পানির উপর সোলার সিস্টেম
১৬ এপ্রিল ২০২৫ভূমিতে স্থাপিত সোলার সিস্টেমের তুলনায় এই সিস্টেম স্থাপন বেশি ব্যয়বহুল, কিন্তু পানির শীতল প্রভাবের কারণে এগুলো বেশি কার্যকর৷
জার্মানিতে ২০১৯ সালে সাবেক এক খনি এলাকায় প্রথম ভাসমান সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছিল৷
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের একটি উন্মুক্ত খনি এলাকায় সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি নির্মিত হচ্ছে৷ কয়েক দশক ধরে সেখানে লিগনাইট খনন করা হয়েছে৷ এর আকার ২০টি ফুটবল মাঠের সমান৷ প্রায় আট হাজার পরিবার সেখান থেকে বিদ্যুৎ পায়৷
জার্মানিতে হোলমানস নুড়িপাথর কারখানা এক্ষেত্রে অন্যতম পথিকৃৎ৷ সেখানকার ভাসমান সোলার সিস্টেমের আকার: ৩.৩ হেক্টর - প্রায় পাঁচটি ফুটবল মাঠের সমান৷ সেখান থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ দিয়ে নুড়িপাথরের কাজ করা হয়৷
হোলমানস গ্রাভেল ওয়ার্কস এর ইয়ুর্গেন ফ্র্যোলিশ জানান, ‘‘এই ধরণের নুড়িপাথরের কারখানায় সূক্ষ্ম নুড়িপাথর থেকে বালি ও মোটা নুড়িপাথর আলাদা করতে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলো বিদ্যুতে চলে৷ এই প্ল্যান্টটি প্রায় ৪০ শতাংশ স্বয়ংসম্পূর্ণ, যার মানে, আমরা প্রায় ৪০ শতাংশ স্বাধীন৷ এইরকম সময়ে, যখন রোদ কম থাকে, তখন আমাদের গ্রিড থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কিনতে হয়৷''
সোলার সিস্টেম সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে, যেটা ঋতু এবং দিনের নির্দিষ্ট সময় ভেদে পরিবর্তিত হয়৷ কারখানাটি যেহেতু সপ্তাহান্তে চলে না, তাই উৎপাদিত বিদ্যুৎ আবার গ্রিডে ফেরত পাঠানো হয়৷ ‘‘কিন্তু গ্রিডে বিদ্যুৎ দেওয়া আমাদের জন্য আর্থিকভাবে কোনো অর্থ বহন করে না৷ তাই বর্তমানে আমরা, সংরক্ষণ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা আরও ভাল কৌশল হয় কিনা, তা বিবেচনা করছি,'' বলেন ফ্র্যোলিশ৷
ভাসমান সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে হোলমানস কোম্পানি তাদের নিজস্ব অর্থ থেকে পাঁচ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে৷ সরকার কোনো ভর্তুকি দেয়নি৷
অনুমোদন প্রক্রিয়ায় এখনও কিছু বাধা রয়ে গেছে, যা সম্পন্ন হতে প্রায় দুই বছর লাগে৷ ফ্রাউনহফার ইনস্টিটিউটের কারোলিন বালটিনস বলেন, ‘‘এটি এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে অনেক কর্তৃপক্ষ নিজেই জানে না যে, কীভাবে সমস্যাটি মোকাবেলা করতে হবে৷''
জার্মানিতে ২০২৩ সালে একটি আইন পাস করে শুধুমাত্র কৃত্রিম হ্রদে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে৷
হ্রদের মাত্র ১৫ শতাংশ ঢাকা সম্ভব, আর তীর থেকে দূরত্ব কমপক্ষে ৪০ মিটার হতে হয়৷
বালটিনস বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে, নেদারল্যান্ডসে এই নিয়মগুলি নেই, যেমন, তাদের এমনও লেক আছে যার প্রায় ৭০ শতাংশ সোলার সিস্টেমে ঢাকা৷ তার মানে, তারা পরিস্থিতির পুরো সুবিধা নিতে চায়৷''
ভাসমান সৌর প্যানেল হ্রদের বাস্তুতন্ত্রের উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে?
কেন্দ্রীয় পরিবেশ সংস্থার উলরিকে ভ্যুরফ্লাইন জানান, ‘‘এমনও হতে পারে যে, যদি পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়, তাহলে শৈবালের বৃদ্ধি হ্রাস পাবে, কিংবা মারা যাবে৷ ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন মারা যাবে, এবং মাছ আর পর্যাপ্ত খাবার পাবে না৷ হয়তো তাদেরও পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকবে না, আমরা ঠিক জানি না৷''
হোলমানস প্ল্যান্ট নির্মাণের অন্যতম একটি শর্ত ছিল, হ্রদে কী পরিবর্তন হচ্ছে সেগুলো নথিভুক্ত করা৷ ফ্র্যোলিশ বলেন, ‘‘এটা করার জন্য আমরা একটি বায়োলজিক্যাল প্রকৌশল সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছি৷ অ্যাকুয়াটিক ইকোলজির অন্তর্ভুক্ত প্রায় সবকিছুর উপরই আমাদের নজর রাখতে হবে৷ আমাদের ভাসমান সোলার সিস্টেমের কারণে জলের রসায়ন, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, ঝিনুক, জলজ উদ্ভিদ, তলদেশে বসবাসকারী নুড়ি শৈবাল এবং পাখির উপর কী প্রভাব পড়ছে তার তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে৷ এবং পাঁচ বছর ধরে এর ফলাফল উপস্থাপন করতে হবে৷''
ভাসমান সোলার সিস্টেম প্রায় ২০ বছর টিকে থাকে৷ বিমা আর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম৷
ভবিষ্যতে বায়ু বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে একত্রিত করে এমন ভাসমান সোলার সিস্টেম স্থাপনেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে৷
সমুদ্রে এই প্রযুক্তি স্থাপন করতে পারলে ভালো হবে৷ তবে সেক্ষেত্রে তাকে প্রচণ্ড বাতাস, ঢেউ আর লবণ পানি সহ্য করতে হবে৷
ফ্রান্সিসকা বিল/জেডএইচ