রাতের মোহময়ী কলকাতা

মাঝরাতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে। সকালের জমজমাট ছবি উধাও। আলোকিত পাথরের সিংহের সামনে শুধু জেগে আছে কুকুর। শুনশান রাস্তা। ততোধিক শান্ত ভিক্টোরিয়ার অন্দর।

প্রতিটি শহরেই রাতের চেহারা আলাদা। রাতে প্রতিটি শহর রহস্যে মোড়া এবং মোহময়ী। গঙ্গার ধারে ক্যামেরা পৌঁছালো রাত একটার পর। তখন সেখানে অপার শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন মানুষ। সামনে গঙ্গার জলে আলোর প্রতিফলন। ভাটা চলছে। তাই নদীও শান্ত। সেখানে জেগে শুধু পুলিশ ও জনাকয়েক মানুষ।

রাত আড়াইটের সময় হাওড়া ব্রিজ। সারাদিন যে ব্রিজ হলো ব্যস্ততার আরেক নাম, গভীর রাতে সেও যেন গভীর নিদ্রায়। এমন জনমানব, যানবাহনহীন হাওড়া ব্রিজ দেখাও একটা অভিজ্ঞতা।

রাতে আলোকিত প্রিন্সেপ ঘাট। একাকী। হয়ত বা সকালের প্রতীক্ষায়। যখন আবার তা সরগরম হবে মানুষের আনাগোনায়।

কলকতার সেই হাতে টানা রিক্সা। রাস্তার পাশে রিক্সা রেখে সারাদিনের পরিশ্রমের শেষে ঘুমের দেশে চালকরা। এই সময়টুকুর জন্য তারা অপেক্ষা করে থাকেন দিনভর।

বাবুঘাটে সারি সারি ট্রাকের সারি। কাকভোরে তাদের কাজ শুরু হয়ে যাবে। মাল নিয়ে যাত্রা শুরু হবে। তার আগে ট্রাকের বিশ্রাম। চালকেরও। রাতের কলকাতার এই ছবিও অন্যরকমের।

বাসস্ট্যান্ডের এই খাবারের দোকানগুলি রাতে জাগে। বাস, ও ট্রাকের কর্মীরা, রাতজাগা মানুষ আসেন খেতে। বাসন ধোয়ার কাজ চলে। চলে পরের দিনের প্রস্তুতি।

হাওড়া ব্রিজে ব্যারিকেড করে রাতপ্রহরায় ব্যস্ত পুলিশ। অপেক্ষমান একটি ট্যাক্সিতে রেখে কাগজ পড়ছেন এক পুলিশ কর্মী। রাতের কলকাতাকে নিরাপদ রাখতে এদের দায়িত্ব অপরিসীম।

আলোকিত বাগবাজার চক্ররেল স্টেশন। রাত গভীর। তাই কোনো মানুষ নেই। অত রাতে চক্ররেল চলে না। শুধু স্টেশন জেগে রয়।

সমীক্ষা বলছে, কলকাতায় প্রায় সাত-আট লাখ মানুষ ফুটপাথবাসী। রাতের কলকাতার সেই ফুটপাথবাসীরাও তখন ঘুমের দেশে।

কলকাতার রাতজাগানিয়া এলাকা হলো পার্ক স্ট্রিট। রেস্তোরাঁ, নাইট ক্লাব, হোটেল, পানশালায় গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড় থাকে। থাকে প্রচুর ট্যাক্সিও।

রাতের কলকাতায় পুলিশ সক্রিয় থাকে। চলে চেকিং। মোটরসাইকেলে ঘুরতে থাকেন পুলিশ কর্মীরা।

রাতের আলোয় কলকাতা। ফ্লাইওভার, রাস্তা আলোকিত। মানুষজন নেই। দু-একটা গাড়ি চলে। এই আলো, এই নির্জনতা, এই রহস্যময়তা নিয়ে রাতের কলকাতা মোহিনী।

রাস্তার ধারে সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে পুলিশ। জরুরি দরকার না থাকলে রাতে ঘরের ভিতরে থাকাই শ্রেয়।