মিউনিখ সম্মেলন
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২বাভারিয়া রাজ্যের রাজধানীতে শুরু হওয়া এই বৈঠকটির নাম মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্স৷ অর্থাৎ, বিশ্বের সার্বিক নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত৷ এটা হল আটচল্লিশতম সভা৷ বিশ্বের বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতারা অংশগ্রহণ করছেন এই বৈঠকে৷
বৈঠকের শুরু হয় চেয়ারম্যান ভল্ফগাং ইশিঙারের উদ্বোধনী ভাষণের মধ্যে দিয়ে৷ তিনি জানান,‘‘আমি বিশ্বাস করি, এই বৈঠকে আমরা অনেক কিছু আলোচনার সুযোগ পাবো৷ বিশেষ করে আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তার পর্যালোচনা৷ এর পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের নিরাপত্তা বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হবে৷ আরও রয়েছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন৷''
কারা কারা উপস্থিত থাকছেন এই বৈঠকে? মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেটা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন, বিশ্বব্যাংকের প্রধান রবার্ট জোয়েলিক এবং জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী টোমাস দে মেজিয়ের৷ আর থাকবেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা৷
তাদের বক্তব্য থেকে হয়তো বোঝা যাবে বিশ্বের অর্থনীতি এবং নিরাপত্তার সুবাতাস কোনদিকে বইছে৷ কোন কোন নীতি বা কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে তাও স্পষ্ট উঠে আসবে এসব রাজনীতিকের ভাষণ থেকে৷ তবে কে কী বলবেন এবং কোন বিষয়ে এবং তারা ভাষণ দেবেন বা বক্তব্য রাখবেন, সেগুলি কতটা গুরুত্ব বহন করবে – এসব দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সবাই৷
ইশিঙার জানান, আরব বিশ্বের জাগরণ নিয়ে অবশ্যই কথা বলা হবে, আলোচনা হবে৷ বিশেষ করে মিশর এবং লিবিয়ার পরিস্থিতি অবশ্যই আলোচনায় স্থান পাবে৷ এছাড়া সিরিয়ার বর্তমান অবস্থাও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে তার ওপরও জোর দেন ইশিঙার৷
এছাড়া সারা বিশ্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ন্যাটোর ভূমিকা নিয়ে কথা হবে৷ ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কও আলোচনায় উঠে আসবে৷ ন্যাটোর সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডার জেমস স্টাভরিডিস বৈঠক শুরুর আগের দিন জানিয়েছেন, ‘‘বিশ্ব পাল্টাচ্ছে৷ এই দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে ন্যাটোকে মানিয়ে চলতে হবে৷ ন্যাটো তার জন্য কী করছে তা জানা প্রয়োজন৷ ন্যাটো গ্লোবাল অ্যাকটর হতে চায় না, অত্যন্ত পরিবর্তনশীল বিশ্বে অনেকগুলো অ্যাকটরের মধ্যে ন্যাটো একটি৷''
ইশিঙার জানিয়েছেন, ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে মিসাইল-শিল্ড এবং মিসাইল ডিফেন্স – অর্থাৎ,ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে যে মতানৈক্য চলছে তা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করা হবে৷ দুই পক্ষের কাছেই প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হবে৷ সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করা হবে৷
বলা প্রয়োজন, রাশিয়া সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার লেনদেনের পরিসর কমিয়ে ফেলা হবে – যতক্ষণ মিসাইল শিল্ডের বিষয়টি থাকছে৷ এর প্রেক্ষিতে ন্যাটো যুক্তি দেখিয়েছে যে ইরান যাতে কোন অবস্থাতেই ইউরোপে আক্রমণ করতে না পারে, তার জন্যই এই মিসাইল শিল্ডের ব্যবস্থা৷ এরপরেও বরফ গলেনি৷
স্টাভরিডিস জানান, বিশ্বের অন্যান্য সমস্যার ওপরও বৈঠকে আলোকপাত করা জরুরি৷ বিশ্বকে আরো নিরাপদ করতে কীভাবে প্রতিটি দেশকে একসঙ্গে কাজ করা উচিত সে দিকে নজর দেয়া৷
বিশ্লেষকরা অপেক্ষা করছেন৷ তারা আশা করছেন দুদিনের এই বৈঠক থেকে হয়তো ইতিবাচক কোন আলামত পাওয়া যাবে যা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে হ্রাস করতে সক্ষম হবে৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন