বলাগড়ে তৃণমূল বিধায়ক ও যুব নেত্রীর বিরোধ, ভাঙচুর, র্যাফ
তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ নেতাদের মধ্যে প্রবল ঝামেলা শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই হুগলির বলাগড়ে বিধায়ক বনাম যুব নেত্রী সংঘাত চরমে।
বিধায়কের অফিস ভাঙচুর
হুগলির বলাগড়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল ঝামেলা শুরু হয়েছে। বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর সঙ্গে যুব নেত্রী রুনা খাতুনের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। মনোরঞ্জন ব্যাপারী সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে অভিযোগ করেছেন, রুনা খাতুন লোক পাঠিয়ে তার অফিসঘর ভাঙচুর করেছেন।
বিধায়ক বললেন, 'ফুলন দেবী'
নাম না করে তৃণমূল যুবনেত্রী তথা বলাগড়ের জেলা পরিষদের সদস্য রুনা খাতুনকে ‘ফুলন দেবী’ বলে বুধবার সকালে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মনোরঞ্জন। এই আক্রমণের পরে পাল্টা সুর চড়িয়েছিলেন রুনাও। দুইজনের ঝগড়ার জেরে বলাগড় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
থানায় অভিযোগ রুনার
এরপর হুগলির বলাগড়-পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠতে থাকে। স্থানীয় বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর শব্দবন্ধ ব্যবহার করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে থানায় অভিযোগ করেন বলাগড়ের যুব তৃণমূল নেত্রী তথা জেলা পরিষদ সদস্য রুনা খাতুন। রুনার অভিযোগ, ব্যাপারী তাঁর নামে আপত্তিকর শব্দবন্ধ ব্যবহার করে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। পরে বিধায়ক সেই পোস্ট মুছে দিলেও তার স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়।
খেলা জমে যাওয়ার বার্তা
রাজনৈতিক এই চাপানউতোরের মধ্যেই বুধবার রাতে মনোরঞ্জনের করা নতুন একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। সেই ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ''আমি এখন কলকাতায়। খবর পাওয়া গিয়েছে রুনা খাতুন না কি তাঁর দলবল পাঠিয়ে আমার বিধায়ক কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। এ বার আমার পাল্টা দেয়ার সময় এসেছে। আসছি আমি বলাগড়ে। এ বার খেলা জমে যাবে।''
বিদায়কের কর্য়ালয়ের গেট ভাঙা
তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর দফতর ভাঙচুর এবং তাঁর বিরুদ্ধে দলেরই নেত্রী রুমা খাতুনের থানায় অভিযোগ দায়ের ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় হুগলির বলাগড়ে। সেই আবহে এলাকায় নামে পুলিশ এবং র্যাফ নামানো হয়। শনিবারও প্রচুর পুলিশ এলাকায় টহল দিয়েছেন।
রুট মার্চে ওসি
বৃহস্পতিবার দুপুরে হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি দেবীদয়াল কুণ্ডু, সিআই (মগরা) শ্যামল চক্রবর্তী এবং বলাগড় থানার ওসি রাজকিরণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন ওই রুট মার্চে। পুলিশ এবং র্যাফের বাহিনী জিরাট হাসিমপুর, হসপিটাল রোড,আহমেদপুর হয়ে বিরাট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রুট মার্চ করেছে।
উত্তেজনা বাড়ছে
মনোরঞ্জন ব্যাপারীর অভিযোগ রুনাই দলবল দিয়ে তার অফিস ভাঙচুর করায়। এই ব্যাপারে রুনাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ব্যাপারী নিজেই এসব করিয়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে উত্তেজনা বাড়ছে বলাগড়ে।
'ভুল হয়েছে বুঝে মুছে দিই'
বৃহস্পতিবার সকালে যখন যুব তৃণমূল নেত্রী রুনা বলাগড় থানায় ব্যাপারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করছেন, প্রায় একই সময় বিধায়ক সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। তাতে তিনি ‘‘আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল’ বলে দাবি করে লিখেছেন, ‘সেই পোস্ট লিখবার দশ কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে বুঝতে পারি, একটা মস্ত বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। সাথে সাথে সেটা মুছে দিই।’’
'মনটাকে বড় করুন'
রুনা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''যারা উঁচু পদে আছেন, তারা মনটাকে বড় করুন। একটু উদার হন। যদি জনসেবা উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তো তার স্বার্থহানি হওয়ার কথা নয়। পরিষেবার মধ্যে স্বার্থ থাকে না। তার স্বার্থ অন্য। এর পিছনে য়ারা মদত দিচ্ছেন, তাদের নিশ্চয়ই স্বার্থ আছে। আমি জেনে বা না জেনে এই স্বার্থের বলয়ে হয়ত ঢিল ছুঁড়ে দিয়েছি। ঢিলটা ঠিক জায়গায় লেগে গেছে। আর উনি ঢিল নয়, কাদা ছুঁড়েছেন।''