লোককথার দুষ্ট চরিত্র যখন একালের রক্ষক
২৮ ডিসেম্বর ২০২০আজকের দিনেও ডেনমার্কে রহস্যময় ‘ট্রোল' চরিত্রের অভাব নেই৷ মাঠেঘাটে সেগুলির প্রতিকৃতি ছড়িয়ে রয়েছে৷ সেই অভিনব উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন রিসাইক্লিং শিল্পীটোমাস ডাম্বো৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, আমার বয়সের সবাই রূপকথা ও লোককথার কাহিনি শুনে বড় হয়েছে৷ সে কারণে বোধহয় আমি এখন সেই কাহিনি শোনাতে চাই৷ এই ট্রোলগুলির দুষ্ট হবার প্রয়োজন নেই, তারা ভালোও হতে পারে৷ আমার রূপকথার কাহিনিতে ট্রোলগুলি প্রকৃতির সুরক্ষা করে৷''
টোমাস ডাম্বো ও তাঁর স্বেচ্ছাসেবীরা এই মুহূর্তে একটি চরিত্রের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছেন৷ দশটি ট্রোলের এক রূপকথার অন্যতম চরিত্র ইভেন৷ গোটা ডেনমার্ক জুড়ে প্রকৃতির মধ্যে সেগুলি লুকিয়ে রয়েছে৷ কীভাবে সেগুলি খুঁজে পাওয়া যায়, পরে তা জানানো হবে৷ স্থাপত্য তৈরি করতে টোমাস ডাম্বোর দশ দিন সময় লাগে৷ কয়েকটি মাত্র চার মিটার দীর্ঘ হলেও অন্যগুলি ১৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে৷ টোমাস বলেন, ‘‘আমি মাত্রা নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসি৷ তাদের তুলনায় আমাদের ছোট দেখায়, কারণ প্রকৃতির তুলনায় আমরা তো সত্যি ছোট৷''
৪১ বছর বয়সি এই শিল্পীর জন্য উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘পথের কোণে কুড়িয়ে পাওয়া একটি ডাণ্ডা দিয়ে এটি তৈরি করেছি৷ স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে আরেকটি উপাদান পেয়েছি৷ বন্দর বলে তারা এটির উপর মাছের জাল টাঙাতো৷ এটি শিলালিপি৷ আমার কর্মশালায় অসংখ্য ঠেলাগাড়িতে ব্যবহৃত কাঠ দিয়ে সেটি তৈরি করা হয়েছে৷''
ডেনমার্কের এই শিল্পী পেরেক ও আঠা ছাড়া প্রায় সবসময়ে শুধু বাতিল কাঠ ব্যবহার করেন৷ কোপেনহেগেন শহরে তাঁর কর্মশালায় সেগুলি জমা হয়৷ যেমন বন্ধ হয়ে যাওয়া এক দোকানের আসবাবপত্র৷ তাঁর মতে, এমন প্রকল্প অন্যদের জঞ্জাল সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সাহায্য করবে৷ মানুষ এর সঠিক মর্ম বুঝবে৷
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ৭০টি আপসাইক্লিং ট্রোল ছড়িয়ে রয়েছে৷ বেলজিয়াম, পুয়ের্তো রিকো থেকে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়ার মতে দেশে সেগুলির দেখা পাওয়া যায়৷ টোমাস ডাম্বো বলেন, ‘‘বিশ্বের অন্য কোথাও ভ্রমণ করার সময়ে আমাকে স্থানীয় উপদানের খোঁজ করতে হয়৷ কারণ আমি তো আর সেটি কোপেনহেগেন থেকে চীনে আনতে পারি না! সঠিক উপাদানের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লে আমার মনে সত্যি খুব আনন্দ হয়৷ কখনো আমি পৌঁছানোর আগেই মানুষ সব ব্যবস্থা করে৷ কখনো বা আমি নিজেই বেরিয়ে পড়ে বাতিল বস্তুর স্তূপ ঘাঁটি৷''
ডেনমার্কের ট্রোলের খোঁজ করতে হলে সবার আগে ইন্টারঅ্যাক্টিভ প্রক্রিয়ায় গুপ্তধনের সন্ধান করতে হবে৷ কোপেনহেগেনের এক পরিবার সেটাই করছে৷ পরিবারের কত্রী জানালেন, ‘‘আমাদের মেয়ের বয়স ১০৷ সে ডিজিটাল জগত সত্যি খুব ভালোবাসে৷ তাকে ঘর থেকে বার করে প্রকৃতির স্বাদ দিতে চাইলে ট্রেজার হান্ট খুব মজার এক প্রক্রিয়া৷''
ট্রোলম্যাপ ডট কম নামের ওয়েবসাইটে গুপ্তধন খোঁজার একটি ডিজিটাল মানচিত্র রয়েছে৷ সেটির সাহায্যে ধাতুর ফলক খুঁজতে হয়৷ সেগুলির উপর পরবর্তী সংকেতের ইঙ্গিত পাওয়া যায়৷ টোমাস ডাম্বো বলেন, ‘‘মানুষ যে এসে সত্যি খোঁজ চালায়, তা দেখলে আমার খুব ভালো লাগে৷ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের আরামের জায়গা থেকে বার করাই আমার প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য৷''
গুপ্তধন সন্ধানের শেষে প্রতিবার পারিশ্রমিক পাওয়া যায়৷ যেমন নৌকাসহ ক্যাপ্টেন নালে অথবা তার কোনো বন্ধু৷ ট্রোলের মাধ্যমে মানুষকে প্রকৃতির মধ্যে টেনে আনার প্রকল্পে সম্ভবত সত্যি কাজ হচ্ছে৷
ক্রিস্টিনা লাউবে/এসবি