ভারতে জাল চিকিৎসকের ১৫ অস্ত্রোপচারে সাতজন মৃত
৯ এপ্রিল ২০২৫নরেন্দ্র বিক্রমাদিত্য যাদব ওরফে এন জন কাম নামের এক ব্যক্তি দেশ ও বিদেশের ডাক্তারি সার্টিফিকেট জাল করে দামোহ মিশন হাসপাতালে যোগ দেয় ও অস্ত্রোপচার করে। তার করা ১৫টি অস্ত্রোপচারের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে এই প্রতারক। পুলিশ আরো জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস, লন্ডনের সেন্ট জর্জেস হাসপাতাল থেকে এমআরসিপি এবং পন্ডিচেড়ি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কার্ডিওলজিতে ডিএম করার শংসাপত্র দেখায় এই প্রতারক। এনডিটিভির রিপোর্ট অনুযায়ী এই সবকটি ডিগ্রি-ই জাল।
মঙ্গলবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে কোর্টে তোলা হয়।
ভারতবর্ষে হাতুড়ে ডাক্তারের বাস্তবতা
নরেন্দ্র বিক্রমাদিত্য যাদবের গ্রেপ্তারি ফের একবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করালো দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে। প্রায় দুই দশক ধরে জাল ডিগ্রি নিয়ে মানুষের প্রাণের বিনিময় ডাক্তারি করে চলেছিলেন এই ব্যক্তি। তিনি একা নন।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশানের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ১০ লক্ষের উপর কোয়াক বা হাতুড়ে ডাক্তার রয়েছে ভারতবর্ষে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও-র মতে, প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে অন্তত একজন ডাক্তার থাকা প্রয়োজন। সম্প্রতি, ইকোনমিক সার্ভের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে এই মুহুর্তে ১৩ দশমিক ৮৬ লক্ষ ডাক্তার আছেন। প্রতি এক হাজার ২৬৩ জন-পিছু এক জন ডাক্তার পান ভারতবাসী। এই হিসেবে ২০৩০-এর মধ্যে বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার লক্ষ্য ছোঁয়া সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও ভুয়া ও হাতুড়ে ডাক্তারদের সংখ্যা কমেনি এদেশে।
ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ডাক্তার বিষাণ বসুর মতে, ডাক্তারের সংখ্যা বাড়লেও ভারতবর্ষের 'বিশাল সংখ্যক মানুষ' আজও স্থানীয় হাতুড়ে ডাক্তারদের উপর নির্ভরশীল। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমার অভিজ্ঞতায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এই হাতুড়ে ডাক্তারদের সেখানকার মানুষ নিজেদের একজন ভাবেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে অনেকেই এই তথাকথিত 'হাতুড়ে' ডাক্তারদের উপর ভরসা করেন বেশি। আমাদের মতো অনেক ডাক্তারই 'শ্রেণিবিচ্যুত' হয়ে গ্রামের মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন না।"
অপর্যাপ্ত জনস্বাস্থ্য পরিষেবা
ডাক্তার পরাগ বরণ পাল দীর্ঘদিন জনস্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "আশির দশকে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার ডাক্তার নন কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে পারেন এমন একটি পদ তৈরি করে। পরে সেই পদ উঠে যায়। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আজও হাতুড়ে ডাক্তারের উপস্থিতি বাস্তব। তবে আশ্চর্যের বিষয় শহরাঞ্চলেও এখন জাল ডাক্তারদের সংখ্যা বেড়েছে। পিজি হাসপাতালের বা মেডিক্যাল কলেজের হাউস স্টাফের নামে এরা প্রতারণার ব্যবসা চালাচ্ছেন। এদের দ্রুত শনাক্ত করা প্রয়োজন।"
তবে প্রতারকদের সঙ্গে গ্রামের তথাকথিত 'হাতুড়ে' ডাক্তারদের আলাদা করতে চান ডাক্তার অভিজিৎ চৌধুরী। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "সুন্দরবন, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে সাধারণ ডাক্তাররা যেতে চান না। এই স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই সব অঞ্চলে ভরসা। স্বাভাবিক ভাবেই এদের ডাক্তারি জ্ঞান সীমিত এবং অনিয়ন্ত্রিত। কিন্তু এদের উপস্থিতি অস্বীকার করার অবকাশ নেই। আমরা চেষ্টা করেছিলাম যদি এদের ন্যূনতম শিক্ষা দিয়ে একটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য সেটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতো। এর জন্য প্রাথমিক ভাবে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। তা আমরা দেখতে পাই না।"