পরিস্থিতি সামাল দিতে বিআরটিসি বাস দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। রেলের টিকিটেই তারা বাসে যেতে পারছেন।
কিন্তু তাতে সমস্যার তেমন সমাধান হচ্ছে না। কারণ, রেলের বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে বাস দিয়ে সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকার কমলাপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেন যাত্রীরা স্টেশনে গিয়ে ট্রেন না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। অনেকেই অনলাইনে আগাম টিকিট কিনে পড়েছেন বিপাকে। রাজশাহীতে বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন স্টেশন মাস্টার। ময়মনসিংহে যাত্রীদের তোপের মুখে পড়েন স্টেশন সুপার। পালিয়ে যান চালক। আরো অনেক রেল স্টেশনে একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রেল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে যানা গেছে যারা ধর্মঘট ডেকেছে সেই রানিং স্টাফরা সংখ্যায় কম হলেও তারা ট্রেন চালানোর সঙ্গে জড়িত। তাদের ছাড়া ট্রেন চালানো সম্ভব নয়।
ধর্মঘট যারা ডেকেছেন, তাদের কেউ কেউ রাতে এবং সকালে রেল স্টেশনে থাকলেও পরে তাদের আর দেখা যায়নি। তারা যাত্রীদের রোষ এড়াতে নিরাপদে চলে গেছেন বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য জোটের মহাসচিব এ আর মঞ্জু বলেন, ‘‘সংখ্যার দিক দিয়ে রানিং স্টাফরা কম হলেও তারা ছাড়া ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। তারাই ট্রেন চালনা ও চলন্ত ট্রেনের সব ধরনের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত। আর তারা নির্ধারিত বেতনের বাইরে যে সুবিধা পান, সেটাকে মাইলেজ ভাতা বলে। আট ঘণ্টা ডিউটির পর তাদের ওভার টাইম হয় মাইল হিসাব করে। ২০২১ সালে তাদের এই সুবিধা বাতিল করা হয়।”
বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, ট্রেনের গার্ড, লোকোমাস্টার, সহকারি লোকোমাস্টার, সাব লোকো মাস্টার এবং টিটিইরা রেলের রানিং স্টাফ। সারাদেশে রেলওয়েতে এক হাজার সাতশ'র বেশি রানিং স্টাফ কাজ করেন।
দৈনিক কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেয়া হতো, যাকে বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।
মাইলেজ বিবেচনায় প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। আট ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেয়া হতো। এর বাইরে মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরো ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে রানিং স্টাফদের পেনশন দেয়া হয়৷ ২০২২ সালের পর নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না।
এর আর মঞ্জু বলেন, ‘‘রানিং স্টাফদের দাবিকে আমরা যৌক্তিক মনে করি। কারণ, তারা যে শর্তে নিয়োগ পেয়েছেন সেই শর্ত ও সুবিধা বাতিল করা যায় না। তবে আমরা চেয়েছিলাম ধর্মঘট না করে যাতে সমস্যার সামাধান করা যায়। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। উপদেষ্টার সঙ্গেও বসবো। আশা করি সমস্যার সমাধান হবে।”