ফাঁকা জমি নিলামে কমবে মশার চাষ?
২৭ অক্টোবর ২০২২এই মৌসমে রাজ্যে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার নিয়েছে। কোভিডের প্রকোপ অনেকটাই কমে আসার পর এখন চোখ রাঙাচ্ছে মশাবাহিত রোগ। ডেঙ্গুতে ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত। মৃতের সংখ্যা রোজই বাড়ছে। শিশু ও কমবয়েসিদেরও মৃত্যু হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে এক গৃহবধূ মারা গিয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালে। সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখিয়ে মৃত্যু হয়েছে তার। উৎসবের মধ্যে আতঙ্কের চেহারা নিয়েছে ডেঙ্গু। কলকাতার সঙ্গে জেলাতেও বাড়ছে রোগের প্রকোপ।
ডেঙ্গু নিয়ে বছরের একটা বড় সময় প্রচার চলে। পুর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও মশার বংশবিস্তার রোখা যায় না। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার নিয়েছিল। তার পরও যে মশা রোধে কাজ খুব একটা এগোয়নি, তা দেখাচ্ছে চলতি বছর। ২০২০ ও ২০২১ সালে অতিমারির জেরে ডেঙ্গু আড়ালে ছিল। কিন্তু এ বছর আবার স্বমহিমায় ফিরেছে মশাবাহিত রোগ।
সাধারণভাবে যত্রতত্র জমে থাকা জলে মশা বংশবিস্তার করে। পরিত্যক্ত সামগ্রী থেকে আবর্জনার মধ্যে জমা জলে বাড়ে মশার লার্ভা। যেখানে-সেখানে ময়লা কিংবা ব্যবহৃত পাত্র ফেলে দেওয়ার ফলে মশার বংশবিস্তারের কাজ সহজ হয়ে যায়। পুরসভা-পঞ্চায়েতের প্রচার কিংবা মশানাশক স্প্রে বা পাউডার দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় না। কিন্তু শুধু সাধারণ মানুষের বাড়িঘর নয়, অব্যবহৃত সরকারি জমিতে জমা জলকেও দায়ী করা হচ্ছে এ জন্য।
বৃহত্তর কলকাতার অধীন বিধাননগর পুরসভা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি রাজ্যের হাতে থাকা এমন জমি চিহ্নিত করেছে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিধাননগর পুর এলাকায় এক হাজার ১০০-র বেশি জমি আছে যা রাজ্যের নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধীন। এই জমির একটা বড় অংশে গড়ে উঠেছে ঝুপড়ি। কোথাও জমে আছে জঞ্জাল। কোথাও হয়েছে অস্থায়ী নির্মাণ। তাকে কেন্দ্র করে চলছে নানা ধরনের ব্যবসা। এ সব জায়গায় নজরদারির অভাবে জল জমে থাকছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুবর্ণ গোস্বামী নজরদারির কঠোর করার উপর জোর দিচ্ছেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "পুর বা পঞ্চায়েত এলাকায় যদি কোনো ঘেরা, তালা দেওয়া জায়গা থাকে যেখানে মশা জন্মের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেখানে তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশের অধিকার রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। পরিস্থিতি বিশেষে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা যার, তাকে জরিমানাও করতে পারে পুরসভা বা পঞ্চায়েত। নইলে মশার বিস্তার রোধ করা যাবে না।”
সম্প্রতি বিধাননগরের পুর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়েছে নগরোন্নয়ন দপ্তরের। সংবাদে প্রকাশ, সেখানে পুরসভা অনুরোধ করেছে, দপ্তর যেন বিধাননগরের অধীন তাদের জমি পরিচ্ছন্ন রাখে। এ সব জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এখানে দেদার আবর্জনা ফেলা হয়। বহু বছর ধরেই এই সমস্যা চলে আসছে। পরিস্থিতি বদল করা সম্ভব হয়নি।
বিধাননগরের এই এলাকায় জনবসতি থাকায় মশার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, "ফাঁকা জমি থেকেই মশার উপদ্রব বাড়ছে, সেটা আমাদের নজরে রয়েছে। যে সব জমির ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা নেই, সেগুলি নিলাম করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
বিধাননগরের মতো কলকাতা পুরসভার অভিজ্ঞতা একই। তাদের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, পুর এলাকার ৮৮ শতাংশ ফাঁকা জমিতেই মশার লার্ভা মিলেছে। এই এলাকায় চার
হাজারের বেশি ফাঁকা বা পতিত জমি রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ জমিতে নিয়মিত নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামো পুরসভার হাতে নেই। তাই মানুষের সচেতনতাই ভরসা। ডা. গোস্বামী বলেন, "বিশ্বের উন্নত দেশেও মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কিন্তু তা থেকে এখনো খুব একটা আশাপ্রদ ফল মেলেনি। তাই নাগরিকদের সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোখা যাবে না।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নও মশার বৃদ্ধিতে দায়ী। তার উপর সাধারণ মানুষই যদি তার বিস্তারের পথ করে দেয়, তা হলে মহামারি ঠেকাবে কে?