প্রতিবেদনে গাজায় দুর্ভিক্ষের চিত্র, ‘মিথ্যা’ দাবি ইসরায়েলের
২৩ আগস্ট ২০২৫জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি মূল্যায়ন বলা হয়েছে, অনাহার, দারিদ্র্য এবং মৃত্যু গাজাকে গ্রাস করেছে৷ ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, গাজার কিছু অংশ এখন দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷
বলা হয়েছে, পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ভয়াবহ গুরুতর অথবা ‘বিপর্যয়কর' পর্যায়ের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, যার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ার তথ্য নিশ্চিত করা হলো৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ লাখ বা সেখানকার জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি জরুরি পরিস্থিতিতে রয়েছেন৷ ৪০ হাজার মানুষ সংকটে রয়েছেন৷
আইপিসির সংজ্ঞা অনুসারে, তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে একটি অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছে কিনা তা বলা যাবে৷ সেগুলো হলো: অন্তত ২০ শতাংশ পরিবার খাদ্যের চরম অভাবে ভুগছে , অন্তত ৩০ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এবং সম্পূর্ণ অনাহারে থাকার কারণে প্রতি ১০ হাজার শিশুর দুইটি শিশু দৈনিক মৃত্যুবরণ করছে৷
প্রতিবেদন অনুসারে, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি মধ্য আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আরো নাজুক হতে পারে৷ দেইর আল-বালাহ এবং খান ইউনিসে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহে ব্যাপক বাধা আরোপ করে৷ বৈশ্বিক সমালোচনার মুখে জুলাই থেকে সীমিত পর্যায়ে খাদ্য সরবরাহের অনুমতি দেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী৷
ইসরায়েলের সরকারকে দায়ী জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের
ইউএন হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস ফলকার টুর্ক গাজায় অনাহারের পরিস্থিতি যুদ্ধাপরাধের মধ্যে পড়তে পারে বলে উল্লেখ করেছেন৷ আইপিসি গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ চলার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এটি ‘ইসরায়েলি সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রত্যক্ষ ফলাফল'৷
তিনি আরও বলেন, ‘‘যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার করা যুদ্ধাপরাধ৷''
এদিকে জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, সংস্থাটিকে খাদ্য সরবরাহে বাধা দেয়া না হলে এই দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যেত৷ এখনও ইসরায়েলের বাধার কারণে সীমান্তে খাদ্য আটকা পড়ে আছে বলে অভিযোগ করেন তিনি৷
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস শুক্রবার গাজা উপত্যকার পরিস্থিতিকে ‘মানবসৃষ্ট বিপর্যয়' বলে অভিহিত করেছেন৷ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ইসরায়েল মানবিক সহায়তা সরবরাহে বাধ্য বলে মনে করিয়ে দেন তিনি৷ বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিকে দায়মুক্তি দিয়ে আমরা চলতে দিতে পারি না৷’’
‘ডাহা মিথ্যা’, দাবি নেতানিয়াহুর
গাজা শহর দখলে ইসরায়েলের নতুন পরিকল্পনা ঘোষণার মধ্যে নতুন এই প্রতিবেদন প্রকাশকে স্বভাবতই ভালোভাবে নেয়নি ইসরায়েল৷
শুক্রবার প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে তারা৷ ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দাবি করেছে গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই৷ তাদের দাবি খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিবেদনটি ‘‘হামাসের মিথ্যাচারের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে৷''
প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনি বেসামরিক বিষয়ে সমন্বয় করা ইসরায়েলের সরকারের আরেক সংস্থা সিওজিএটি৷ তারা ‘ক্ষুধা নিয়ে মিথ্যা প্রচরণার' জন্য হামাসকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে৷
এতে বলা হয়েছে, ‘‘সিওজিএটি, গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে৷ আইপিসির পূর্ববর্তী প্রতিবেদন এবং মূল্যায়ন বারবার ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না৷''
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীও প্রতিবেদনটিকে ‘ডাহা মিথ্যা' বলে দাবি করেছেন৷ সাম্প্রতিক সপ্তাহে ইসরায়েলের নেয়া মানবিক পদক্ষেপগুলোকে এতে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘ইসরায়েলের অনাহার সৃষ্টির কোনো নীতি নেই, অনাহার প্রতিরোধের নীতি রয়েছে৷''
‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ বলছে জার্মানি ও যুক্তরাজ্য
এদিকে আইপিসি এর প্রতিবেদনের পর জার্মানির উন্নয়নমন্ত্রী রিম আলাবালি রাদোফন গাজা উপত্যকায় আরও সাহায্য পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের চোখের সামনে আরও মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে৷'' এই পরিস্থিতি চলতে দেয়া যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এই দুর্ভিক্ষ সম্পূর্ণরূপে মানবসৃষ্ট৷''
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড লামি গাজায় দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত করা প্রতিবেদনকে ‘অত্যন্ত ভয়াবহ' বলে উল্লেখ করেছেন৷
এটিকে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ উল্লেখ করে তিনি এরজন্য ইসরায়েলের সরকারকে দায়ী করেন৷ বলেন, ‘‘গাজায় পর্যাপ্ত সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলি সরকারের অস্বীকৃতি এই মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ডেকে এনেছে৷ এটি একটি নৈতিক অবমাননা৷’’
এফএস/আরআর (এএফপি, এপি, ডিপিএ, রয়টার্স)