ভবিষ্যত যুদ্ধকৌশলে ড্রোন অন্যতম অস্ত্র ভারতের
৩ জুন ২০২৫সেইমতোই প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। ড্রোন, ইউএভি বা মানবহীন সশস্ত্র বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্রের উপর অসম্ভব জোর দেয়া হচ্ছে। কারণ, বিশেষজ্ঞদের মতে ভবিষ্যতের সংঘাত ও যুদ্ধের কথা ভেবে প্রস্তুতি নেওয়া খুবই জরুরি। শুধু তাই নয়, কগটেনিভ ওয়ারের বিষয়টিও মাথায় রেখে এগোচ্ছে ভারত।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের সময়ই দেখা গিয়েছিল দুই পক্ষ ড্রোন দিয়ে একে অপরের উপর আঘাত হানার চেষ্টা করছে। কাশ্মীর, রাজস্থান, গুজরাট সীমান্তে ওপার থেকে একের পর এক ড্রোন ভেসে এসেছে এবং ভারতের বিমান সুরক্ষা ব্যবস্থা সেগুলির মোকাবিলা করেছে। ভারতও ড্রোন ব্যবহার করেছে। ভারত নিজের সীমান্তের মধ্যে থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
সম্প্রতি ইউক্রেন রাশিয়ার ভিতরে গিয়ে ড্রোনের সাহায্যে হামলা করে ৪০টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে ড্রোন কী করতে পারে, সেই বিযয়টি খুব ভালো করে সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যত দিন যাবে, প্রযুক্তির উন্নয়ন হবে, ততই এই কম খরচের ড্রোন ও মানববিহীন বিমান অস্ত্র হিসাবে মারাত্মক জায়গায় পৌঁছে যাবে।
ভারতের অভিজ্ঞতা
এয়ার কমোডর রঞ্জন মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''ইউএভি ও ড্রোন আমরা অনেকদিন ধরে ব্যবহার করছি। ১৯৯৯ সালে আমরা তেল আভিভ থেকে ড্রোন এনেছি। ভবিষ্যতের যুদ্ধ ও সংঘাতের চরিত্র নিঃসন্দেহে বদলে যাবে। সেখানে ড্রোন, ইউএভি, বিভিন্ন ধরনের মিসাইল বড় ভূমিকা নেবে।''
তিনি জানিয়েছেন, ''সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে একশ ঘণ্টার সংঘাতে ড্রোন কতটা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের ব্যাক আপ ভালো থাকায় আমরা অধিকাংশ ড্রোন ডিফিউজ করতে পেরেছি। নিঃসন্দেহে বলা যায়, ড্রোন এখন সমরাস্ত্র হিসাবে থাকবে।''
অবসরপরাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত কয়েক বছরে ড্রোনের অসাধারণ উন্নতি হয়েছে। আগে তা ছোট ক্যাপাসিটিতে ব্যবহার করা যেত। এখন তার বদল হচ্ছে। অপারেশন সিঁদুরের ক্ষেত্রেও তার কার্যকারিতা দেখেছি। তবে আমার মনে হয়, চিরাচরিত ওয়ারফেয়ারের সঙ্গে ড্রোন, ইউএভি-র মতো বিষয়গুলি যুক্ত হবে। একে অন্যকে সাহায্য করবে। কোনোটাকেই বাতিল করা যাবে না। বরং দুটোই থাকবে।''
উৎপল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ''ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ড্রোন তৈরি হচ্ছে। খুব উন্নত মানের ড্রোন তৈরি হয়। ড্রোন টেকনলজি উন্নত হচ্ছে। ভারত পুরোদস্তুর প্রস্তুত।''
গরুঢ় এয়ারোস্পেস সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা অগ্নীশ্বর জয়প্রকাশ ডেকান হেরল্ডকে জানিয়েছেন, ''অপারেশন সিঁদুরের শিক্ষা হলো, ড্রোন সংস্থাগুলিকে বিস্ফোরক ও অস্ত্র নির্মাতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ড্রোন এখন আর নজরদারির অস্ত্র নয়। তারা বিস্ফোরক বহন করতে পারে, বোমা ফেলতে পারে, এক্সপ্লোসিভ ইঞ্জিনিয়ারিং করতে পারে। ভারতে নানা বিধিনিষেধ থাকার কারণে এই ধরনের পার্টনারশিপের ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে।''
পরশ ডিফেন্সের সিইও আশুতোষ বাহেটি ডেকান ক্রনিকলকে বলেছেন, ''আজ, কাল বা ভবিষ্যতে কোনো সংঘাত হলে ড্রোন ও কাউন্টার ড্রোন ওয়ারফেয়ার এখন পুরোভাগে থাকবে। এখন ড্রোন ৩০ কেজি পে লোড নিয়ে ৫৫ মিনিট উড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে তা ৬০ কিলোগ্রাম পেলোড নিয়ে উড়বে।''
রঞ্জন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ''সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ডিআরডিও অনেক জায়গায় ড্রোন বানাচ্ছে। মহাভারতের যুগে ঢাল তরোয়াল দিয়ে যুদ্ধ হতো। তারপর বন্দুক, কামান হলো প্রধান অস্ত্র। এরপর যুদ্ধবিমান এলো। এখন ড্রোন, ইউএভি, ক্ষেপণাস্ত্রর সময় এসেছে।''
খরচ কম
ড্রোন, ইউএভি-র আরেকটা বড় সুবিধার বিষয় হলো, এগুলি তৈরি করতে অনেক কম অর্থ লাগে এবং তার জন্য জটিল প্রযুক্তির দরকার হয় না। যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ-সহ উচ্চপ্রযুক্তির অস্ত্র খুবই দামি। তার তুলনায় ড্রোন অনেক সস্তা। ফলে প্রতিরক্ষাখাতে কম খরচ করে উপযুক্ত অস্ত্র হাতে পাওয়ার বিশাল সম্ভাবনা থাকছে।
উৎপল ভট্টাচার্য এবং রঞ্জন মুখোপাধ্যায় দুজনেই জানিয়েছেন, ''ড্রোনের খরচ অনেকটাই কম। তার কার্যকারিতাও অনস্বীকার্য। ফলে তার ব্যবহার বাড়বে।''
রঞ্জন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ''ভবিষ্যতে কগনেটিভ ওয়ারফেয়ার খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সরাসরি হাতিয়ার ব্যবহার না করেও কগনেটিভ ওয়ারের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘোর বিপাকে ফেলা সম্ভব।''