পুলিশের লাথি, লাঠির প্রতিবাদে মিছিল, অনশনে চাকরিহারারা
১০ এপ্রিল ২০২৫চাকরিহারা শিক্ষকদের গায়ে যেভাবে পুলিশ হাত দিয়েছে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ তুঙ্গে উঠেছে। চাকরিহারা শিক্ষকরা একদিকে যেমন স্কুল সার্ভিস কমিশন(এসএসসি)-র অফিসের বাইরে অবস্থান ও রিলে অনশন শুরু করেছেন, তেমনই তারা শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেই মিছিলে যোগ দেন বর্তমান শিক্ষকরা। যোগ দেন সাধারণ মানুষও। তাদের প্রধান দাবি, যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
চাকরিহারা শিক্ষকদের লাথি ও লাঠির পর পুলিশ দুইটি এফআইআর করেছে। সেখানে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর ও পুলিশকে মারার জন্য চাকরিহারা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে পুলিশ।
লাথি খাওয়া সেই শিক্ষক যা বললেন
বুধবার কসবার ডিআই অফিসের বাইরে যে চাকরিহারা শিক্ষককে লাথি মারা হয়েছিল, তার নাম অমিত রঞ্জন ভুঁইঞা। তিনি কেওড়াখালি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক। বৃহস্পতিবার তিনি শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে অংশ নেন। তিনি জানিয়েছেন, ''আমাকে যে লাথি মারা হয়েছে, সেই লাথি সমগ্র শিক্ষক সমাজের উপর এসে পড়েছে। এই লাথি সব বাঙালির উপর লাথি, মানুষের উপর লাথি।''
অমিত রঞ্জন বলেছেন, ''আমাদের কাছে খবর ছিল ডিআই অফিস আমাদের বেতন আটকে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরা সেই বিষয়টি নিয়ে জানতে গেছিলাম। সেটার জন্য লাঠি ও লাথি খেয়েছি।''
নৈহাটি থেকে আসা এক শিক্ষিকা জানিয়েছেন, ''শিক্ষকদের পেটে লাথি মারার পর এবার গায়েও লাথি মারা হচ্ছে। ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। আমরা শিক্ষা দিই। সেই শিক্ষকদের গায়ে লাথি পড়লো। মেনে নিতে পারছি না বলে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।''
এসএসসি অফিসের সামনে অনশন
বুধবার রাত থেকেই এসএসসি অফিসের সামনে অবস্থানে বসেন চাকরিহারা শিক্ষকদের একটা অংশ। সারা রাত ধরে অবস্থানের পর সকাল এগারোটা থেকে তারা রিলে অনশন শুরু করেন। তাদের দাবি, যোগ্য কারা সেই তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
অনশনকারী শিক্ষক পঙ্কজ রায় বলেছেন, ''আর কোনো রাস্তা নেই। এটাই একমাত্র পথ। যোগ্য ও অযোগ্যদের চিহ্নিত করতে হবে। আমরা দুর্নীতির মধ্যে যোগ্যতার প্রমাণ করেছি। কে সেটা বলবে। সরকার পুরোটা করেছে। তাদের যোগ্য ও অযোগ্যকে প্রভেদ করতে হবে।''
শিক্ষকদের জন্য জলের বোতল নিয়ে একজন নারী এসেছিলেন সেখানে। তিনি বলেছেন, ''একটা চাকরি পাওয়া যে কতটা কঠিন, তা আমি জানি। যোগ্য প্রার্থী বলে এরা চাকরি পেয়েছিলেন। যোগ্য ও অযোগ্যদের মধ্যে প্রভেদ করতে হবে। এত অন্যায় মেনে নেয়া যাচ্ছে না।''
অনশনরত শিক্ষকদের কাছে গিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, সাবেক সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও অভিনেতা ও বিজেপি নেতা ইন্দ্রনীল ঘোষ। তারা সেখানে গিয়ে চাকরিহারাদের সঙ্গে কথা বলেন।
শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বিক্ষোভ-মিছিল
চাকরিহারা শিক্ষকদের ডাকে শিয়ালদহ থেকে মিছিল শুরু হলো। সেই মিছিলে চাকরিহারাদের পাশাপাশি স্থায়ী শিক্ষক, পড়ুয়া ও সাধারণ মানুষও যোগ দিলো। মিছিলে ছিলেন অভিনেতারাও।
কোন পথে যাওয়া হবে তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর মিছিল শুরু হলো। তারপর সেই দীর্ঘ মিছিল গেলো ধর্মতলার দিকে। পুলিশি অত্যাচার নিয়ে, যোগ্য-অযোগ্য আলাদা তালিকা প্রকাশের দাবিতে মিছিল চললো।
ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে গিয়ে মিছিলে যোগ দেয়া চাকরিহারারা রাস্তায় বসে পড়েন। বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ''আমাদের নির্মমভাবে পুলিশ মেরেছে। আমরা অভিযোগ জানাতে গেছিলাম। আমরা চাই যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।''
পুলিশি তদন্ত
চাকরিহারাদের উপর লাঠি ও লাঠি নিয়ে বিশেষ তদন্তের নির্দেশ। তবে সেই তদন্ত পুলিশই করবে। কেন লাথি মারা হলো, লাঠি চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কিনা, সেটাও পুলিশ কর্তাদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে।
বিরোদীদের বিক্ষোভ
চাকরিহারাদের উপর পুলিশের লাথি ও লাঠি মারার প্রতিবাদে বিজেপি যুব মোর্চার কর্মীরা বিধাননগরে এসএসসি অফিরের কাছে বিক্ষোভ দেখায়। তারা মিছিল করে। স্লোগান দেয়। তারপর পথ অবরোধ করে। পুলিশ তাদের আটক করে বাসে তুলে নিয়ে যায়।
সিপিএম ও কংগ্রেসও কসবার ঘটনার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিল।
জিএইচ/এসজি