বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি
চীনের পরই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ভারতের কাছ থেকে৷ ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি সেই তুলনায় অনেক কম হলেও চলতি অর্থবছরে তা বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক টানাপোড়েনে সেই ধারাবাহিকতা কি ধরে রাখা যাবে?
ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ (জুলাই-জুন) অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ১৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে৷ এটি আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় নয় শতাংশ কম৷ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৭১ কোটি ডলার৷ গত বছরের জুলাই থেকে এই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ১৫১.৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে৷ আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩১.৭ কোটি ডলার৷ ১০ মাসে প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ৷
বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি
বাংলাদেশ ভারত থেকে যে পরিমাণ রপ্তানি করে, তার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি আমদানি করে৷ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৯৪৯ কোটি ডলার৷ বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে, এটি তার ১৪ দশমিক তিন শতাংশ৷ ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ অর্থবছরে (এপ্রিল-মার্চ) বাংলাদেশে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১১০৬ কোটি ডলার৷
বাংলাদেশের ১০১২টি, ভারতের ৫৬২০টি
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির মতো বিশাল ব্যবধান রয়েছে পণ্যের পসরাতেও৷ বাণিজ্যে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের পণ্যের সম্ভার পাঁচগুণ বেশি৷ ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ইন্ডিয়া ব্র্যান্ড ইকুইটি ফাউন্ডেশন’ জানাচ্ছে ভারত বাংলাদেশ থেকে ২০২৪ অর্থবছরে ১০১২ ধরনের পণ্য আমদানি করেছে৷ অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারত রপ্তানি করেছে ৫ হাজার ৬২০ রকমের পণ্য৷
বাংলাদেশের পোশাক, ভারতের তুলা
বাংলাদেশের প্রধাণ রপ্তানিপণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, মাছ, হোম টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য৷ তবে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৪ কোটি ডলার৷ ভারত থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আমদানি করে তুলা৷ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তুলা আমদানির পরিমাণ ছিল ২৩৬.৮ কোটি ডলার, যা মোট আমদানির এক চতুর্থাংশ৷ এছাড়াও আছে খনিজ, পশুখাদ্য, পরমাণু রিয়্যাক্টর, বয়লার ও মেশিনারি, সবজি ইত্যাদিও৷
অভ্যুত্থানের পরের চিত্র
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের পরে দুই দেশের বাণিজ্য তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি৷ গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে ভারত বাংলাদেশে ৬৮২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের একই সময়ে ছিল ৬৬৯ কোটি ডলার৷ অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে গত আগস্ট-ফেব্রুয়ারি সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ১২২ কোটি ডলার, যা আগের একই সময়ে ছিল ১০৫ কোটি ডলার৷
দুই দেশের ট্রানজিট সুবিধা
দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী, এক দেশ আরেক দেশের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য ট্রানজিটের সুবিধা পাবে৷৷ ২০১৬ সালে আশুগঞ্জ নৌ বন্দর দিয়ে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয় বাংলাদেশ৷ ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনে অনুমতি দেয়া হয়৷ ২০২০ সালে ভারতের সমুদ্র এবং বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে বাণিজ্যের সুবিধা দেয় দিল্লি৷
তৃতীয় দেশের সুবিধা বাতিল ভারতের
২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল ভারত৷ বলা হয়েছিল, ভারতের সমুদ্র এবং বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে বাংলাদেশ৷ গত ৮ এপ্রিল সেই সুযোগ বাতিল করে ভারত৷ তবে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই নিয়ম চালু হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
দুই দেশের পাল্টাপাল্টি
দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ চারটি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায়৷ এরপর ভারত বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্যের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা স্থগিত করে৷ ১৭ মে ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক, কৃষি-প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ তবে বাংলাদেশ এই বিষয়ে পাল্টা কোনো পদক্ষেপ নেবে না বলে জানিয়েছে৷
এফএস/এসিবি (বাংলাদেশ ব্যাংক, ইপিবি, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ডেইলি স্টার)