রাজ্য-রাজ্যপালের সুসম্পর্কে ইতি কি আসন্ন?
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এখন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি। তিনি যত দিন কলকাতার রাজভবনের বাসিন্দা ছিলেন, তত দিন নবান্নের সঙ্গে সংঘাত ছিল চরমে। তার জায়গায় সি ভি আনন্দ বোস দায়িত্ব নেয়ায় পরিস্থিতি বদলেছিল।
একাধিক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেন বোস। প্রশাসন পরিচালনার সঙ্গে তার সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেন তিনি। রাজ্যপালের মুখে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর ‘জয় বাংলা' স্লোগান। রাজ্যের তৈরি করে দেয়া প্রশস্তিসূচক বাজেট প্রস্তাবও পুরো পাঠ করেন রাজ্যপাল।
বোসকে বাংলা শেখানোর উদ্যোগ নেয় নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রাজভবনে সরস্বতী পুজোর শ্রী পঞ্চমী তিথিতে হয় হাতেখড়ি অনুষ্ঠান। তবে সোমবার যখন রাজ্যপাল বাংলা পড়া আরম্ভ করলেন দুই শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে, সেদিনই তাকে শাসক দলের আক্রমণের মুখে পড়তে হল।
মুখপত্র ‘জাগো বাংলা'য় লেখা হয়েছে, "রাজ্যপাল যে আসলে বিজেপির এজেন্ডা কার্যকর করতে এসেছেন, তা প্রমাণ করেছিলেন জগদীপ ধনখড়। প্রাক্তন রাজ্যপালের পথ দ্রুত অনুসরণ করতে নেমে পড়েছেন বর্তমান রাজ্যপাল।” এই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, "মনে রাখতে হবে রাজ্যপাল বিজেপির ক্যাডার ছিলেন।”
এর আগে থেকেই অবশ্য রাজ্য-রাজ্যপালের মধুর সম্পর্কের তাল কাটছিল। বোসের কাজকর্মে তার উপর চটেছিল রাজ্য বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিয়মিত আক্রমণ করছিলেন বোসকে। এরই মধ্যে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সাক্ষাৎ করেন রাজ্যপালের সঙ্গে। বৈঠক শেষে সুকান্ত ইঙ্গিত দেন, রাজ্যপালের পদক্ষেপে পরিবর্তন দেখা যাবে।
রাজ্য-রাজ্যপালের তিক্ততা বাড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে হামলার অভিযোগ ওঠার পর। গত শনিবার নিজের জেলা কোচবিহারে গিয়েছিলেন নিশীথ। সেখানে তার কনভয়ে হামলা করে দুষ্কৃতীরা। মন্ত্রীর গাড়ির কাচ ভাঙে, বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার পর নিশীথ দেখা করেন আনন্দ বোসের সঙ্গে। তারপর কড়া বিবৃতি দেন রাজ্যপাল। রাজভবন কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে রাজ্যপাল চুপ করে থাকবেন না। দিনহাটার ঘটনার পর রাজ্য সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে রাজভবন।
রবিবারের এই বিবৃতির পরের দিন ‘জাগো বাংলা'র প্রতিবেদনে নিশানা করা হয়েছে রাজ্যপালকে। তার আগেই সুর চড়িয়েছেন তৃণমূল নেতারা। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "চাকরি বাঁচানোর বিবৃতি দিচ্ছেন রাজ্যপাল। যেদিন তিনি বিজেপির দূত হয়ে যাবেন, তেমনই জবাব পাবেন।” সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, "রাজ্যপাল বাংলা শিখছেন। তাই ধীরে ধীরে বাংলার মানুষের কথা বুঝতে পারছেন। সঠিক পথ নিচ্ছেন।”
এই বিবৃতির লড়াই দেখে মনে হচ্ছে রাজ্য-রাজ্যপাল মধুচন্দ্রিমা শেষ? প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এখনই এ কথা বলা যাবে না। পরবর্তী ঘটনাক্রম দেখতে হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠলে রাজ্যপাল মুখ খুলবেন, এটা স্বাভাবিক। এর মধ্যে রাজনীতি দেখার অবকাশ নেই।”
নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতির আবর্তেই থেকে যাচ্ছে রাজভবন। ধনখড়ের পর বোসের আমলেও সেই ছবি দেখা যাবে, এই ইঙ্গিত মিলছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক শুভময় মৈত্র বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল নিয়ে কথা বলার সময় গঠনমূলক বা সাংবিধানিক আলোচনার জায়গা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্যপাল যদি নিরপেক্ষভাবে সাংবিধানিক আওতার মধ্যে থেকে আলোচনা করতেন, যদি তৃণমূল বনাম বিজেপির মধ্যে জড়িয়ে না পড়তেন, তা হলে ভাল হতো।”