পার্লামেন্ট হামলার নেপথ্যে কারা
বুধবার ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে যারা আক্রমণ চালিয়েছে, তাদের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।
কী ঘটেছিল
বুধবার দুপুর ১টা দুই মিনিট। নতুন পার্লামেন্টের লোকসভায় তখন বিতর্ক চলছে। আচমকাই গ্যালারি থেকে সাংসদদের উপর গিয়ে পড়ে এক ব্যক্তি। সেখান থেকে সোজা স্পিকারের চেম্বারের দিকে দৌড়াতে শুরু করে সে। লোকসভার ভিতর হলুদ ধোঁয়ার বোমা ফাটায়।
এমপি-দের বক্তব্য
সে সময় রাহুল গান্ধী, অধীর চৌধুরীর মতো সিনিয়রেরা উপস্থিত ছিলেন সংসদে। অধীর জানিয়েছেন, এমপি-রাই ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলেন। পরে তাকে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ততক্ষণে লোকসভার ভিতর হলুদ ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে।
দ্বিতীয় ব্যক্তি
দ্বিতীয় ব্যক্তি লোকসভার ভিতর ঝাঁপ দিতে পারেনি। গ্যালারিতেই হলুদ ধোঁয়া ছেয়ে দেয় সে। তাকেও কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরাপত্তারক্ষীরা ঘিরে ধরে গ্রেপ্তার করে।
লোকসভার বাইরে
লোকসভার ঠিক বাইরে এক নারী-সহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। 'তানাশাহি নেহি চলেগা' অর্থাৎ, অরাজকতা বন্ধ কর-- স্লোগান দিচ্ছিল তারা। পার্লামেন্টের বাইরে তারাও হলুদ ধোঁয়ার বোমা ফাটায়।
ধৃতদের পরিচয়
এখনো পর্যন্ত এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লোকসভার ভিতর যে ঝাঁপিয়েছিল, তার নাম সাগর শর্মা। লাখনউনিবাসী এই যুবকের বয়স ২৭ বছর। লোকসভার গ্যালারিতে যে হলুদ বোমা ফাটিয়েছিল এবং নীচে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছিল, তার নাম মনোরঞ্জন ডি। ৩৪ বছরের এই ব্যক্তি পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। বিজেপি এমপি প্রতাপ সিমহার অফিস থেকে তারা লোকসভার পাস পেয়েছিল।
বাকি ব্যক্তিরা
৩৭ বছরের নীলম আজাদ সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল। এর আগে কৃষক আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিল সে। এমফিল শেষ করে সে শিক্ষকতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। নীলমের সঙ্গে ছিল অমল শিন্ডে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি সে। এরা সকলেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মিলেছিল গুরগাঁওয়ের ভিকি শর্মা এবং তার স্ত্রী রেখার বাড়িতে। থাকতে দেওয়ার জন্য তাদেরও আটক করা হয়েছে।
মূল মাথা
তদন্তকারীদের ধারণা, এই ঘটনার মূল মাথা বিহারের ললিত ঝা। পশ্চিমবঙ্গের একটি এনজিও-র সঙ্গে সে যুক্ত বলে জানা গেছে। তারই পরিকল্পনামাফিক সকলে ভিকির বাড়িতে এসে উঠেছিল এবং বুধবার পার্লামেন্টে আক্রমণ চালায় বলে মনে করা হচ্ছে। ললিতকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।
ভগৎ সিং ফ্যান ক্লাব
পুলিশ জানিয়েছে, এরা সকলেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ভগৎ সিং ফ্যান ক্লাবের সদস্য ছিল। এটিই সম্ভবত তাদের একমাত্র যোগসূত্র। কোনো নির্দিষ্ট সংগঠনের নাম এখনো জানা যায়নি। ১৮ মাস ধরে তারা পার্লামেন্টে এই হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বেছে নেওয়া হয়েছিল ১৩ ডিসেম্বর তারিখটি।
পার্লামেন্ট হামলার ২২ বছর
বুধবার ছিল পার্লামেন্ট হামলার ২২ বছর পূর্তি। ২০০১ সালে পার্লামেন্টে আক্রমণ চালিয়েছিল জৈশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তইবার সন্ত্রাসীরা। ঘটনায় আটজনের মৃত্যু হয়েছিল। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকসভায় তাদের স্মরণ করেন। তবে ঘটনার সময় প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় উপস্থিত ছিলেন না।