
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯দুইদিনের বিডিআর বিদ্রোহের ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে গোটা বাংলাদেশ৷ ঘটনাস্থল বিডিআর সদর দপ্তরে পাওয়া যাচ্ছে একের পর এক গণকবর৷ সেখান থেকে বের হচ্ছে সেনা কর্মকর্তাদের লাশ৷ কেবল সেনা কর্মকর্তারা নন, তাদের পরিবার পরিজনরাও রক্ষা পাননি বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাত থেকে৷ নির্মম এ ঘটনার কথা মনে করলেই যেন শিউরে উঠতে হয়৷ গণকবরে মাটি চাপা দেয়া মেধাবী সেনা কর্মকর্তাদের লাশের ছবি দেখে হতভম্ব হয়ে যাচ্ছে সকলেই৷ কারোই বিশ্বাস হচ্ছে না অধীনস্থ জোয়ানদের হাতে এভাবে তাদের নির্মম পরিণতি হবে৷ নজীরবিহীন এ হত্যাযজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে শুক্রবার থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে তিন দিন ব্যাপী শোক পালিত হচ্ছে৷ দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা ছিলো অর্ধনমিত৷ নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে৷
আরো গণকবর ও লাশ উদ্ধার
এদিকে শনিবার আরো তিনটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে উদ্ধারকারী দল৷ বিডিআর জোয়ানদের কোয়ার্টারের পাশের একটি সবজি বাগানে এ গণকবরগুলো পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো৷
নতুন পাওয়া গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আরো ১০টি লাশ৷ এর মধ্যে দুইজন মহিলাও রয়েছেন৷ তাদের একজন বিডিআর মহাপরিচালকের স্ত্রী নাজনিন শাকিল৷ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা শেখ মোহম্মাদ শাহজালাল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১০টি লাশ পেয়েছি৷ তবে আরো উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি৷ উদ্ধার হওয়া লাশগুলো পচে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ কেবল গুলী করে হত্যা নয় বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে লাশগুলোকে বিকৃত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শেখ মোহাম্মদ শাহজালাল৷
শনিবার গণকবর থেকে পাওয়া লাশ সহ নিহতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৭৬৷ এর আগে শুক্রবার প্রথম গণকবরটি পাওয়া যায় বিডিআর সদর দপ্তরের ভেতরেই৷ সেখান থেকে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ মোট ৩৮ জন সেনা কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়৷ এছাড়া স্যুয়ারেজ লাইন সহ পিলখানার আশপাশের এলাকা থেকেও ২৮টি লাশ উদ্ধার করা হয় যাদের বেশীরভাগই বিডিআর এর সেনা কর্মকর্তা৷
তদন্তকাজ শুরু
বিডিআর বিদ্রোহ ও সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার কারণ অনুসন্ধান করতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে৷ এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন আশা প্রকাশ করে বলেছেন যে তারা আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে সক্ষম হবেন৷
বিডিআর সদস্যদের কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ
এদিকে বিডিআর এর যেসব সদস্য অনুপস্থিত রয়েছে তাদেরকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আনসার ও সীমান্ত) সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেসনোটে এ নির্দেশ জারি করা হয়৷ প্রেসনোটে বলা হয়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানাস্থ বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘঠিত বিদ্রোহ ও অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রেক্ষিতে যেসব বিডিআর সদস্য এখনও ছুটি ব্যতীত বা অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন, তাদেরকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্ব স্ব কর্মস্থলে অথবা বিডিআর সদর দপ্তর বা নিকটস্থ সেক্টর সদর দপ্তর, ব্যাটেলিয়ন সদর দপ্তর অথবা নিকটস্থ থানায় রিপোর্ট করার জন্য নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে৷ এ সময় সীমার মধ্যে রিপোর্ট করতে অথবা কর্মস্থলে যোগদানে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে৷ এদিকে বিডিআর এর নতুন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইনুল হোসেন বলেছেন বিডিআর এ চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে৷
সেনা কর্মকর্তাদের জানাজা স্থগিত
এদিকে সেনা কর্মকর্তাদের জানাজা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে৷ শনিবার আইএসপিআর এর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে৷ এর আগে শুক্রবার বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সাত সেনা কর্মকর্তার জানাযার সময় বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়৷ জানাযায় উপস্থিত মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদরা বেশ তোপের মুখে পড়েন সেনা কর্মকর্তাদের৷