নতুন আঙ্গিকে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা
ভোরের নতুন সূর্য ওঠার সাথেই শুরু হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২৷ বরাবরের মতো চলতি বছলর নববর্ষের আকর্ষণ ছিল চারুকলা অনুষদ থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রা৷
চারুকলা থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’
সোমবার পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হওয়া এই শোভাযাত্রায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ৷ এবারের প্রতিপাদ্য—‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’৷
অংশগ্রহণে বৈচিত্র
শোভাযাত্রায় ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–শিক্ষার্থী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা অংশ নেন৷ সম্মুখভাগে ছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের ১৮টি ঘোড়া৷ ব্যান্ডদল, বিশেষ অতিথিবৃন্দ, কৃষক দল, সাধু ও বয়াতি, জাতীয় নারী ফুটবল দল, ফ্যাসিবাদের মোটিফসহ অন্যান্য মোটিফ, রিকশা বহর, পুরান ঢাকার ৫টি ঘোড়ার বহরসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন৷
বিভিন্ন ধরণের মোটিফ
এবারের শোভাযাত্রায় শোভাযাত্রায় রয়েছে সাতটি বড় মোটিফ, সাতটি মাঝারি মোটিফ ও সাতটি ছোট মোটিফ৷ এরমধ্যে ছিল তরমুজের ফালি, সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া, লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস বাঘের মাথা, পলো, মাথাল, লাঙল, মাছের ডোলা ইত্যাদি৷
‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’
গত শনিবার ভোরে চারুকলা অনুষদের ভেতরে শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা দুটি মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে৷ এতে ২০ ফুট উচ্চতার ‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ নামে মোটিফটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়৷ তার পাশেই রাখা ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফের একটি ডানা ও লেজের খানিকটা পুড়ে যায়৷ পরে গত শনিবার রাতেই থার্মোকল বা সোলা দিয়ে নতুন করে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ বানানো হয়৷
মীর মুগ্ধকে স্মরণ
জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহত হয়েছিলেন মীর মুগ্ধ৷ পনির বোতল নিয়ে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মুগ্ধ৷ এসময় গুলিতে নিহত হন তিনি৷ চলতি বছরের শোভাযাত্রায় মুগ্ধর স্বরণে পানির বোতলের বোতলের একটি মোটিফ তৈরি করা হয়৷ সেখা লিখা ছিল ‘পানি লাগবে, পানি’৷
বাংলার কৃষক
নতুন বছর উদযাপন হাজার বছরের বাংলার ঐতিহ্য৷ বাংলার কৃষক থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষের কাছে এটি একটি আনন্দঘন দিন৷ চারুকলার শোভাযাত্রায় কৃষকের পোশাকে অংশগ্রহণ করেছেন অনেকে৷
নিরাপত্তা
শোভাযাত্রার নিরাপত্তায় উপস্থিত ছিল পুলিশ এবং সোয়াতের সদস্যরা৷
মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা
দুই দশকের বেশি সময় ধরে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে চারুকলা থেকে এই উদযাপন হয়ে আসলেও চলতি বছর এটি ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে উদযাপিত হয়৷ নাম পরিবর্তনের এই পদক্ষেপে সমালোচনার মুখেও পড়ে৷ সমালোচকদের দাবি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কট্টরতার জায়গা থেকে নাম পরিবর্তন করা হয়েছে৷ এমনকি চারুকলা অনুষদের অনেক শিক্ষার্থীও নাম পরিবর্তনের সমালোচনা করেন৷
প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বার্তা
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বতী সরকারে প্রধান উপদেষ্টা৷ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস৷ বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আমাদের সামনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে৷ এ সুযোগ যেন আমরা না হারাই৷ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এবারের নববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার৷’’