ভাঙা হলো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি, ক্ষুব্ধ ভক্তরা
কলকাতার লেক গার্ডেন্সে থাকতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুর ১৬ মাসের মধ্যে তার বাড়ি ভাঙা হলো। বহুতল হবে সেখানে।
ইতিহাসের সাক্ষী
ভারতীয় মার্গসংগীত থেকে চলচ্চিত্র জগতের নক্ষত্রেরা, একসময় অনেকের পদধুলিই পড়েছে এই বাড়িতে। বাংলা সংগীতের ইতিহাসের অনেক মুহূর্তের সাক্ষী থাকা বাড়িটি এখন ভেঙে ফেলা হয়েছে। একটা সময় ছিল, বাংলা সিনেমায় উত্তম ও সুচিত্রা জুড়ি, গানে হেমন্ত ও সন্ধ্যা। একের পর এক হিট গান আলোড়িত করেছে বাঙালিকে।
লেক গার্ডেন্স ডাকঘরের পাশে
লেক গার্ডেন্স পোস্ট অফিসের ঠিক পাশের রাস্তা ধরে একটু ভেতরে ঢুকলেই দেখা মিলবে এক ধ্বংসস্তুপের, যা একসময় গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও সন্ধ্যা স্বাধীন বাংলা বেতারে একের পর এক গান গেয়েছেন। গেয়েছেন 'বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে'-র মতো গান। সেই সন্ধ্যার অসংখ্য স্মৃতি-সব বাড়ি এখন অতীত হয়ে গেল।
স্বামী শ্যামল গুপ্তের তৈরি
১৯৬২ সাল নাগাদ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্বামী গীতিকার শ্যামল গুপ্ত তৈরি করান এই বাড়ি। আমৃত্যু সন্ধ্যা সেখানেই থেকেছেন। বাড়ির পরতে পরতে জড়িয়ে ছিল ইতিহাস।
সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ
শিল্পীর মৃত্যুর ১৬ মাসের মধ্যেই এমন সিদ্ধান্তে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে। বাংলা সংস্কৃতির স্মৃতি বিজড়িত এমন বাড়ি ভাঙার ঘটনা সমাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোড়ন ফেলেছে।
বড়ে গুলামের ছবি
বাড়ির ধ্বংসস্তূপে পড়ে থাকতে দেখা যায় কয়েকটি স্মারক-সহ উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খানের একটি ছবি। যা নিয়ে সমাজমাধ্যমে হইচই শুরু হয়। শিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তী সমাজমাধ্যমে আবেদন জানান ছবিটি সংগ্রহের জন্য। বড়ে গুলাম আলি খানের ছবিটি বর্তমানে কৌশিকীর ঠাকুরঘরে স্থান পেয়েছে।
মেয়ের দাবি
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও গীতিকার শ্যামল গুপ্তের কন্যা সৌমী সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, সচেতন ভাবেই তারা বাড়িটি প্রোমোটারের হাতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ব্যবহার করা মূল্যবান স্মৃতিচিহ্ন সবই যথাস্থানে সযত্নেই রাখা আছে। উপরে ছবিটি ভাঙা বাড়ির পাশের ফেলে রাখা আবর্জনায় থাকা একটি ফটোর।
ফেলে দেয়া স্কেচ
বাড়ির ধ্বংসস্তুপের মাঝে দেখা গেল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের একটি পেন্সিল স্কেচ। অনুমান করা যায় কোনও অনুরাগী এই ছবিটি এঁকে তাকে উপহার দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে যা ধুলোয় মিশেছে।
প্রতিবেশীর বক্তব্য
ঠিক পাশের বাড়ির প্রতিবেশী জানালেন, ''বহুকাল আগে এই জমিটি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্বামী শ্যামল গুপ্ত তার বাবার থেকেই কিনেছিলেন। তারপর সেখানে বাড়ি তৈরি করেন। এই বাড়িটি ভেঙে ফেলায় তিনিও ব্যথিত।''
ক্ষোভ বাড়ছে
বিশেষজ্ঞ থেকে সন্ধ্যা-ভক্ত ক্ষুব্ধ। এর আগেও কানন দেবীর বাসভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঐতিহ্য ধরে রাখার তাগিদ হারাচ্ছে বাঙালি, এমন অভিযোগ করছেন অনেকে। চলচ্চিত্র গবেষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেছেন, “সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে এই সংবাদ আমায় বিচলিত করে না, কারণ আমাদের দেশে ইতিহাসের কোনও দায় নেই। কেউ এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। বহু কৃতী মানুষের মরনোত্তর বাড়ি আগেও ভেঙে ফেলা হয়ছে।”