যত কাণ্ড মুকুল রায়কে নিয়ে
১৮ এপ্রিল ২০২৩তৃণমূলে যোগ দিলেও খাতায়-কলমে এখনো বিজেপির বিধায়ক মুকুল রায়। শরীর-মন সুস্থ না থাকায় তিনি কার্যত রাজনীতির আঙিনার বাইরেই রয়েছেন। এ হেন মুকুলকে নিয়ে সোমবার সন্ধ্যা থেকে বঙ্গ রাজনীতির পারদ চড়ছে।
গতকাল রাতের বিমানে কলকাতা থেকে দিল্লি উড়ে যান মুকুল। তার সঙ্গী ছিলেন দু'জন। দিল্লি বিমানবন্দর থেকে মুকুলের বেরোনোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে মুকুলকে বলতে দেখা গিয়েছে, "আমি কি দিল্লি আসতে পারি না? আমি এখানকার এমএলএ, এমপিও ছিলাম। কোনো বিশেষ কারণে আসেনি। যতদিন দরকার হয় থাকব।"
মুকুলের পুত্র, সাবেক বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় দাবি করেছেন, তিনিও বাবার দিল্লি যাওয়ার কথা জানতেন না। তৃণমূল নেতা বাবার নামে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। বাবাকে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়ারও অনুরোধ করেন। শুভ্রাংশুর অভিযোগের ভিত্তিতে আজ বিমানবন্দর থানায় তলব করা হয় বিজেপি নেতা পীযূষ কানোরিয়াকে।
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে শুভ্রাংশু জানান, এ দিন দুপুর পর্যন্ত তার সঙ্গে বাবার যোগাযোগ হয়নি। মুকুল-পুত্র বলেন, "বাবা হাই শুগার, প্রেসার, পার্কিনসন্স, ডিমেনশিয়ার মতো হাজারো রোগে ভুগছেন। তার কাছে এক টাকাও নেই যে কোথাও যাবেন। এর পিছনে টাকার খেলা রয়েছে। একজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে যা নিন্দনীয়।"
মুকুল রাজ্যসভার সংসদ ও দেশের রেলমন্ত্রী ছিলেন। কার্যত স্বেচ্ছা নির্বাসন নিলেও অতীতের হেভিওয়েট রাজনীতিকের 'অন্তর্ধান' ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। সামনে এসেছে তার দিল্লির বিমানের বোর্ডিং পাস। সূত্রের খবর, সোমবার রাতে তিনি রাজধানীতে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
মঙ্গলবার বিজেপি নেতা, সাবেক সাংসদ অনুপম হাজরা ফেসবুকে একটি শব্দের পোস্টে লিখেছেন 'প্রত্যাবর্তন'। এতে প্ৰশ্ন জোরালো হয়েছে, মুকুল কি পদ্ম শিবিরে ফিরবেন? অনুপম কিছু খোলসা করেননি। তৃণমূল নিশানা করেছে বিজেপিকে। পশ্চিমবঙ্গের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য, "মুকুলকে দেখে অসুস্থ মনে হল। এমন মানুষকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে যদি বিজেপি ব্ল্যাকমেল করে, তা অত্যন্ত অন্যায়।"
একসময় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির 'চাণক্য' হিসেবে পরিচিত ছিলেন তৃণমূলের 'সেকেন্ড ইন কম্যান্ড' মুকুল। দল বদলে ২০২১ সালে তিনি বিজেপির টিকিটে জেতেন নদিয়ার কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে। পরে ফিরে আসেন তৃণমূলে। তিনি কোন দলের বিধায়ক, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়।
সোমবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর একটি টুইটের সঙ্গে মুকুল-পর্বকে জোড়া হচ্ছে। তৃণমূলের ৯২ জন সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি নিয়োগের সুপারিশ করেছেন, নাম-সহ টুইটে অভিযোগ করেন শুভেন্দু। সেই তালিকায় শুভ্রাংশু রয়েছেন।
গতকালই নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ দিন ঘাসফুলের আর এক বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। শাসক দলের আরো নেতা-বিধায়ক-সাংসদ কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে শুভ্রাংশুর 'সুরক্ষা' নিশ্চিত করতেই কি পরিকল্পনামাফিক মুকুলের দিল্লি সফর?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মইদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শুভ্রাংশু ক্যামেরার সামনে বলেছেন, তিনি ফের বিধায়ক হলে হাজারবার চাকরির সুপারিশ করবেন। সুতরাং ওকে এক্ষেত্রে বাঁচানোর প্রশ্ন উঠছে না, যেহেতু সুপারিশকে তিনি অনৈতিক ও বেআইনি মনে করেন না।"