বাংলাদেশ: বেশিরভাগ শিল্পকারখানা দিয়েছে বোনাস, বেতন ঈদের পর
৫ জুন ২০২৫দেশের সব ধরনের শিল্প কারখানা হিসেব করলে মে মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৩৯.৪৪ শতাংশ কারখানায়৷ আর বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে ৮০.৬৫ ভাগ কারখানায়৷ তৈরি পোশাক কারখানার ৮৩.৬৯ শতাংশ বোনাস পরিশোধ করেছে৷ বেতন পরিশোধ করেছে ৩৬.৩৯ শতাংশ কারখানা৷
বাংলাদেশে বিজএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বেপজা, পাটকল এবং অন্যান্য কারখানা মিলিয়ে ৯ হাজার ৬৮৩টি শিল্প কারখানার হিসাব করা হয়৷ আর এরমধ্যে তৈরি পোশক কারখানা দুই হাজার ৮৮৮টি৷
সরকার বেতন বোনাস পরিশোধের সুবিধার জন্য শিল্পঞ্চলসহ বিশেষ বিশেষ এলাকায় বৃহস্পতিবারও কিছু ব্যাংক খোলা রেখেছে৷
ঢাকা বিভাগের ১১টি পোশাক কারখানাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে তারা শেষ পর্যন্ত বেতন বোনাস দিতে পারবে না৷ শিল্প পুলিশ ও শ্রম মন্ত্রণালয় মালিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসপি এ কে এম জহিরুল ইসলাম৷
গত ২৮ মে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) ও আরএমজি-বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (আরএমজি-বিষয়ক টিসিসি) সভা হয়৷ ওই সভায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএর আওতাধীন কারখানা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং চামড়া প্রক্রিয়াকরণ ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ছিলেন৷ বৈঠকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও বোনাস ৩১ মের মধ্যে এবং মে মাসের বেতন ৩ জুনের মধ্যে পরিশোধের কথা ছিলো৷
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যেসব কারখানা, প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবে সেসব কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে৷
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমিক বান্ধব হবে৷ কিন্তু তারাও দেখছি মালিকদের পক্ষ নিচ্ছে৷ সভায় বেতন ও বোনাসের তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না৷ বকেয়া বেতন তো দূরের কথা৷ যারা মানছে না তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয় না৷ ফলে এবাারও অর্ধেকের কম পোশাক কারখানায় বেতন দেয়া হয়নি৷ আর সব কারখানা বোনাসও দেয়নি৷ শ্রমিকদের বড় একটি অংশকে এই ঈদে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হবে৷ গত ঈদুল ফিতরেও একই পরিস্থিতি ছিলো৷''
গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসপি এ কে এম জহিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাজীপুর এলাকায় ৪০ ভাগ কারখানায় বেতন হয়েছে৷ বোনাস হয়েছে ৮০ শতাংশ কারখানায়৷ তিনি বলেন, ‘‘আশা করি আজ (বৃহস্পতিবার) আরো কিছু কারখানায় বেতন বোনাস দেয়া হবে৷ কিন্তু সবাই পারবে না৷ আমরা চেষ্টা করছি, মালিকদের সাথে কথা বলছি৷ পোশাক কারখানাগুলোতে এখন ২০ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করেন৷ তবে বিজিএমইএর সদস্য নয় এমন অনেক পোশাক কারখানা আছে তাদের অবস্থা কি সেই চিত্র পাওয়া কঠিন৷''
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ রুবেল অবশ্য জানালেন বেশিরভাগ কারখানায় ৭ তারিখে বেতন দেয়া হয় এবং এ বছর ঈদ পড়েছে ৭ তারিখে৷ তাই ঈদের পরে অনেকে বেতন পরিশোধ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷ বলেন, ‘‘আসলে বোনাস প্রায় সব কারখানা দিয়েছে৷ আর বেতন অনেকে ৭ তারিখে দেয়৷ ফলে সেই বিবেচনায় অনেকে ঈদের পরে বেতন দেবে৷ তবে কিছু ইস্যু আছে৷ লে-অফ গার্মেন্টস আছে৷ দুইটি গার্মেন্টেস-এর মাালিক পালিয়ে গেছে৷ এইরকম চার-পাঁচটা কারখানা আছে৷ ওই সব কারখানায় সমস্যা আছে৷ যেখানে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয় আছে সেখানে সরকার নেবে৷''
বেতন বোনাস পরিশোধ পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘রপ্তানি বাড়া মানে আমাদের আয় বেড়েছে এমনটা নয়৷ অনেকেই লোকসান দিয়ে চালাচ্ছেন৷ আসলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ সুবিধা, ব্যাংক ঋণ ও পলিসি সাপোর্ট প্রয়োজন৷''
এদিকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দপ্তর ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে বেতন ঈদের পরে দেয়া হচ্ছে কীনা সেটা তারা মনিটরিং করছে৷ তারা চেষ্টা করছে যাতে যতদূর সম্ভব সমস্যার সমাধান করা যায়৷