বিধ্বস্ত ইউক্রেনে যেমন কাটছে জীবন
কবে, কিভাবে শেষ হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জানা নেই কারো৷ অনেকেই আক্রান্ত এলাকা থেকে সরে গিয়েছেন৷ অনেকে ছেড়েছেন ইউক্রেন৷ কিন্তু অনেকেই বিধ্বস্ত ইউক্রেনেই মৃত্যুর আশঙ্কা মাথায় নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা৷
ধ্বংসপ্রাপ্ত দালান
গালিনা স্লেপকোর বয়স ৬৪ বছর৷ এই বয়সে ভিটেমাটি ছেড়ে কোথাও গিয়ে নতুন জীবন শুরু করাটাও তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷ রাশিয়ার দখল করে নেয়া দনেৎস্ক অঞ্চলে তার এই বাড়িটির এক পাশের দেয়াল রাশিয়ার মর্টার শেলের আঘাতে ধসে গেছে৷ এই অবস্থাতেই তাকে কাটাতে হয়েছে শীতকাল৷
যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে
পুরো ইউক্রেন যুদ্ধটাই যেন থেমে আছে বাখমুতে৷ কৌশলগতভাবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মর্যাদার লড়াইয়ের কারণে এই এলাকা দখলে নিতে চায় দুই পক্ষই৷ বাখমুতের চাসিভ ইয়ার গ্রামে এখনও হাতেগোণা কয়েকজন বাসিন্দা রয়ে গেছেন জীবনের ঝুঁকির তোয়াক্কা না করেই৷ তাদের একজনকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷
মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ
যেকোনো সময় পালটে যেতে পারে পরিস্থিতি৷ দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুতে এখন চলছে চূড়ান্ত লড়াই৷ দুই পক্ষের সেনারাই দখল-পুনর্দখলের চেষ্টায় রত৷ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলের সুপারমার্কেটে এসে পড়েছে একটি মর্টার শেল৷ আগে এক হামলায় আহত এক নারীকে দেখা যাচ্ছে কান্না করতে৷ বাখমুতে এখন প্রতিটি মুহূর্তই জীবন-মরণের লড়াই৷
সরবরাহ সংকট
যুদ্ধের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকট দেখা দিয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ ও জলের মতো অতিপ্রয়োজনীয় সেবাও এখন বিলাসিতা৷ হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, তা দিয়েই প্রয়োজন মিটিয়ে কোনোরকমে টিকে থাকার লড়াই করছেন বাসিন্দারা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বিধ্বস্ত সামরিক বিমান থেকে ধাতব দ্রব্য নিয়ে যাচ্ছেন দুজন৷ সেটিকেই কোনো কাজে লাগানোর চিন্তা রয়েছে তাদের৷
একটি রক্তাক্ত চশমা
এই ছবিটিই অনেক কথা বলে দেয়৷ কস্তিয়ানতিনিভকা নামের একটি আবাসিক এলাকায় ভয়াবহ বোমা হামলায় মারা যান অনেকেই৷ কেউ ছিলেন বাসায়, কেউ বাজারে, কেউ রাস্তায়৷ হয়তো একজন বাসিন্দার রক্তমাখা চশমা এখনও পড়ে রয়েছে মাঠের পাশে৷ পৃথিবীকে আর দেখা হবে না তার৷
জ্বালানি সংকট
ঠিক পেছনেই একটি গাড়ি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে৷ এখন বাখমুতের রাস্তায় গাড়ি চালানো অনেক কারণেই আঁতকে ওঠার কারণ৷ একে তো জ্বালানি জোগাড় করাই কষ্ট ও ব্যয়সাধ্য৷ অন্যদিকে, যেকোনো সময় হতে পারে মর্টার বা বিমান হামলা৷ ফলে রাস্তায় বের হয়ে কেউই নিশ্চিত টার্গেটে পরিণত হতে চান না৷ ফলে দোকানে যেতেও বেশিরভাগের ভরসাই নিজের পা, বড়জোর বাইসাইকেল৷
ত্রাণ সহায়তা
প্রায় পুরো অঞ্চলই ধ্বংসপ্রায়৷ ফলে বাখমুতের সকল অফিস-আদালত, দোকানপাট প্রায় বন্ধ৷ যেসব গুটিকয়েক দোকান খোলা রয়েছে, অনেকেই সেখান থেকে জিনিস কেনার সামর্থ্য নেই৷ ফলে যেসব বাসিন্দা এখনও বাখমুতে রয়ে গেছেন তাদের অনেকের নির্ভর করতে হচ্ছে ত্রাণের ওপর৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ঝুঁকি নিয়েই যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
জীবন-মৃত্যুর দোলাচল
এই ছবিটি খারকিভের৷ রাশিয়া দখলে নেয়ার পর ইউক্রেনের সেনারা আবার এই এলাকা পুনর্দখলে নিয়েছে৷ কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটি দখলে মরিয়া রুশবাহিনী৷ ফলে এখনও প্রায়ই বোমাবর্ষণ চলছে এখানে৷ রুশ মিসাইলে ধ্বংস হওয়া একটি বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক নারী৷ মনে ভয়, যেকোনো মুহূর্তে আবারও হতে পারে নির্বিচার হামলা৷
প্রিয়জন হারানোর বেদনা
একসঙ্গেই থাকা, একসঙ্গেই কাজ৷ কদিন আগেও বন্ধুর চেয়েও বেশি ছিলেন ইভান সোরোকিনের সহকর্মী৷ কর্মরত অবস্থাতেই বিমান হামলায় মারা যান এই গাড়ি মেরামতকর্মী৷ বন্ধুকে শেষ বিদায় জানানোর আগে তার মরদেহ আনা হয়েছে তার কাজের জায়গাতেই৷
এডিকে/এসিবি (রয়টার্স)