রাজ্যসভাতেও পাশ ওয়াকফ বিল, তৃণমূলের তিন এমপিকে ঘিরে বিতর্ক
৪ এপ্রিল ২০২৫বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে রাজ্যসভার বিতর্ক। তবে শেষপর্যন্ত বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও রাজ্যসভার ভোটাভুটিতে পাশ হয়ে যায় ওয়াকফ বিল। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৮টি। বিপক্ষে ভোট দেন ৯৫ জন সাংসদ। এরপর বিলটির আইন হতে আর কোনো সমস্যা থাকলো না। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বিলটিতে সই করলেই ৭০ বছরের পুরনো আইন বদলে নতুন আইন চালু হবে।
নতুন বিল বা ওয়াকফ সংশোধনী বিল বর্তমান ওয়াকফ বোর্ডের কাজকে অনকেটাই নিযন্ত্রিত করে দেবে। উল্লেখ্য, ১৯৫৪ সালের এই বিলটির প্রথম সংশোধন হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। সে সময় ওয়াকফ বোর্ডের হাতে আরো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। তাদের কাজের পরিধি বাড়ানো হয়েছিল। বর্তমান বিলে ঠিক তার উল্টো পথে চলা হয়েছে। ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা সংকুচিত করা হয়েছে অনেকটাই।
কীভাবে ভোট হলো?
এদিন রাজ্যসভাতেও ওয়াকফ বিল নিয়ে রীতিমতো নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিতর্ক চলে মধ্য রাত পর্যন্ত। রাত ২টো ১৯ মিনিটে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু বিলটি ভোটাভুটির জন্য পেশ করেন। ধ্বনি ভোটে বিলটি পাশও হয়ে যায়। কিন্তু বিরোধীরা ধ্বনি ভোটের বিরোধিতা করেন। ফলে ডিভিশন ভোটের ব্যবস্থা করা হয়। সেই ভোটে ১২৮-৯৫ ভোটে পাশ হয়ে যায় ওয়াকফ বিল।
এদিন রাজ্যসভায় বিতর্ক শুরু করেন মন্ত্রী কিরণ রিজিজু। লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও সরকারের বক্তব্য পেশ করেন তিনি। জানান, ওয়াকফ সম্পত্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো তার মাধ্যমে মুসলিম সমাজের গরিব, অনাথ, শিশু এবং নারীদের উন্নযন। কিন্তু বর্তমান ওয়াকফ বোর্ড অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণেই আইনে সংশোধন এনে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিরোধীদের বক্তব্য
অধিকাংশ বিরোধী দল এই বিলের বিপক্ষে কথা বলেছে। বলা হয়েছে, এই বিলের মাধ্যমে মেরুকরণের রাজনীতি করছে বিজেপি। শুধু তা-ই নয়, এই বিল যেভাবে পাশ করানো হয়েছে সেই কার্যপ্রণালী নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দেশের একাধিক মুসলিম সংগঠন এই বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। বিরোধীদের বক্তব্য, সংসদের বাইরে এই বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে।
তবে সরকারপক্ষ এদিন রাজ্যসভায় আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছিল দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়াকে। দেবগৌড়া সংসদে বিলের সংশোধনীর পক্ষে বক্তৃতা করেন। যা সরকারপক্ষের বড় জয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
তৃণমূলের ভিতরে বিতর্ক
লোকসভায় ভোটাভুটি হয়েছিল বুধবার রাতে। হুইপ থাকা সত্ত্বেও ওই দিন তৃণমূলের তিন সাংসদ পার্লামেন্টে অনুপস্থিত ছিলেন। যা নিয়ে দলের ভিতরেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। ওয়াকফ বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কে এবং ভোটাভুটিতে কেন সাংসদরা অনুপস্থিত থাকবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এই বিষয়ে আলোচনা হবে বলে দলের তরফে ডিডাব্লিউকে জানানো হয়েছে।
অনুপস্থিত ছিলেন ঘাটালের সাংসদ দেব, বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় এবং কোচবিহারের সাংসদ জগদীশচন্দ্র বাসুনিয়া। দলের এক নেতা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, দেব ঝাড়খণ্ডে শুটিং করছেন বলে অনুপস্থিত ছিলেন। বাসুনিয়া জানিয়েছেন, পারিবারিক কাজে তিনি আটকে পড়েছিলেন। তবে তিন সাংসদের বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণার দাবি করেছে দলের বেশ কিছু নেতা। বিষয়টি এখন দলনেত্রীর কোর্টে।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এএনআই)