পরমাণু অস্ত্র হ্রাসে নিরাপত্তা পরিষদের সর্বসম্মত সমর্থন
২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে৷ এই পরিষদটি কাজ শুরু করার পর এত বছরেও এই পরিষদের কোন সভায় সভাপতিত্ব করেননি পরিষদের শক্তিশালী সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্ট৷ এবার সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটিই ঘটলো৷ প্রথমবারের মত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এতে সভাপতিত্ব করলেন৷ কেবল সভাপতিত্বই নয়, এই বিশেষ বৈঠকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হলো৷ সদস্যদের ভোটের ফলাফল জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বললেন, এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৫টি ভোট পড়েছে৷ ফলে খসড়া প্রস্তাবনাটি চূড়ান্ত প্রস্তাবনা ১৮৮৭ নামে পরিচিত হলো, যা গ্রহণ করা হলো ২০০৯ সালে৷
এই প্রস্তাবে নতুন করে পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ করা, নিরস্ত্রীকরণের কাজ শুরু করা এবং পরমাণু অস্ত্রের ঝুঁকি কমানোর কথা বলা হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য অধিকতর উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে৷ আহ্বান জানানো হয়েছে, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) এখনো স্বাক্ষর করেনি এমন দেশকে চুক্তিটি স্বাক্ষরের৷ পরমাণু অস্ত্র উৎপাদনে প্রয়োজনীয় মালামাল পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে৷
প্রস্তাবটি গ্রহণ করার পর নিরাপত্তা পরিষদে বারাক ওবামা বলেন, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য সকলের যে প্রতিশ্রুতি ছিল, সেটির লক্ষ্য পূরণে এটি কাজ করবে৷ তিনি বলেন, পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার এবং এর উৎপাদন বন্ধের জন্য প্রয়োজন নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করা৷ তিনি বলেন, প্রস্তাবটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে আগামী এক বছর হবে অন্ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ ওবামা বলেন, যে ঐতিহাসিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তাতে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত পৃথিবীর জন্য তাদের অঙ্গীকার সন্নিবেশিত হয়েছে৷ পারমাণবিক বিপদের ঝুঁকি কমাতে নিরাপত্তা পরিষদের এই সমঝোতা আরো বিস্তৃত পরিসরে কাজ করবে৷ শান্তিপূর্ণ কাজের জন্য প্রত্যেক দেশের পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার আছে, গৃহীত প্রস্তাবে তাও প্রতিষ্ঠিত হল৷ তিনি বলেন, যাদের পরমাণু অস্ত্র আছে তাদের দায়িত্ব হল নিরস্ত্রীকরণের দিকে এগিয়ে যাওয়া৷ আর যাদের এসব অস্ত্র নেই তাদের দায়িত্ব হল এগুলো বর্জন করা৷
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করার পর বলেন, নতুন এক ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি নতুন পথচলা৷ নিরাপদ বিশ্বের জন্য নিরস্ত্রীকরণ অপরিহার্য৷
ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ বিষয়ে পশ্চিমাদেশগুলোর সঙ্গে চলতে থাকা চরম বিরোধের সময়ে এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করলো নিরাপত্তা পরিষদ৷ কিন্তু এই প্রস্তাবনায় এ বিষয়ে ইরান কিংবা উত্তর কোরিয়ার অথবা অন্য কোন দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি৷ অবশ্য এ বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের পূর্বের গ্রহণ করা প্রস্তাবগুলোকে উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার, সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই