দেড়শ বছরে মৃত্যুশয্যায় কলকাতার ট্রাম
কলকাতার ট্রাম দেড়শ বছরে পড়লো। কিন্তু ভারতের একমাত্র শহরে এই ট্রাম পরিষেবার অবস্থা খুবই খারাপ। কার্যত তা মৃত্যুশয্যায়।
দীর্ঘ যাত্রা
কলকাতার রাস্তায় প্রথম ট্রাম চলেছিল ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলে দুই দশমিক চার কিলোমিটার রাস্তায়। পরে নভেম্বরে অবশ্য তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর লাইন পেতে তার যাত্রা শুরু ১৮৮০ সালের ১ মে থেকে। প্রথম ট্রাম চলার দেড়শ বছর কেটে গেছে। কলকাতার রাস্তায় এখনো ট্রাম আছে।
কেমন আছে কলকাতার ট্রাম?
কলকাতায় একসময় ৩৭টি রুটে ট্রাম চলত। এখন চলে মাত্র তিনটি রুটে। গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলা, টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ এবং শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা। মোট ১২টির মতো ট্রাম চলে এই তিন রুটে।
লাইনে পিচ
যে সব জায়গায় আগে ট্রাম চলত, তার অনেকগুলিতেই এইভাবে পিচ করে ঢেকে দেয়া হয়েছে ট্রামলাইন। এই সব লাইনে আর ট্রাম চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
গড়ের মাঠে ট্রাম চলে না
আগে কলকাতা ময়দানে ট্রাম চলত। বিশেষ করে শীতের ভোরে ময়দানের মধ্যে দিয়ে ট্রামের সফর উপভোগ করতেন কলকাতাবাসী। সেই লাইন এখনো আছে। কিন্তু ময়দানে সেই ট্রাম নেই। সেই আমেজ আর উপভোগ করতে পারেন না কলকাতাবাসী।
বাতানুকূল ট্রাম
কলকাতায় চালু করা হয়েছিল বাতানুকূল ট্রাম। একেকটা ট্রাম বাতানুরূল করতে বেশ কয়েক লাখ টাকা লাগে। ফলে কয়েকটা ট্রাম বাতানুকূল হয়েই কার্যত থেমে গেছে সেই কাজ।
শূন্য ডিপো
ট্রামের একের পর এক ডিপো শূন্য। নোংরা, আবর্জনায় ভরা। বস্তুত, ট্রাম যে এখন মৃত্যুশয্যায় তা এর পরিকাঠামো দেখেই স্পষ্ট বোঝা যায়।
বাস চালায় ট্রাম কোম্পানি
লোকসানে চলতে চলতে ট্রাম চালানো থেকে হাত কার্যত গুটিয়ে নিয়েছে সরকার। আর তাদের লোকসান কমাবার জন্য অভিনব পরিকল্পনা করেছিলেন আমলারা। ট্রাম কোম্পানিও বাস চালাবে। বাস চালাবার জন্য সরকারি আলাদা সংস্থা আছে। তাহলে ট্রাম কোম্পানি ট্রামকে ঠিকভাবে না চালিয়ে বাস চালাবে কেন?
ট্রামকর্মীরা
কয়েক বছর আগেও ট্রাম কোম্পানিতে সাত হাডার তিনশ কর্মী কাজ করতেন। সেটা কমতে কমতে এখন আছে দুই হাজার তিনশ জন। ৭৮ শতাংশ কর্মী বাস চালানোর সঙ্গে যুক্ত। বহু কর্মী প্রতিদিন ট্রাম ডিপোয় সকালে আসেন, সন্ধ্যাবেলা চলে যান। তাদের কোনো কাজই নেই।
অস্ট্রেলিয়ার ট্রাম কনডাক্টর
রবার্তো ডি অ্যান্ড্রো। মেলবোর্নে ট্রাম চালান। ১৫০ বছরের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতা এসেছিলেন। তিনি জানালেন, মেলবোর্নে ট্রামের পিছনে অনেক অর্থব্যয় করা হয়েছে। কলকাতায় পুরো পরিকাঠামো আছে। কলকাতার ট্রামকে বাঁচানো যায়। তার জন্য অর্থ ঢালতে হবে।
জার্মানির ব্যাংকার
জার্মানির ব্যাংকার লারস রিখটারও এসেছিলেন দেড়শ বছরের অনুষ্ঠানে। তার ভয় ছিল, কলকাতায় ট্রাম বন্ধ হয়ে যায়নি তো। ২০১১ সালেও তিনি এসেছিলেন। ১২ বছর পর এসে একটাই কামনা করেছেন, ট্রাম যেন বন্ধ না হয়।
অ্যাসোসিয়েশনের দাবি
দেবাশিস ভট্টাচার্য হলেন কলকাতা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তার দাবি, ট্রামকে বাঁচাতেই হবে। এর দায় প্রশাসনের।
ট্রামচালক যা বললেন
গোপাল রামরা চারপুরুষ ধরে ট্রাম কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। তিনি ট্রাম চালান। তার বক্তব্য, ১০ বছর ধরে কোনো নিয়োগ নেই। কর্মী নেই। ট্রাম ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে।
বিপুল অর্থ
কলকাতার ট্রামকে বাঁচাতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ দরকার। আধুনিক সমীক্ষা বলছে, অত্যাধুনিক ট্রাম লাইন বসাতে গেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে কোটি কোটি টাকা। কলকাতার ট্রামকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনার তাগিদ কারোর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ থেকে ট্রামকর্মীরা। ফলে একদিন এভাবেই হয়ত তার পথচলা শেষ হয়ে যাবে। যদি না, সরকার কোনো বিশেষ পরিকল্পনা নেয়। তার কোনো ইঙ্গিত এখনো নেই।