ভারতে কোভিড বাড়ছে, চিন্তাজনক নয়, মত চিকিৎসকদের
২৮ মে ২০২৫সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, চীন ও হংকংয়ের পর ভারতেও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন কেরালায়, সেখানে ৪৩০ জনের করোনা হয়েছে। মহারাষ্ট্রে হয়েছে ২১০ জনের, দিল্লিতে ১০২ জনের। গুজরাট, কর্ণাটক, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানেও মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন।
গত সোমবার মহারাষ্ট্রের থানেতে কল্যান-ডম্বিভলি পুরসভায় একজন নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার চিকিৎসা চলছিল। এছাড়া কর্ণাটক, রাজস্থান, কেরালা মিলিয়ে আরো ছয়জন মারা গেছেন। তবে যারা মারা গেছেন, তাদের করোনা ছাড়াও অন্য রোগ ছিল।
করোনা ভাইরাসের নতুন প্রজাতি
গবেষকরা জানিয়েছেন, এখন যে করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে তা এনবি ওয়ান ডটএইট ডট ওয়ান প্রজাতির। এই ভাইরাস আগের ভাইরাসের তুলনায় আরো দ্রুত ছড়াতে পারে। এছাড়া এনএফ ডট সেভেনও ছড়াচ্ছে।
ঘটনা হলো, এবার করোনার যে উপসর্গ, তা তীব্র নয়। জ্বর হচ্ছে, গলায় ব্যথা হচ্ছে, গলা খারাপ থাকছে, পেশীতে ব্যথা হচ্ছে, হালকা মাথাও ধরছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উপসর্গ তিন-চার দিন থাকলে করোনা পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। ভিড়ের জায়গায় গেলে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া উচিত।
রাজ্যে সতর্কতা
অতীতের কথা মাথায় রেখে রাজ্যগুলি এখন থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। কর্ণাটকের মন্ত্রী শরণপ্রকাশ সিং রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। স্কুলগুলিকে বলা হয়েছে, বাচ্চাদের করোনার উপসর্গ থাকলে তাদের যেন বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালে অক্সিজেন সহ বেড, ভেন্টিলেটর, ওষুধের স্টক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দিল্লি সরকারও হাসপাতালের পরিকাঠামো তৈরি রেখেছে। ওষুধ ও ভ্যাকসিনও তৈরি রাখা হয়েছে। মহারাষ্ট্র ও কেরালাও বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এর ডিজি রাজীব বহেল বলেছেন, ''করোনার এই প্রজাতি দ্রুত ছড়াতে পারে, কিন্তু এর ফলে মানুষ গুরুতরভাবে অসুস্থ হবেন, তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।''
দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এবার যে করোনা হচ্ছে, তা সর্দি-জ্বরের মতো. গুরুতর অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা কম।
ফুসফুসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পার্থ প্রতীম বোস ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, করোনার এই ভাইরাস আগের মতো ভয়ংকর নয়। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে, করোনা ভাইরাস থাকতে এসেছে। এটা শেষ হয়ে যায়নি।
পার্থপ্রতীম বোসের মতে, যাদের দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, তাদের এই ভাইরাস ক্ষতি করবে না। এখনো পর্যন্ত এই ভাইরাস গলার নিচে নামেনি। তবে তা ফুসফুসে যাবে না, এমন নিশ্চয়তা এখনই দেওয়া যাচ্ছে না। যাদের অন্য রোগ আছে, তারা যেন সাবধানে থাকেন।
তিনি জানিয়েছেন, এই করোনা ভাইরাস নিয়ে এখনো আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি পালন করা দরকার। হাত সাবান দিয়ে ধোয়া, জনবহুল জায়গায় গেলে মাস্ক ব্যবহার করা, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা দরকার। আর জ্বর বা সর্দি হলে তাতে ঘাবড়াবার কিছু নেই। এর ফলে করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধক শরীরে তৈরি হয়ে যাবে। ফলে আতঙ্ক নয়, ভয় নয়, একটু সাবধানতা জরুরি।