মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, পরীক্ষা দিতেই হবে, ক্ষুব্ধ চাকরিহারারা
২৮ মে ২০২৫চাকরিহারাদের ফের বসতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ৩০ মে তে প্রকাশিত হবে বিজ্ঞপ্তি। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একথা ঘোষণার পরেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশের। নতুন করে পরীক্ষার প্রস্তুতি? নাকি আইনি লড়াই নিষ্পত্তির অপেক্ষা? কোন পথে হাঁটবেন শিক্ষকরা?
মুখ্যমন্ত্রী যা বললেন
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "পরীক্ষা দেব না, এখনই তা বলা উচিত না। তাহলে চাকরিটাই থাকবে না। সরকারের দুটি পথই কাজে লাগানো উচিত। রিভিউ করে বিচার না পেলে চাকরি ফিরে পাওয়ার সুযোগ থাকবে না।" ৩০ মে প্রকাশিত হবে বিজ্ঞপ্তি। অনলাইন আবেদন শুরু ১৬ জুন। ১৪ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা হবে। প্যানেল প্রকাশ হবে ১৫ নভেম্বর। কাউন্সেলিং হবে ২০ নভেম্বর। এর পাশাপাশি রিভিউ পিটিশানের আইনি লড়াইও চলবে।
এর আগে শিক্ষা দফতরে এবং সরকারের কাছে চাকরিহারারা জানিয়েছিলেন তারা দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় বসতে চান না। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় সেই দাবির আর কোনো মূল্য থাকল না। চাকরিহারা এক শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডল ডিডাব্লিউকে জানান, "সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী প্ল্যান এ, বি, সি, ডির কথা বলেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে আদালতের নির্দেশ মেনে পরীক্ষা নেওয়াটাই ওনার প্ল্যান এ। রিভিউ পিটিশান ওনার প্ল্যান বি। অথচ ঠিক এর উলটো হওয়ার কথা ছিল। আমরা আইনি লড়াইয়ের শেষ দেখতে চাই।"
'পদোন্নতির পরীক্ষা হোক। একই পরীক্ষা কেন?'
আরেক চাকরিহারা শিক্ষিকা বিদিশা মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ফের পরীক্ষা হলেও যে আর দুর্নীতি হবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "সেই একই এসএসসি, যাদের দুর্নীতির কথা এখন সর্বজনবিদিত, তারাই আবার আমাদের পরীক্ষা নেবে। কী গ্যারান্টি আছে যে তারা আবার দুর্নীতি করবে না আর পাঁচ বছর বাদে আবার প্যানেল বাতিল হয়ে যাবে না। তখন কি আমরা আবার পরীক্ষায় বসব?"
দশ বছর আগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন এই চাকরিহারারা। এতদিন তাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এক চাকরিহারা অর্পিতা হাজরা বলেন, "তখন সদ্য পাশ করা ছাত্রী ছিলাম। এখন সংসার, সন্তান হয়েছে। আমি বাচ্চাকে পড়বো, না নিজে পড়ব?"
বিদিশা আরো বলেন, একই পদের জন্য একাধিকবার পরীক্ষা নেওয়াটা অন্যায়। বিদিশার মতে, "সাধারণভাবে একটা সরকারি চাকরির একটা পরীক্ষা হয়। একবার সেই পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে সেই চাকরি আমি পেয়েছি। এর পর আরো নানান পরীক্ষা দিতে আমি প্রস্তুত। পদোন্নতির পরীক্ষা হোক। আমি পরাতে পারি কিনা সেটা দেখতে পরীক্ষা হোক। আমি রাজি। কিন্তু যে পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছি, সরকার আর এসএসসির এই প্রকাণ্ড প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ঢাকতে সেই একই পরীক্ষা আমি আবার দেব কেন?"
চাকরিহারারা প্রশ্ন তুলছেন, কেন ওওমআর শিট প্রকাশ করা হবে না? অযোগ্যদের বাঁচানোর জন্যই কি প্রতিশ্রুতি দিয়েও পিছিয়ে এলো রাজ্য সরকার?
'রিভিউ পিটিশনের আইনি ভিত্তি দুর্বল'
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "যে মুহূর্তে তুমি নতুন করে পরীক্ষা নিচ্ছ সেই মুহূর্তে তুমি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নিচ্ছ। এর পর রিভিউ পিটিশানের কোনো মূল্য থাকে না। নিজেদের দুর্নীতি ঢাকা দেওয়ার জন্য এগুলো ধাপ্পাবাবাজির কথা। আইনি ভিত্তি নেই।"
সুপ্রিম কোর্টে ২০১৬-র এসএসসি প্যানেল বাতিলের পর মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বার আশ্বাস দিয়েছিলেন, কারো চাকরি যাবে না। এই প্রসঙ্গে বিকাশ বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে সবার চাকরি থাকা সম্ভব নয়। যারা সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তাদের তো চাকরি যাবেই। তারা অন্য দপ্তরেও চাকরি পাবে না। পাবলিক এমপ্লয়মেন্ট বা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দুর্নীতির জন্য এটা তাদের শাস্তি। সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর কথা ভিত্তিহীন। যেহেতু ওনার দলের ভিতর থেকেই এই দুর্নীতি হয়েছে, তাই উনি পিঠ বাঁচাতে এই কথা বলছেন। এই দুর্নীতির কারণে বলি হচ্ছেন যোগ্য শিক্ষকরা।"
অন্যদিকে, এই মামলার পিটিশানাররা নতুন পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন শিলিগুড়ির ববিতা সরকার যোগ্য হয়েও চাকরি পাননি। তিনি বলেন, "আমার পরের ব্যক্তি চাকরি পান। আমি পাইনি। এখন আবার পড়াশোনা করছি নতুন করে। সিলেবাস দেখিনি। একই থাকলে ভালো। আর কেবলমাত্র সেই একই পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসলে এবং নতুন চাকরিপ্রার্থীদের অন্য পরীক্ষা হলে আমাদের কম্পিটিশন কম হবে।"