নোট বাতিলের বিপক্ষে দাঁড়ালেন যে বিচারপতি
২ জানুয়ারি ২০২৩সোমবার একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নরেন্দ্র মোদীর সরকার ভারতে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট সেই সংক্রান্ত সমস্ত মামলার রায় একত্রে দিয়েছে। পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের চার বিচারপতি বলেছেন, নোটবাতিলের সিদ্ধান্তে সরকারের পদ্ধতিগত ভুল ছিল না। কিন্তু এক বিচারপতি বলেছেন, সরকার যেভাবে একাজ করেছে, তা 'আনলফুল' বা 'বেআইনি'।
সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ এই বিচারপতির নাম বিভি নাগারত্না। নাগরত্না বলেছেন, নোটবন্দিতে ক্ষমতা দেখানো হয়েছে, আইনের প্রয়োগ হয়নি। সে কারণেই এটি পদ্ধতিগতভাবে বেআইনি। যদিও এখন আর ওই সময়টি বদলে ফেলা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। নিজের বক্তব্য জানানোর সময় এই বিচারপতি বলেছেন, 'এই ধরনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় রিসার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। কিন্তু এক্ষত্রে দেখা গেছে, সরকার নোট পাঠিয়ে রিসার্ভ ব্যাংককে নোট বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। রিসার্ভ ব্যাংক তা বাস্তবায়িত করেছে মাত্র। এখানেই আইনের ব্যবহারে গলদ থেকে গেছে।' তার মতে, সংসদে আইন এনে এ কাজ করা হলে তাতে পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকতো না। এবং এই কারণেই নোটবাতিলের পদ্ধতিটি তিনি বেআইনি বলে মনে করেন।
বেঞ্চের বাকি চার বিচারপতি অবশ্য পদ্ধতিগত ভুলের কথা বলেননি। বরং তারা বলেছেন, অভিযোগকারী এবং সরকারপক্ষের বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, নোটবাতিলের ছয়মাস আগে থেকে রিসার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে টানা আলোচনা চালিয়েছে সরকার। ফলে রিসার্ভ ব্যাংককে কেবল বিষয়টি কার্যকর করতে ব্যবহার করা হয়েছে, এমন তারা মনে করছেন না।
ভারতে নোটবাতিল হওয়ার পর সুপ্রিমকোর্ট সব মিলিয়ে ৫৮টি পিটিশন জমা পড়েছিল। সেই সবকটি পিটিশন একত্র করে এদিন রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। রায় বের হওয়ার কথা ছিল গত ৭ ডিসেম্বর। কিন্তু বেঞ্চ রায় ঘোষণা পিছিয়ে দিয়েছিল। সোমবার তা ঘোষণা করা হলো।
পিটিশনরদের বক্তব্য ছিল, নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত বদল করা হোক। কিন্তু আদালত বলেছে, তা করতে হলে সময়ের কাঁটা পিছনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। এখন আর তা করা সম্ভব নয়। ফলে এই দাবি মেনে নেওয়া যায় না।
কী ঘটেছিল
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, সমস্ত পাঁচশ এবং হাজার টাকার নোট বাতিল করা হবে। ৫১ দিনের মধ্যে সমস্ত বাতিল নোট ব্যাংকে জমা করতে হবে জানিয়েছিল সরকার। মোদী বলেছিলেন, কালো টাকা এবং জঙ্গি কার্যকলাপে টাকা ব্যবহার বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ। তবে সমস্ত টাকা জমা পড়ার পর দেখা যায়, যে টাকা বাইরে ছিল, প্রায় সেই পরিমাণ টাকাই ব্যাংকে জমা হয়েছে। খুব বেশি কালো টাকার হদিস পাওয়া যায়নি বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য।
পিটিশনরাদের বক্তব্য ছিল, মানুষকে এর ফলে অত্যন্ত সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। মানুষের হাতে খুব বেশি সময় দেয়া হয়নি। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, প্রায় দুইমাস সময় দেয়া হয়েছিল। ফলে সময় দেয়া হয়নি কথাটি বলা যায় না।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এএনআই)