বিদেশি পণ্যের উপর মাসুল কমাতে ভারতের অসুবিধা কোথায়?
১২ মার্চ ২০২৫ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত শনিবার দেশে ফিরেছেন। তিনি মাসুল কমানো নিয়ে মার্কিন আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এবার ভারতে এসে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সঙ্গে মাসুল নিয়ে কথা বলবেন তিনি।
লোকসভায় একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ বলেছেন, ''সরকার অ্যামেরিকার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হলো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানো এবং তা দুই দেশের কাছে সুবিধাজনক ও ন্যায্য করা।''
জিতিন প্রসাদ জানিয়েছেন, ''অ্যামেরিকা এখনই ভারতের বিরুদ্ধে সমহারে মাসুল চালু করেনি। আলোচনা চলছে। সেখানে মাসুল কম করা, বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানো-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা চলছে। দুই দেশই ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যেতে চায়।''
গত সোমবার বাণিজ্য সচিব সুনীল বারতোয়াল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিকে বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে মাসুল নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত মার্কিন পণ্যের উপর মাসুল অনেকখানি কমাতে রাজি হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সুনীল এই মন্তব্য করেছেন।
বরতোয়ালও বলেছেন, দুই দেশই চায় এমন একটা বাণিজ্য চুক্তি হোক, যাতে দুই দেশের স্বার্থ অক্ষুন্ন থাকবে।
অ্যামেরিকার বক্তব্য
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, ভারতকে তাদের কৃষিক্ষেত্র মার্কিন পণ্যের জন্য খুলে দিতে হবে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিনা লিভিট মঙ্গলবার বলেছেন, ''ভারত তো অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে ১৫০ শতাংশ মাসুল বসিয়ে রেখেছে। কৃষিক্ষেত্রের জিনিসের উপর তারা একশ শতাংশ মাসুল বসিয়ে রেখেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন, সমহারে মাসুল চালু হওয়া উচিত। এই প্রথম একজন প্রেসিডেন্ট মার্কিন ব্যবসায়ী ও কর্মীদের স্বার্থে কাজ করছেন।''
সমস্যার সমাধান কোন পথে?
দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার দিল্লির প্রাক্তন বিজনেস এডিটর এবং বর্তমানে দ্য সেক্রেটারিয়েটের এক্সিকিউটিভ এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''অ্যামেরিকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাসুল অনেকটা কমাবার জন্য আমাদের উপর চাপ দিচ্ছে। ভারত কিছু ক্ষেত্রে কমাতে রাজি হতেই পারে। তবে মূল সমস্যা দেখা দিয়েছে কৃষিক্ষেত্র নিয়ে। কৃষিক্ষেত্রে মাসুল বেশি কমিয়ে দিলে ভারতীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা অ্যামেরিকার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারবেন না। তাই ভারত কৃষিক্ষেত্রে মাসুল খুব বেশি কমাতে চাইছে না।''
জয়ন্ত মনে করেন, ''এই চাপ এবং পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা আরো একটু সময় ধরে চলতে পারে। ইস্পাতের মতো কিছু ক্ষেত্রে অ্যামেরিকা উচ্চ হারে ভারতের উপর মাসুল বসালে আমাদের খুব একটা কিছু আসে যায় না। কিন্তু কৃষিক্ষেত্রে যায়। কৃষিতে বাছাই করা কিছু ক্ষেত্রে ভারত হয়ত মাসুল কমাবে। কিন্তু সবক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।''
সূত্র উদ্ধৃত করে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ভারত কিছু ডাল, মটরশুটির ক্ষেত্রে এবং দামী মোটরসাইকেল, বারবান, কেনটাকির মতো হুইস্কির উপরেও মাসুল কমাতে পারে।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''কৃষি-সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভারত চড়া হারে মাসুল বসিয়েছে। স্টেট ব্যাংকের হিসাব বলছে, ভারত যদি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মাসুল কম করে, তাহলে তাদের রপ্তানি তিন থেকে সাড়ে তিন শতাংশ কমে যাবে। তাছাড়া মাসুল কম করার ফলে অন্য দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য কতটা প্রভাবিত হবে, সেটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। তাই ভারতকে এত সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। নিজেদের বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে, নিজেদের স্বার্থ বজায় রেখে মাসুল কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।''
জিএইচ/এসজি