প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস কি পদত্যাগ করতে চান?
২৩ মে ২০২৫দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। যদি ঠিকভাবে কাজ করতে না পারেন, তাহলে প্রধান উপদেষ্টার পদে থেকে কী লাভ, সে কথাও বলেছেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার দৈনিক প্রথম আলো৷
বিবিসি বাংলাকে নাহিদ
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নাহিদ ইসলাম। সন্ধ্যা সাতটার পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যান গণ অভ্যুত্থানের নেতাদের দল এনসিপির এই আহ্বায়ক।
তাদের মধ্যে আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কথা হয়। এনসিপি-র যুগ্ম সদস্য সচিবমুশফিক উস সালেহীন বলেন, তারা ‘চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে'আলোচনা করেছেন।পরে রাতে এই বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তুর বিষয়ে নাহিদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি কাজ করতে এসেছেন, কাজ করার মতো পরিস্থিতি না থাকলে তিনি পদত্যাগের বিষয়টি ভাববেন।”
মুশফিক বলেন, "সেসময় নাহিদ এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, জুলাইয়ের ত্যাগের প্রতি দায়বদ্ধতা, তার উপরে পুরো দেশের মানুষের আস্থা এবং জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে ভেবে দেখার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।”
বিবিসি বাংলাকে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, "দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারের তো পদত্যাগের একটা খবর আমরা আজকে সকাল থেকে শুনছি। তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সাথে দেখা করতে গেছিলাম। প্রধান উপদেষ্টা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।"
নাহিদ জানান, " স্যার বলছেন আমি যদি কাজ করতে না পারি... যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলা একটা গণ অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার.....। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে। আমি তো এভাবে কাজ করতে পারবো না। যদি রাজনৈতিক দলগুলা তোমরা সবাই একটা জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারো "
কেন পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ?
একাধিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে প্রথম আলো জানাচ্ছে, উপদেষ্টাদের সঙ্গে অনির্ধারিত আলোচনায় ঢাকায় প্রতিদিন সড়ক আটকে আন্দোলন, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া, রাষ্ট্রীয় কাজে নানা পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারছেন না। সংস্কারের বিষয়েও এখনো তেমন কিছু হয়নি। তাহলে তিনি কেন থাকবেন—এমন প্রশ্নও আলোচনায় আনেন তিনি।
একটা পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা তাদের বলেন, তারা যেন আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। কারণ, তিনি চলে যেতে চান। বর্তমানে যে পরিস্থিতি আছে তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা নিয়েও তিনি সংশয়ে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে ব্যালট ছিনতাইয়ে মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশ–প্রশাসন তা ঠেকাতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। অন্যদিকে ভালো নির্বাচন করতে না পারলে মানুষ তাকে দায়ী করবে বলেও আলোচনায় উল্লেখ করেন তিনি। এমনকী বিভিন্ন পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে তুলে ধরার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। একপর্যায়ে তার ভাষণের একটি খসড়াও তৈরি করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ভাষণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরে আবার আলোচনা হতে পারে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। এরপর সাড়ে নয় মাস কেটে গেছে।
এনসিপি ও বিএনপি-র মধ্যে বিরোধ
সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানো নিয়ে এনসিপি ও বিএনপি-র মধ্যে বিরোধ তীব্র হয়েছে। দুই দলই রাস্তায় নেমেছে। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। বিএনপি উপদেষ্টা পদ থেকে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ চেয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের নাম। এনসিপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা ‘বিএনপিপন্থি' উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সালেহউদ্দিন আহমেদ ও ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে।
সেনাপ্রধান ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছেন। তিনি নির্বাচিত সরকার থাকার গুরুত্বের কথা বলেছেন।
তাছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েকমাসে বিভিন্ন দাবিতে সরকারি কর্মী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন।
জিএইচ/এসজি(প্রথম আলো)