নিরাপত্তা রক্ষায় সাধুবাদ পেল ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী
১৯ জুলাই ২০০৯১২ জন শিয়া ইমামের মধ্যে সপ্তম ইমাম মুসা আল খাদিম৷ ইমাম মুসা অষ্টম শতাব্দীতে বাগদাদের কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছিলেন৷ তাঁরই স্মরণে প্রতি বছর ইরাক ও ইরাকের বাইরে থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ শিয়া মুসলমান সমবেত হন উত্তর বাগদাদে অবস্থিত ইমাম মুসার মাজারে৷ আর এই উৎসবকে ঘিরে উগ্রপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো প্রতি বছরই বেশ বড় ধরণের বোমা হামলা কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে আসছে৷ ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের উপস্থিতির পর থেকে এই বছরই প্রথম এই শিয়া ইমামের দরবারে ভক্তদের সম্মিলনী কোন বড় ধরণের সহিংসতা ছাড়াই সফলভাবে শেষ হয়েছে৷ গত মাসের শেষ দিকে ইরাকের বিভিন্ন শহর থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করার পর, এই প্রথম তাদের যোগ্যতার প্রামাণ দিল ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী৷
ইমাম মুসার মাজার ঘিরে খাদিমিয়াহ এলাকার প্রায় ১৫ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এবার ভিড় ছিল ভক্তদের৷ নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে ভক্তদের জন্য থাকা-খাওয়ার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল তাঁবু৷ এমনকি অনুষ্ঠান স্থান থেকে ভক্তদের নিজ নিজ শহরে পৌঁছে দেয়ার জন্য ইরাকি সেনা সদস্যরা খোলা গাড়ির ব্যবস্থা করেছিল৷ এছাড়া সম্মিলনীর স্থানকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী৷ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারগুলো উপর থেকে কড়া নজর রাখছিল সারক্ষণ৷ তবে মূল অনুষ্ঠানের আগের দুই দিন কয়েকটি বিচ্ছিন্ন বোমা বিস্ফোরণে কয়েকজন ইরাকি নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে৷ তারপরও বড় কোন সহিংসতা ছাড়াই এই সম্মিলনীর সফল সমাপনীতে সন্তুষ্ট সবাই৷
মধ্য ইরাকের বাবিল প্রদেশ থেকে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এই উৎসবে যোগ দেন আদনান আবু হোসাইন৷ বার্তা সংস্থা এএফপি'কে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে এ ধরণের অনুষ্ঠানে প্রায়ই মর্মান্তিক সহিংসতার ঘটনা ঘটতো৷ তাই আমরা এই মাজারে আসতে পারিনি৷ কিন্তু এই বছর দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে৷ তাই এবার আমার পরিবার পরিজনদের নিয়ে প্রথমবারের মতো এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি৷
ইমাম মুসার মাজারের দায়িত্বে থাকা ফাদহিল আল আমবারি জানিয়েছেন, আরব দেশগুলো ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে এই সম্মিলনীতে ভক্তরা হাজির হয়েছিলেন৷ টানা চারদিন ধরে সেখানে মানুষ জড়ো হতে থাকে৷ তবে মূল আলোচনা ও স্মরণ অনুষ্ঠান ছিল শনিবার৷ আমবারি বলেন, এটা সবচেয়ে বড় উদাহরণ যে, সন্ত্রাস মোকাবিলায় ইরাকিরা ঐক্যবদ্ধ এবং এমনটি থাকলে সন্ত্রাসীরা ব্যর্থ হবেই৷
নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশংসা করে এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি বলেন, এই সম্মিলনীতে সমাগত লাখ লাখ মানুষের জন্য নিরাপত্তা বিধানে নিরাপত্তা বাহিনী বেশ দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে৷ মালিকি বলেন, তাদের এই সফলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা আমাদের শহরগুলোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়ার পর এটিই তাদের জন্য প্রথম পরীক্ষা৷ মালিকির মন্তব্য, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সন্ত্রাস প্রতিরোধে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মদক্ষতা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: ফাহমিদা সুলতানা