প্রবল বন্যা এবং ভূমিধসে উত্তর-পূর্ব ভারতে তিন দিনে মৃত ৩০
২ জুন ২০২৫বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। গত চারদিনে প্রবল বৃষ্টিপাতে কার্যত ভেসে গেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড-সহ একাধিক রাজ্য।উত্তর-পূর্ব ভারতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গত তিনদিনে ৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে আসামে ১০ জন, অরুণাচল প্রদেশে ৯ জন এবং মিজোরামে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সংবাদমাধঅযমের দাবি ইতিমধ্যেই ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের তরফে বলা হয়েছে, গত চারদিন উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে এবং এর ফলে একের পর এক ভূমিধস ঘটেছে। শুক্রবার এবং শনিবার আসামের কামরূপ-মেট্রো জেলায় ভূমিধসের ফলে ৫ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ছিলেন একই পরিবারের তিন ব্যক্তি। শনিবার মিজোরামের লুংলে এলাকায় একই পরিবারের ৫ ব্যক্তি মাটিচাপা পড়েন পরে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনী, এনডিআরএফ।
অরুণাচল প্রদেশের বানা-সেপ্পা এলাকায় শনিবার রাতে একটি চলন্ত গাড়ি ভূমিধসের কবলে পড়ে। গাড়িটি খাদে গড়িয়ে পড়ে যায়। সেনাবাহিনী পরের দিন সেখান থেকে সাত ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। আপার সুবনসিরি জেলার জিরো-কামলে এলাকায় দুই শ্রমিক এক ভূমিধসে মাটিচাপা পড়েন এবং প্রায় ২৪ ঘন্টা পর তাদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলস্ জেলায় ভূমিধসে একই পরিবারের দুই ব্যক্তি প্রাণ হারান। এর মধ্যে ছিলেন ৭৫ বছরের এক ব্যক্তি। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে এবং সেনাবাহিনী রবিবার তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে। একই দিনে রি-ভই জেলায় আরেকটি ভূমিধসের ঘটনা ঘটে এবং সেখানে এক পরিবারের চার ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ছিল সাত বছরের একটি শিশু। মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা জানিয়েছেন, সুরক্ষা বাহিনীকে সারাক্ষণ তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। জেলাস্তরের দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগ লাগাতার সাধারণ মানুষকে সতর্ক করছে।
উত্তর-পূর্বের মধ্যে সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে মেঘালয় রাজ্যে। এরপরই রয়েছে আসাম। সেখানে শিলচর শহরে শনিবার রাতে ৪১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় যা ১৩২ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আসামের দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগ, এএসডিএমএ জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র এবং বরাক-সহ রাজ্যের প্রধান নদীগুলো বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। রাজ্যের ১৯টি জেলায় তিন লাখ ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন এবং অনেকেই আশ্রয় শিবিরে উঠেছেন। বন্যার ফলে গত তিনদিনে ৫ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন এবং তাদের পরিবারকে চার লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি আসাম, মেঘালয় এবং মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন। কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। রবিবার আসাম এবং অরুণাচল প্রদেশ সীমান্ত এলাকায় আটকে পড়া ১৪ জন মানুষকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। তারা বিশেষ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে এদের উদ্ধার করে অসমের ডিব্রুগড় জেলায় নিয়ে যায়। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী এখনো পর্যন্ত পাঁচশ-রও বেশি মানুষকে উদ্ধার করেছে।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী ৪ জুন পর্যন্ত উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। তবে রবিবার দুপুর থেকে তুলনামূলকভাবে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্যালয় এবং সরকারি কার্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিলচরের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আগে থেকে ঘোষণা করা কয়েকটি পরীক্ষা বাতিল করেছে।
উত্তরপূর্ব ভারতের প্রায় সবকটি রাজ্য প্রতিবছর মে মাস থেকে জুলাই মাসের মধ্যে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা এবং ভূমিধসের মুখোমুখি হয়। ২০২২ সালের বন্যায় আসামে ২০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।