পুতুলনাচের মণ্ডপের অন্দরে

দমদম পার্ক ভারতচক্রের পুজোয় মণ্ডপ, মূর্তি সবই হয়েছে পুতুলনাচকে মাথায় রেখে। ভারতের এই লোকায়ত শিল্প একসময় খুবই জনপ্রিয় ছিল। এখন তা আবার জনপ্রিয় করার চেষ্টা হচ্ছে। সেই প্রয়াসে সামিল ভারতচক্রও।

শিল্পী অনির্বাণ দাসের সুচারু হাতে সেজে উঠেছে মণ্ডপ। তাদের এই বছরের ট্যাগ লাইন ‘কমলায় নৃত্য করে থমকিয়া থমকিয়া’।

পুতুল নাচের মতো লোকশিল্পের পিছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। তবে ভারতচক্রের মণ্ডপে রাজস্থান বা উত্তর-পশ্চিম ভারতের পুতুল নাচের ইতিকথাই উঠে এসেছে এবারের থিমে।

শিল্পী জানিয়েছেন, ''এই পৃথিবীতে প্রত্যেকের ভাগ্যের সুতোই বাঁধা অন্য কারোর হাতে। যে ভাবছে আমি সকলকে সুতোর টানে নাচাচ্ছি, সেও কিন্তু আবার কারো হাতের পুতুল। ক্ষমতা নিয়ে মানুষের এই যে ভ্রান্তি সেটাই এবার মণ্ডপ সজ্জার থিম।''

পুজো কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, আসলে মানুষ ক্ষমতায় দম্ভে নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করে। মনে করে সেই সবাইকে নাচাচ্ছে।

ভারতচক্রের এই থিম আমাদের নিয়ে যায় এক আশ্চর্য জগতে। যে জগতে পুতুল নাচের সৌন্দর্য আছে, যেখানে ভাবনার অঢেল বিষয় আছে, যার মধ্যে ঐতিহ্য আছে, ইতিহাস আছে, আর আছে এক মায়াময় জগতের হাতছানি।

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ পুতুল নাচের সম্ভারও দেখতে পাওয়া যাবে দমদম পার্ক ভারতচক্রের মণ্ডপে। বাংলার টেপা পুতুলের আদলেও তৈরি হয়েছে মূর্তি

দুর্গা নিজেও এখানে পুতুল। মানুষই তাকে সূতোর টানে নাচাচ্ছে, এই ‘ভ্রান্তি’ও ফুটে উঠেছে মণ্ডপ সজ্জায়। দুই শিল্পী মা দুর্গার হাত নাড়িয়ে গেছেন সারাক্ষণ।

বাচ্চাদের কাছে এখন বিনোদনের অঢেল জিনিস আছে। কার্টুন আছে। ইন্টারনেটের জগত আছে। তাদের সামনে আছে একটা ভার্চুয়াল বিশ্ব। সেই চাপে অনেক লোকশিল্প আকর্ষণ হারিয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে। পুতুলনাচের যেন সেই অবস্থা না হয়, সেই বার্তাও দেয়া হয়েছে এই মণ্ডপে।

পুতুলনাচের মণ্ডপ ও মূর্তি দেখে দর্শকরা মোহিত। খুব মজা পেয়েছে বচ্চারা। বিশেষ করে মণ্ডপের ভিতরে মা দুর্গার হাত-পা নড়া দেখে। মণ্ডপে আসল পুতুলনাচ তাদের মনোরঞ্জন বাড়িয়েছে।