পশ্চিমবঙ্গে বাংলা কার্টুন : এক প্রদর্শনীতে ১৫০ বছরের ইতিহাস
বাংলা ব্যঙ্গচিত্র বা কার্টুনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৭২ সালে৷ ১৫০ বছরের পথচলা শুধু নিখাদ মনোরঞ্জন নয়, কার্টুন হয়ে উঠেছে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির চালচিত্র৷
কার্টুনের প্রদর্শনী
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বাংলা কার্টুনের ঐতিহ্যের প্রদর্শনী৷ ‘কার্টুন দল’-এর উদ্যোগে ফিরে দেখা হলো ইতিহাসকে৷ উপলক্ষ্, বঙ্গদেশে কার্টুনের ১৫০ বছর৷ সহায়তায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য নাটক সঙ্গীত একাডেমি ও ছোটামোটা ফাউন্ডেশন৷
অমৃতবাজারে আত্মপ্রকাশ
প্রথম বাংলা রাজনৈতিক কার্টুন প্রকাশিত হয় ১৮৭২ সালে অমৃতবাজার পত্রিকার৷ ভারত তখন পরাধীন৷ ব্রিটিশ শাসকের পদানত দেশীয় রাজারা৷ তারই প্রতিফলন প্রথম ব্যঙ্গচিত্রে৷ সংবাদপত্রে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশে অমৃতবাজারের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি৷
দুই ব্যঙ্গপত্রিকা
১৮৭৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘হরবোলা ভাঁড়’৷ একইসঙ্গে ‘বসন্তক’৷ ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য পাঞ্চ’- এ ভারতীয়দের সম্পর্কে অপমানজনক কার্টুন প্রকাশ করা হতো৷ তার জবাবেই দুই বাংলা ব্যঙ্গপত্রিকার প্রকাশ৷
ঠাকুরবাড়ির রঙ্গব্যঙ্গ
কার্টুন রস পরিবেশনায় পিছিয়ে ছিল না জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি৷ অবনীন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা ব্যঙ্গচিত্রের অন্যতম আদিপুরুষ৷ রবীন্দ্রনাথের কার্টুনও সমাদৃত হয়েছিল৷
কবিগুরুর কার্টুন
বাংলা সাহিত্যের নানা ধারায় বিচরণ করা রবীন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্রে দক্ষতা তেমন আলোচিত হয়নি৷ ‘খাপছাড়া’-র অলঙ্করণ সে কথাই বলে৷ পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যিকদের মধ্যে সুকুমার রায়, বনফুল, স্বপনবুড়ো, হিমানীশ গোস্বামী প্রমুখ কার্টুনে দক্ষতা দেখিয়েছেন৷
পুরোধা কাফি খাঁ
বাংলা আধুনিক ব্যঙ্গচিত্র রূপ পেয়েছিল প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী (পিসিএল) ওরফে কাফি খাঁর হাত ধরে৷ ইতিহাসের অধ্যাপক প্রফুল্লচন্দ্রকে প্রথম পেশাদার বাঙালি কার্টুনিস্ট বলা চলে৷ তিনি প্রথম শিশুদের জন্য বাংলা কমিক স্ট্রিপ আঁকেন৷
চিত্রীর হাতে ব্যঙ্গচিত্র
বাংলা রাজনৈতিক কার্টুনের সম্ভারকে সমৃদ্ধ করেছেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীরাও৷ সোমনাথ হোড় তার মধ্যে অন্যতম৷ স্বাধীনতার প্রাক্কালে দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কথা উঠে এসেছে তার রেখায়৷
সময়ের দর্পণ
বিশ শতকে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে ছাপা হতো কার্টুন৷ প্রবাসী, ভারতবর্ষ, বিদূষক, বসুমতী, শনিবারের চিঠি, সচিত্র শিশির, সচিত্র ভারত, অচলপত্র প্রভৃতি পত্রপত্রিকা সেজে উঠতো ব্যঙ্গচিত্রে৷
রঙ্গ পত্রিকার প্রচ্ছদে
স্ট্রিপ কার্টুন জনপ্রিয় হয় শৈল চক্রবর্তীর রেখায়৷ শিবরাম চক্রবর্তীর কাহিনিতে অলংকরণ থেকে শুরু করে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদার স্কেচও তারই করা৷ সামাজিক ব্যঙ্গচিত্র, তির্যক পোর্ট্রেটে অসামান্য রেবতীভূষণ ঘোষ এবার শতবর্ষে৷
বিজ্ঞাপনের ব্যঙ্গ
সচেতনতা প্রচার থেকে ব্যবসা-বিপণন, চণ্ডী লাহিড়ীর কার্টুন নিছকই শিল্পের তকমা ঝেড়ে নতুন পরিচয় পায়৷ খুলে যায় ব্যঙ্গচিত্রের নয়া দিগন্ত৷ বাংলায় প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের অ্যানিমেশন ছবি তৈরির হোতা তিনিই৷
সাধারণের কথা
প্রচার-বিজ্ঞাপনের ঊর্ধ্বে যিনি বাঙালির ঘরে ঘরে সমাদৃত, তিনি নারায়ণ দেবনাথ৷ জনমনে তার আবেদন আজো অম্লান৷ খোদ জনতাই কখনো আবার কালজয়ী কার্টুনের বিষয়৷ অমল চক্রবর্তীর ‘কমন ম্যান’ সে কারণেই মাইলফলক৷
কার্টুন বিপণি
বাংলা ব্যঙ্গচিত্রের সার্ধশতবর্ষে তৈরি হয়েছে হাল ফ্যাশনের স্মারক৷ টুপি, টি-শার্ট থেকে মাস্ক, দর্শকরা সংগ্রহে রেখেছেন পছন্দের সামগ্রী৷